এ কে এম ইকবাল ফারুক, চকরিয়া:

বারবার জোড়াতালির মেরামতেও দীর্ঘ সময় সচল রাখা যাচ্ছেনা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতুটি। ঝুকিঁপূর্ণ সেতুটি ধ্বসে যাওয়ার পর আট ঘন্টা সেতু দিয়ে যানচলাচল বন্ধ রেখে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেতুর উপরের একপাশে স্টিলের পাটাতন ও গার্ডার দিতে অনেকটা বেইলি সেতুর আদলে মেরামত কাজ করে। এরপর সেতুর উপর দিয়ে একলেনে যানবাহন চলাচল সচল করা হলেও সেতুটি পার হতে লেগে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ফলে সেতুর দু’দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে সীমাহীন দূর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে পথচারীসহ সাধারণ জনসাধারণকে। এঅবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী ঈদ মৌসূমে ঘরমুখো মানুষদের বিড়ম্বনা বাড়াতে পারে এই মাতামুহুরী সেতু। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দাবী সেতুর মেরামত কাজ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শেষ হবে। এরপর দুইলেনে যানচলাচল শুরু হলে আর জনদূর্ভোগে পড়তে হবেনা সাধান মানুষদের।

জানাযায়, প্রায় ৬০ বছর বয়সী মাতামুহুরী সেতুটি বেশ কয়েক বছর পূর্র্বে সেতুর নীচ অংশে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিলে যাবাহন চলাচলে ঝঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে প্রায় ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুর মেরামত কাজ করে সেতুটি ধ্বসে হাত থেকে রক্ষা করা হলেও সেতুর উপর অংশে বড় ধরণের গর্তের সৃষ্টি হয়। এরপর কতৃপক্ষ জোড়াতালি দিয়ে মেরামতের পর যানবাহন চলাচল সচল করার চেষ্টা করলেও সেটি আর বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। ওই সময় সেতুর উপর দিয়ে সেতুর উপর দিয়ে ১০ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে কতৃপক্ষ সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিলেও কিছু প্রভাবশালী মহল সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালু ও সিমেন্ট ভর্তি ৩০-৪০ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচল করায় সেতুটি আবারও দেবে যায়। অবশেষে স্থায়ী মেরামতের জন্য গত ২২ মে রাত ১১টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত সেতুর উপর দিয়ে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় বিকল্প পথ হিসেবে চকরিয়া থানা রাস্তার মাথা-ঈদমনি লালব্রীজ ও পেকুয়া চৌমহনী হয়ে বরইতলী একতা বাজার সড়ক দিয়ে চলাচল করে দূরপাল্লাসহ সকল আভ্যন্তরীণ সড়কের যানবাহন। আবার কোন কোন যানবাহন পেকুয়া চৌমহনী হয়ে বাঁশখালী সড়ক দিয়েও চলাচল করে। ওই সময় কতৃপক্ষ হঠাৎ করে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় ঈদকে সামনে রেখে চকরিয়া পৌরশহরের কেনাকাটা করতে আসা শতশত লোকজনকে চরম ভোগান্তি পড়তে হয়। অনেককে নিরুপায় হয়ে পায়ে হেঁটে ফিরতে হয়েছে বাড়ি বা নিজ গন্তব্যে।

পরবর্তীতে দেবে যাওয়া সেতুর উপরের একপাশে স্টিলের পাটাতন ও গার্ডার দিতে অনেকটা বেইলী সেতুর আদলে মেরামত কাজ করে সেতুর উপর দিয়ে এক লেনের যানবাহন চলাচল সচল করা হয়। একলেনে যানবাহন চলাচল করার কারণে সেতুটি পার হতে সময় লেগে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ফলে সেতুর দু’দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে অবর্নণীয় দূর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ জনসাধারণকে।

তবে স্থানীয়দের আশংকা সেতুর উভয় পার্শ্বে লোহার পাটাতন বসিয়ে বেইলী সেতু আকারে সেতুটি পুনরায় দুই লেনের যানবাহন চলাচলের জন্য সচল করা হলেও আবারো যদি বালি ও সিমেন্ট বোঝাই ভারী যানবাহন চলাচল করে তাহলে পুনরায় সেতুটি ধ্বসে গিয়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাতামুহুরী সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় ছয়লেনের দ্বিতীয় মাতামুহুরী সেতুর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় সরকারীভাবে। জাইকার অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের চকরিয়া অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আবু এহেছান বলেন, চকরিয়া মাতামুহুরী সেতুর বিষয়টি এখন সড়ক ও জনপথ বিভাগের আলাদা প্রজেক্ট ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইনপ্রোভমেন্ট প্রজেক্টেটের অধীনে চলে গেছে। সুতরাং সেতুটি অচল হলেও সচল করার ব্যাপারে এখন আর আমাদের কিছুই করার নাই। সড়ক ও জনপথ বিভাগের যে প্রকল্পের অধীনে এ সেতুর কাজ চলছে এখন সব দায়-দায়িত্ব তাদের উপর।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইনপ্রোভমেন্ট প্রজেক্টেটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. কোরাইশী বলেন, মাতামুহুরী সেতুটি দীর্ঘদিনে পুরানো সেতু। এর বয়স আনুমানিক ৬০-৭০ বছর হবে। সেতুর উপর দিয়ে ১০ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে কতৃপক্ষ সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিলেও কিছু প্রভাবশালী মহল সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালু ও সিমেন্ট ভর্তি ৩০-৪০ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচল করায় সেতুটি আবারও দেবে যায়। ফলে মাঝে মধ্যে সেতুর সংস্কার কাজের জন্য যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। বর্তমানে সেতুর একপাশ মেরামত করে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ফলে যানবাহন চলাচলে সাময়িক কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। সেতুর অপর অংশ মেরামত হয়ে গেলে এ সমস্যা কেটে যাবে বলেও জানান তিনি।