সিবিএন ডেস্ক:
টেমস থেকে শুরু করে টাইগ্রিস পর্যন্ত বিশ্বের শতাধিক নদী দিয়ে বিপজ্জনকভাবে প্রবাহিত হচ্ছে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়েটিক। এ ক্ষেত্রে বিশ্বে সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এ সংক্রান্ত সবচেয়ে বড় গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

অ্যান্টিবায়েটিক দূষণ হচ্ছে অন্যতম প্রধান মাধ্যম যার মাধ্যমে ব্যাক্টেরিয়া জীবনরক্ষাকারী ওষুধগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মানবদেহে এই ওষুধগুলোকে অকার্যকর করে ফেলে অ্যান্টিবায়েটিক প্রতিরোধকারী এসব ব্যাক্টেরিয়া।

ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে এক সম্মেলনে সোমবার উপস্থাপিত প্রতিবেদনে গবেষকরা জানিয়েছেন, মানব ও প্রাণীর বর্জ্য এবং দূষিত পানি পরিশোধনাগার ও ওষুধ উৎপাদন কারখানা থেকে মাটি ও পানির মধ্যে মিশে যাচ্ছে অ্যান্টিবায়েটিক।

গবেষকরা ৭২টি দেশের ৭১১টি নদী এলাকা পরীক্ষা করেছেন। এগুলোর ৬৫ শতাংশের মধ্যেই অ্যান্টিবায়েটিক পাওয়া গেছে। ১১১টি এলাকায় অ্যান্টিবায়েটিকের মিশ্রন নিরাপদ মাত্রাকেও অতিক্রম করেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি যেখানে সেখানে নিরাপদ মাত্রার চেয়ে ৩০০ গুণ বেশি অ্যান্টিবায়েটিকের মিশ্রণ দেখা গেছে।

নিম্ম আয়ের দেশগুলোর নদীগুলোতে অ্যান্টিবায়েটিকের মিশ্রণ সবচেয়ে বেশি। আফ্রিকা ও এশিয়ার এই দেশগুলোর পরিস্থিতি খুবই বাজে। এসব দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এখানে যোনি সংক্রমণ চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়েটিক মেট্রোনাইডাজল পাওয়া গেছে নিরাপদ মাত্রার চেয়ে ৩০০ গুণ বেশি। অবশিষ্টগুলো পাওয়া গেছে বর্জ্য জল শোধণাগারের কাছাকাছি এলাকায়।

নর্দমার ময়লা ও আবর্জনা সরাসরি নদীতে ফেলা হয় কেনিয়াতে। এ কারণে এখানকার নদীতে অ্যান্টিবায়েটিকের মিশ্রণ নিরাপদ মাত্রার চেয়ে ১০০ গুণ বেশি পাওয়া গেছে।

গত মাসে জাতিসংঘ জানিয়েছে, অ্যান্টিবায়েটিক প্রতিরোধক ব্যাক্টেরিয়ার বিস্তার বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে, যার কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে এক কোটি মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

ইউনিভার্সিটি অব এক্সিটারের মাইক্রোবাইয়াল ইকোলজিস্ট অধ্যাপক উইলিয়াম গেজ বলেন, ‘আমরা মানুষের দেহে অসংখ্য প্রতিরোধ জিন পেয়েছি যাতে রোগ সংক্রামক জীবাণু রয়েছে যেগুলোর উৎপত্তি হয়েছে পরিবেশগত ব্যাক্টেরিয়া থেকে।’

ইউনিভার্সিটি অব ইয়র্কের পরিবেশ বিজ্ঞানী এবং গবেষণা দলের সহ-নেতৃত্বদানকারী অ্যালিস্টেয়ার বক্সাল বলেন, ‘এটা বেশি ভীতিজনক ও হতাশাজনক। আমরা পরিবেশের ব্যাপক একটি অংশ পেয়েছি যেখানে প্রতিরোধককে প্রভাবিত করার মতো যথেষ্ঠ উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়েটিক রয়েছে।’

-সিবিএন/ইমাম খাইর