শাহীন মাহমুদ রাসেল:
ঈদের আগে বিদেশ থেকে স্বজনের কাছে টাকা পাঠাচ্ছে প্রবাসীরা। প্রবাসি স্বজনদের পাঠানো টাকা তুলতে ব্যাংকে ভিড় জমাচ্ছে পরিবারের সদস্যরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে জেলার প্রায় ৮০ হাজার প্রবাসী সরকারি ও প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে অন্তত ৫ শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছে এই ঈদ মৌসুমে। এই টাকায় ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে বিকিকিনিতে ব্যস্ত এখন প্রবাসীদের পরিজন ও ব্যাবসায়িরা। বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা গ্রাহকদের হাতে বুঝিয়ে দিতে গলদঘর্ম হচ্ছে ব্যাংক কর্মকর্তারা।

বিভিন্ন ব্যাংকে গ্রাহকদের সুশৃঙ্খল দেখা গেলেও ইসলামী ব্যাংকে ঢুকতে-বের হতে কোন নিয়ম শৃঙ্খলা নেই। গ্রাহকদের সেবাও আগের মতো নেই বলে অভিযোগ ওঠেছে। কক্সবাজার শহরের বাজারঘাটায় স্থাপিত ব্যাংকটির শাখায় নিয়ম শৃঙ্খলা বলতে নেই। অনেকটা অবহেলার শিকার গ্রাহকরা।

স্থানীয় সুত্র জানায়, জীবিকার প্রয়োজনে প্রবাসে কাটাচ্ছে কক্সবাজারের হাজার হাজার লোক। শুধু সদর উপজেলারই প্রায় ২৫ হাজার লোক সৌদিতে কর্মরত রয়েছে। সৌদি প্রবাসীদের কেন্দ্র করে সৌদি পল্লী নামে একটি এলাকাই গড়ে উঠেছে সদরে।শুধু সৌদি নয়, মধ্যপ্রাচ্য, এমনি ভাবে গোটা ইউরোপ মহাদেশসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিন আফ্রিকা, মালেশিয়া, লিবিয়া, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ সহ পৃথীর বিভিন্ন দেশে অন্তত ৮০ হাজারেরও বেশি নারী-পুরুষ কর্মরত রয়েছে। তারা নিয়মিত বিদেশ থেকে কষ্টার্জিত টাকা পাঠায় পরিবারের কাছে। রমজান মাস এলেই এ টাকার অংক বেড়ে যায় কয়েক গুণ।

স্থানীয় ব্যংক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি ব্যাংক ছাড়াও কক্সবাজারে প্রাইভেট ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক, মার্কেনটাইল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ইউসিসি ব্যাংক, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক এর মাধ্যমে প্রতিমাসে নিয়মিতভাবে এই জেলায় প্রবাসীদের পাঠানো প্রায় ১শ কোটি টাকা রেমিটেন্স জমা হয়। রমজান মাসে এর পরিমাণ প্রায় তিনগুণে দাঁড়ায়।

ইসলামী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলায় ইসলামী ব্যাংকের ৮টি শাখার মাধ্যমে কার্যক্রম চলে। রমজান মাসে এর পরিমান দাড়ায় ৩শ কোটি টাকায়। সব মিলে জেলায় শুধু রোজার মাসে অতিরিক্ত ৫শ কোটি টাকা পাঠায় প্রবাসীরা। তাদের নিজস্ব ব্যাংক হিসাব নম্বরের বাইরেও ওয়েস্টার্ণ ইউনিয়ন, এনবিএল কুইক পে, মানিগ্রাম, ন্যাশনাল এক্সেঞ্জ, প্লাসিট এক্সপ্রেস, এক্সপ্রেস মানি, আলরাজি এক্সেঞ্জ, আল আহ্লিয়া এক্সেঞ্জ, ইউএই এক্সেঞ্জসহ প্রায় ৪২ টি মানি এক্সেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছেন। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে শুধু ঈদের আনন্দই পূর্নতা পায় না, আর্থ-সামাজিকভাবেও গোটা জেলায় পরিবর্তন এসেছে চোখে পড়ার মতো। সদর উপজেলায় অনেক পরিবারের একাধিক সদস্য সৌদি প্রবাসী। ব্যাংকগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে প্রবাস থেকে স্বজনদের পাঠানো রেমিটেন্সের টাকা তুলতে পরিবারের সদস্যদের উপচে পরা ভীড়। বিশেষ করে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। বিদেশ থেকে পরিবারের সদস্য সব সময়ই টাকা পাঠায়, কিন্তু রোজার মাসে কয়েকগুন বেশি টাকা পাঠায়। এই টাকায় ঈদ কেনা কাটা করছেন।

সদর উপজেলার পিএমখালী ডিকপাড়া গ্রামের মাহমুদা ইয়াসমিন দিপা বলেন, আমার স্বামী সৌদি প্রবাসী। আমাদের পরিবারের সকলের ঈদের কেনাকাটার জন্য টাকা পাঠিয়েছে তা ব্যাংক থেকে তুলে নিতে এসেছি। এই টাকা দিয়ে সকলের জন্য ঈদের কেনা কাটা করবো।

পরানিয়া পাড়া গ্রামের আব্দুল মান্নান বলেন, ঈদের জন্য একটু বেশী খরচ হয়। সবার জন্য ঈদের কাপর কিনতে হয়। তাই প্রবাস থেকে সবাই একটু বেশি টাকা পাঠায়।

কক্সবাজার শহরের জুয়েলারী ব্যবসায়ী হাজি ওসমান গণি বলেন, ঈদের বাজারে পোশাকের দোকানের পাশাপাশি অলংকারও বেচাকেনা বাড়ে। এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছে। তাই পরিবারের সদস্যদের জন্য ঈদ উপলক্ষে একটু বেশি টাকা পাঠায় তারা। জোয়ারিয়ানালা স্কুলগেইট গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক একরাম আলী মাষ্টার জানান, তাদের বাড়ির ১৪ জন ব্যাক্তি শুধু সৌদিতেই থাকেন। এর মধ্যে কেউ ১৮ বছর আবার ২ বছর থেকে সেদেশে কর্মরত রয়েছেন। প্রবাসীরা ঈদ মৌসুমে বাড়ি আসেনা। তারা দুই ঈদে কয়েক লক্ষ টাকা পাঠায়। তা দিয়ে আমরা বাড়িতে সবাই মিলে ঈদ করি।

ন্যাশনাল ব্যাংক কক্সবাজার শাখার ব্যাবস্থাপক ফেরদৌসুল মুজাহিদ খান বলেন, বিদেশ থেকে ঈদের সময় ব্যাংকগুলোতে ২-৩ গুণ বেশি টাকা আসে। গ্রাহকদের টাকা বুঝিয়ে দিতে আমাদের অনেক ব্যাস্ত সময় পার করতে হচ্ছে।