শাহীন মাহমুদ রাসেল

পৌরবাসীর অসচেতনতা এবং পৌরসভার জনবল, যন্ত্রপাতি ও গাড়ি সংকটের কারণে পর্যটন শহর কক্সবাজার দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

পৌরসভার প্রধান সড়ক, ওয়ার্ড ও মহল্লার অলিগলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। নালা-নর্দমা ময়লায় পরিপূর্ণ হয়ে দূষিত পানি প্রবাহিত হচ্ছে সড়কের উপর দিয়ে। শহরের প্রধান সড়কের কয়েকটি স্থানে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে রয়েছে। ফলে পথচারীদের নাকে রুমাল চেপে চলাফেরা করতে হচ্ছে। এর প্রভাবে নানা ধরনের অসুখে ভুগছে শহরের অনেকেই।

পৌরসভা সূত্র জানায়, শহরের ১২টি ওয়ার্ডের ১৫টি জোনে প্রতিদিন ৬০ ট্রাক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এসব ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য ১৩৭ জন নারী ঝাড়ুদার ও ১৫৭ জন পুরুষ পরিচ্ছন্নকর্মী রয়েছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার পৌরসভার কনজারভেটিভ সুপার ভাইজার দিলীপ রুদ্র বলেন, নারী কর্মীদের বেতন ১ হাজার ৮০০ টাকা, ঠেলাগাড়ি চালানো ও নর্দমা পরিষ্কারে জড়িত পরিচ্ছন্নকর্মীদের সাড়ে ৫ হাজার এবং অন্যান্য পরিচ্ছন্নকর্মীদের সাড়ে ৬ হাজার টাকা করে বেতন। কিন্তু সেই টাকা পৌরসভা ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারে না। এ কারণে বেশিরভাগ সময়ই অধিকাংশ পরিচ্ছন্নকর্মী কাজে আসে না। সঠিক সময়ে বেতন দিতে পারি না বলে আমরা তাদের জোর করতে পারি না।

কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, বর্জ্য অপসারণের জন্য ৩০টি ট্রলি থাকলেও ১০টি বিকল। ৮টি ট্রাকের ৭টি বিকল। ঠেলাগাড়ি রয়েছে ২৭টি। দরকার আরও ১৫টি।

কক্সবাজার পৌরসভার কানজারভেটিভ সুপার ভাইজার কবির আহমদ বলেন, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল। এছাড়া শহর থেকে অনেক দূরে ডাম্পিং স্টেশন। সে কারণে প্রথমে অলিগলির ময়লা-আবর্জনা ট্রান্সফার স্টেশনে রাখা হয়। তাও দখল হয়ে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে প্রধান সড়কের পাশেই ময়লার স্তূপ জমানো হয়। পরে সরিয়ে নেওয়া হয়।

সরেজমিনে পৌরসভা ঘুরে দেখা যায়, শহরের ব্যস্ততম এলাকা বাজারঘাটা, বার্মিজ মার্কেট, নাপিতের পুকুরপাড়, লালদিঘীরপাড়, গোলদিঘীরপাড়, হাসপাতাল সড়ক, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সড়ক, বাহারছড়া, নতুন বাহারছড়া, কলাতলী রোডসহ পৌরসভার সব রাস্তা ও নর্দমা ময়লা-আর্বজনায় ভরপুর হয়ে রয়েছে। এতে আশপাশে তীব্র দুর্গন্ধে পথচারীদের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পৌরসভার ফুলবাগ এলাকার বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, ফুলবাগ সড়ক ও বার্মিজ স্কুল রোডে নালায় ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে। সড়ক ও অলিগলিতে আবর্জনার স্তূপ জমা রয়েছে। কিন্তু পরিচ্ছন্নকর্মীদের দেখা মিলছে না।

বাজারঘাটার নিউমার্কেটের সোহা কালেকশনের মালিক সাইমন আমিন বলেন, মার্কেট ঘেষে প্রধান সড়কের পাশে ৪/৫ দিন ধরে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা-আবর্জনা পড়ে রয়েছে। কিন্তু ‌দেখার কেউ নেই।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কক্সবাজার স্টেশন ইনচার্জ শেফায়েত হোসেন বলেন, ফায়ার স্টেশনের ফটক ঘেষেই সপ্তাহের পর সপ্তাহ আবর্জনা পড়ে থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়।

কক্সবাজারের পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ সেন বাঞ্চু বলেন, গৃহস্থালি বর্জ্যের পাশাপাশি হাসপাতাল বর্জ্যও যততত্র ফেলা হচ্ছে। এগুলোর মাধ্যমে ডায়রিয়া, কলেরা, হেপাটাইটিস ‘বি’, হেপাটাইটিস ‘সি’, যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়ার মতো রোগ ছড়াচ্ছে।

কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, দায়িত্ব গ্রহণ করেছি এক বছর হলো। দায়িত্বভার গ্রহণের পরপরই পৌরসভাকে বর্জ্য অপসারণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। তবে পৌরসভার তো কিছুই ছিল না। ট্রাক বিকল, জনবলের অনুপস্থিতিসহ নানা সমস্যা রয়েছে। এসব সমাধানের জন্য নিজের পকেট থেকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে ৪টি ট্রাক মেরামতের জন্য চট্টগ্রাম পাঠিয়েছি। সেখান থেকে ঘণ্টায় ১ হাজার ৮০০ টাকায় ভাড়ায় এস্কভেল্টর এনেছি। এছাড়া প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে একজন কাউন্সিলরকে চট্টগ্রামকে পাঠিয়েছে। তাছাড়া ২টি ট্রাক ভাড়া নিয়েছি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বর্জ্য অপসারণের সমস্ত মালামাল চলে আসবে। এরপর শুরু হবে পরিচ্ছন্ন অভিযান। একমাসের মধ্যে শহরকে পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে গড়ে তোলা হবে।