শাহেদ মিজান, সিবিএন:
অনেক দিন ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেও শেষ রক্ষা হলো না দেশের নাম্বার ওয়ান ইয়াবা ডন সাইফুল করিমের। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে টেকনাফ স্থল বন্দরের সীমানা প্রাচীরের শেষ প্রান্তে নাফ নদীর পাড়ে পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিনি মারা গেছেন! এক নাম্বার ইয়াবা হিসেবে এই অবৈধ ব্যবসা করে অন্তত হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছিলেন তিনি। এতো বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বেকায়দায় ছিলেন সাইফুল করিম। এত টাকা আঁড়ালের রাখতে নানা কৌশল অবলম্বন করতেন তিনি। বিদেশে পাচার, নানা সম্পদ ক্রয়সহ বিভিন্নভাবে টাকাগুলো চোখের আঁড়ালের রাখতেন। তারপরও এত পরিমাণ টাকা গোপন করা যেতো না। তাই স্বজন ও তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের নামে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে একাউন্ট খুলে টাকা রাখতেন।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানেও দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে স্বজন ও তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের নামে খোলা একাউন্টে কোটি কোটি টাকা রয়েছে। বিশেষ করে নিকতাত্মীয় ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘এস কে জি’ বেশ কয়েকজন কর্মচারীদের নামে খোলা একাউন্টটে কোটি কোটি টাকা রয়েছে। এমনকি চট্টগ্রামের তার ভাইদের মালিকানাধীন ‘বিণয় ফ্যাশনের’ কর্মচারীদের নামে খোলা একাউন্টেও বিপুল পরিমাণ টাকা রয়েছে।

চট্টগ্রামের সাইফুল করিমের এক পরিচিত ব্যক্তি জানান, এত বিপুল টাকা সামলানো নিয়ে বেশ বেকায়দায় থাকতে হতো সাইফুল করিমকে। টাকাগুলো অগোচরে রাখতে তিনি নানা উপায় অবলম্বন করতেন। বিশেষ করে সম্পদ কিনে বেশি টাকা অগোচরে রাখতেন। এই জন্য চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বেশ কয়েকটি ভবন ও ফ্ল্যাট কিনেছেন। একইভাবে গার্মেন্টস, আমদানী ব্যবসায়ও বিপুল বিনিয়োগ করে রেখেছেন। বিদেশেও বিপুল অর্থ পাচার করে মালয়েশিয়া, মায়নমারে ব্যবসা ও সম্পদ ক্রয় করেছেন। সম্প্রতি এক সাথে আটটি জাহাজ কিনেছেন বলে এই ব্যক্তি জানান। তারপরও বিপুল টাকা থেকে যেতো। এসব টাকা স্বজন ও তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের নামে একাউন্ট খুলে ব্যাংকে রেখে দিয়েছেন।

এই ব্যক্তি দাবি করেন, অন্তত ৫০ জন বিশ^স্ত স্বজন ও কর্র্মচারীর নামে একাউন্ট খুলে সেখানে কোটি কোটি টাকা জমা রেখেছেন সাইফুল করিম। একজনের একাউন্টে পাঁচ থেকে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত থাকতে পারে। বিনয় ফ্যাশনের কয়েকজন বিশ^স্ত কর্মচারীর নামে একাউন্টেও বিপুল টাকা রয়েছে। বিষয়টি অধিকতর অনুসন্ধান করলে বেরিয়ে আসবে।

অন্যদিকে বছর দু’য়েক আগে শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীরা বিপুল বিদেশে পাচারের সন্ধান পায় সিআইডির অনুসন্ধানি দল। এর মধ্যে বরাবরই শীর্ষে রয়েছিল সাইফুল করিম। সরকারের পক্ষ থেকে বার বার বলা হয়ে আসছে ইয়াবা কারবারীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে। এই নিয়ে অনুসন্ধানসহ নানা প্রক্রিয়া চলছে বলে আইন-শৃঙ্খবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়ে আসছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ইয়াবা ব্যবসায়ীর সম্পদ বাজেয়াপ্ত হয়নি।

তবে সম্প্রতি কক্সবাজারের পুলিশ সুপার জানিয়েছিলেন, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েছে।