নিজস্ব প্রতিবেদক :
গত বর্ষা মৌসুমের মতো আসন্ন বর্ষায়ও ভয়াবহ বন্যার আতঙ্কে ভুগছে মহেশখালী উপজেলার হরিয়ারছড়া এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। অরক্ষিত হরিয়াছড়া ছড়ার কারণে এই আতঙ্ক বিরাজ করছে। একই কারণে ওই এলাকায় অবস্থিত ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিও চরম ঝুঁকির মুখে রয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, কালাগাজিরপাড়া নুরিয়া মোজাহেরুল উলুম মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির লোকজন ছড়া দখল করে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ দেয়ায় গত বছর ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছিল হরিয়ারছড়া। সেভাবে আসন্ন বর্ষা মৌসুমেও হরিয়ারছড়া বন্যায় আক্রান্ত হতে।

হরিয়ারছড়া বাজারের ব্যবসায়ী নূরুল আবছার জানান, কালাগাজির পাড়ার নূরিয়া মোজাহেরুল উলুম মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ ওই স্থানে ছড়াটা অধিকাংশ দখল করে নিয়েছে! যার কারণে ছড়ার পথ সংকুচিত হয়ে ঢলের পানি উঠে পড়ে হরিয়ারছড়ার দিকে। পাহাড়ী তীব্র ঢল কালাগাজির পাড়ার নূরিয়া মোজাহেরুল উলুম মাদ্রাসার উত্তরে অবস্থিত (ছড়ার উত্তর পাড়ে) ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র উপচে ঢুকে হরিয়ারছড়া বাজার হয়ে পাড়ার ভেতর। এভাবে তীব্র পাহাড়ে ঢলের পানি ঢুকে গত বর্ষা মৌসুমে হরিয়ারছড়া বাজার ও ওই এলাকার সব বসতবাড়িতে পানিতে তলিয়ে যায়। একই সাথে এই ঢলের পানিতে বিপুল পানবরজ তলিয়ে গিয়ে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

গত বর্ষায় বন্যায় ক্ষতির একটি চিত্র।

স্থানীয় বাসিন্দা মাস্টার এহছান উদ্দীন মামুন জানান, প্রতি বছর বছর কালাগাজির পাড়ার নূরিয়া মোজাহেরুল উলুম মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ক্রমান্বয়ে ছড়াটি দখল করে নিচ্ছে। তারা বর্ষা আসলেই মাদ্রাসার উত্তর পাশের বাঁধের পাশের ছড়ায় বাঁশ ও বস্তা ফেলে দেয়। এতে ছড়াটি ওই স্থানে সংকুচিত হতে হতে ছড়া মূল অংশ মাদ্রাসার সীমানায় ঢুকে গেছে। এতে ছড়ার ওই স্থানে বাঁকা হয়ে মূল পথে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পানি ঢুকে পড়ে হরিয়ারছড়ার লোকালয়ে। লোকালয়ে ঢুকার আগে পানিতে ডুবে যায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এই বিষয়ে বলা হলে বাড়তি বাঁধ ও ফেলে রাখা বাঁশঝাড় বার বার সরানো কথা বলে মাদ্রামার মুহতামিম। কিন্তু আর সরায় না।

তিনি আরো জানান, মাদ্রাসার অপরিকল্পিত বাঁধের কারণে ভেঙে ভেঙে ছড়াটি এখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জায়গা চলে এসেছে। এর বড় সমস্যা ছড়াটি বাঁক পরিবর্তন হওয়ায় ঢল নামলেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র বরাবর পানি ঢুকে পশ্চিম হরিয়ারছড়া বাজার ও বাড়ি ঘর তলিয়ে যায়। ফলে পুরো বর্ষাকাল জুড়েই পানিতে ডুবে থাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বার বার অবহিত করার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

হরিয়ারছড়া বাসিন্দা মোহাম্মদ রাসেল জানান, ছড়া বাঁক পরিবর্তন হওয়ায় ঢল নামলেই পানি ছড়ার মূল পথ উপচে হরিয়ারছড়ার লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চল আসলেও গত কয়েক বছর ধরে তীব্রভাবে আঘাত করছে। গত মৌসুমে কয়েকবার ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে হরিয়ারছড়া। এতে বসতবাড়ি ও পানবরজের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ছৈয়দ মিয়া বলেন, ‘ছড়াটি দখল করতে গিয়ে ব্রীজের একপাশ পর্যন্ত ভরে ফেলেছে। এতে স্বাভাবিক সময়েও পানি চলাচল করতে পারছে না। বৃষ্টি নামলেই পাহাড়ি ঢলের পানি অনায়সে হরিয়ারছড়ায় ঢুকে পড়বে। বিষয়টি আমি চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এমপি সাহেবকে জানিয়েছি।’

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে কালাগাজির পাড়ার নূরিয়া মোজাহেরুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা শহীদুল্লাহ বলেন, ‘মানুষের ক্ষতি করে মাদ্রাসা রক্ষা করাও ভালো কাজ নয়। মাদ্রাসা বাঁচানো যেমন ভালো কাজ, তেমনি মানুষ রক্ষা করাও ভালো কাজ। কিন্তু হরিয়ারছড়ার মানুষ যে দাবি করছে তা সত্য নয়। তারা যদি মনে করে মাদ্রাসা ছড়া দখল করেছে, তাহলে তারা আমিন এনে পরিমাপ করে তা বের করে নিক। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’

এ ব্যাপারে হোয়ানক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বিষয়টি হরিয়ারছড়ার লোকজন আমাকে জানিয়েছেন। এটি সমাধানের জন্য আমি আজকালের মধ্যে বসবো।’

এত ক্ষতি কিভাবে সইবে মহেশখালীর পানচাষীরা?