অধ্যাপক আকতার চৌধুরী

(১ম পর্ব)

উখিয়ার গ্রামের বাজার রুমখাঁ । প্রতি সপ্তাহে বাজার বসত ২দিন। সোম ও বৃহস্পতিবার । এখন অবশ্য রুমখা বাজার বসে কিনা সন্দেহ । পাশের কোটবাজারের মত সদ্য গজে উঠা শহুরে বাজারের দাপটের কারণে এই বাজারটির অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে ।
ছোট বেলায় বাজার বার হলে আমারও আনন্দের শেষ থাকত না । বাজারে গেলে আমার দাদা আড়াই টাকা দিত। এই আড়াই টাকার মধ্যে জহির দাদার দোকানের চিনি দিয়ে পরটা খেতাম, চকলেট খেলনা কিনতাম। ডুগডুগির আওয়াজে ছুটে যেতাম একটা টিনের বাক্সের কাছে ।
আহার দেখ , বাহার দেখ – মক্কা মদিনা দেখ। এ আওয়াজে আমার দু’টি নয়ন একটা টিনের বাক্সে ডুবে যেত। বায়োস্কোপ ওয়ালা দরদী কন্ঠে বর্ণনা করে যেত কোন জায়গাটা কী। ছবি দেখার পর একটা অদ্ভুদ অনুভূতি মনে জাগত। স্বপ্নের সেই ঘর দেখতে কেমন একটা ভীষণ রকমের কল্পনার জগতে বসবাস করতাম ।
সেই কল্পনার ঘরে গত ২৩ মে ২০১৯ ইং আগমন। স্বস্ত্রীক ওমরাহ পালনের জন্যে বাংলাদেশ বিমানে এখানকার সৌদি টাইম রাত প্রায় ১২টায় (বাংলাদেশ টাইম-রাত ৩টা) পবিত্র ভূমির মাটি স্পর্শ করেছি। শরীরে প্রচন্ড এক অনুভূতি শিহরণ জাগাতে শুরু করে। পবিত্র মাটি , পবিত্র আবহাওয়া, পবিত্র পরিবেশ- অন্তত আমার মত একজন নগন্য পাপী বান্দার জন্য। যেখানে আমার আল্লাহর ঘর আছে, রাসুল (স:) রওজা মোবারক আছে। যেখানে আমার ইসলামের ইতিহাসের বিশাল ভান্ডার সংরক্ষিত আছে।

ইতোপূর্বে আমাদের ডোমেস্টিক বিমানের ফ্লাইট সিডিউল একটু পরিবর্তন হয় । ২৩ মে বিকেল ৩.৪৫ এর কক্সবাজার-ঢাকা ফ্লাইট পরিবর্তন হয়ে সকাল ৯.৪৫ এ চলে আসে । ফলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার বিমানের জেদ্দা ফ্লাইট ধরার জন্য অনেক আগে বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকা পৌছে যাই। এত দীর্ঘ সময় বিমান বন্দরে বসে থাকা সমীচিন হবে না মনে করে সহযাত্রী কক্সবাজার বিজিবি ক্যাম্প এলাকার কামরুল মামা ও নাছির ভাই দু’জনের সাথে বিমান বন্দরে হজ্ব ক্যাম্পের পাশে হোটেল হলিডে এক্সপ্রেসে রুম নিই । বাড়ি থেকে চিন্তা করেছিলাম ইহরামটা বিমানে পড়ব। তবে ‘ কামরুল মামা ও নাছির ভাই এর পরামর্শে হোটেলেই ইহরামের কাপড় পড়ে ২ রাকাত নফল নামাজ পড়ে ওমরাহের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করলাম।
কিন্তু বিপদে পড়লাম ২ টুকরা সেলাই বিহীন সাদা কাপড় পড়া নিয়ে । আমার বার বার মনে হচ্ছিল কাপড়টা খুলে পড়বে। লুঙ্গি পড়ে অভ্যাস আছে । সেলাই বিহীন লুঙ্গি কিভাবে সামলাই ! সহযাত্রী নাছির ভাই বললেন – এটা কোন ব্যাপার না । উনি বিশেষ কায়দায় নিচের অংশটা পড়িয়ে দিলেন । এর উপরে একটা বিশেষ বেল্ট পড়ে নিলাম। এ সমস্ত সফরে অভিজ্ঞ সহযাত্রী পেলে যা উপকার হয় এদের দু’জনের কাছ থেকে পেলাম।
নাছির ভাই বললেন – বুঝতে পারছ , তোমাকে কী পড়িয়ে দিলাম!
আমি বললাম-কেন ইহরামের কাপড়।
উনি বললেন – না , এটা শুধূ ইহরামের কাপড় নয় , কাফনের কাপড়ও। তোমাকে মনে করতে হবে , পৃথিবী থেকে চির বিদায়ের সময় মানুষকে যেমন সাদা কাফনে পড়িয়ে বিদায় দেয় , তেমনি দুনিয়ার সমস্ত কিছু ত্যাগ করে পাপ থেকে মুক্তি লাভের জন্য আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পন করলে।

কথাটায় আমাকে একটা চরম ঝাকুনি দেয়। আসল ব্যাপরটা যাই হোক , সাদা রং আমাদের মনের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে।

আসুন দেখে নিই ইহরাম সম্পর্কে জ্ঞানীরা কী বলেছেন-

ইহরাম শব্দটি এসেছে হারাম শব্দ থেকে । যার অর্থ হলো কোনো জিনিসকে নিজের ওপর হারাম বা নিষিদ্ধ করে নেয়া। আর এ ইহরামই হজ ও ওমরার প্রথম ফরজ কাজ। পুরুষদের জন্য সেলাইবিহীন দুই টুকরো সাদা কাপড় আর নারীদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যময় শালীন পোশাক পরিধান করাই হলো ইহরাম।

এ কারণেই হজ ও ওমরা পালনকারী ব্যক্তি ইহরামের মাধ্যমে নিজের ওপর স্ত্রী সহবাস, মাথার চুল, হাতের নখ, গোঁফ, বগল ও নাভির নিচের ক্ষৌর কার্যাদি, সুগন্ধি ব্যবহার, সেলাই করা পোশাক পরিধান এবং শিকার করাসহ কিছু বিষয়কে হারাম করে নেয়।

চলবে….

একটি সাদা কাফনের সফর নামা – (২য় পর্ব)

একটি সাদা কাফনের সফর নামা – (৩য় পর্ব)

একটি সাদা কাফনের সফর নামা – (৪র্থ পর্ব)

একটি সাদা কাফনের সফর নামা – (৫ম পর্ব)

একটি সাদা কাফনের সফর নামা – (৬ষ্ঠ পর্ব)

একটি সাদা কাফনের সফর নামা – (৭ম পর্ব)

একটি সাদা কাফনের সফর নামা – (৮ম পর্ব)