রহিম আব্দুর রহিম

২১শে মে রাত দশটার ঘটনা। জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে হঁাটছি ফার্মগেটের দিকে। এক যুবক ধীর গতিতে বাইক চালিয়ে সামনে এগিয়ে এলো। জিজ্ঞেস করলাম ‘ টনবৎ্থ ? উত্তরে হঁ্যা। গন্তব্য জানালাম, রাজি হলো। হ্যালমেড পরিয়ে দিলো। যাত্রা শুরু, জ্যামের শহর ঢাকার রাস্তা ফঁাকা। ঝোট-ঝামেলা নেই। আলাপ চারিতায় এক পর্যায় জানতে পারলাম ‘ টনবৎ্থ চালক যুবকটি, ঢাকা শ্যামলী আইডিয়াল পলিট্যাকনিক্যাল ইন্সিটিটিউটের ট্যাক্সটাইল ট্রেড্রের সিক্স সেমিস্টারের ছাত্র। ওর নাম শফিকুল ইসলাম সবুজ। গ্রামের বাড়ি শেরপুর জেলার লালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকোরা ইউনিয়নে। বাবা জুলহাস উদ্দিন একজন প্রান্তিক কৃষক, মা রাশিদা বেগম গৃহিনী। বাবা-মার চার সন্তানের মধ্যে সবুজ সবার ছোট। এক ভাই, দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। প্রান্তিক কৃষক সবুজের বাবার সহায় সম্পত্তি যা রয়েছে, তা দিয়েই তাদের সংসার চলার পর সবুজের লেখাপড়া হওয়ার কথা। জাত কৃষক সবুজের বাবার দশ বিঘা সম্পত্তি থাকার পরও তাদের সংসার চলে না। কারণ, কৃষি পণ্যের চড়া দাম, উৎপাদিত পণ্যের মূল্য নেই, সবুজের আর পড়াশোনা হচ্ছে না। কৃষক বাবা জমি-জমা বর্গা দিয়েছেন। বর্গা চাষী নিয়ম অনুযায়ী ফসলের ভাগ দিতেও পারছে না। আবাদ শেষে যা দিচ্ছে, তা দিয়ে বাবা-মা কোন মতে খেয়ে পরে কোন রকম বেঁচে আছেন। সবুজ, তার বাবা মার কাছ থেকে ৩০’হাজার টাকা নিয়েছে, ও নিজেই আরও ৯০’হাজার টাকা ধার দেনা করে একটি বাইক কিনেছে, যা দিয়ে ‘ টনবৎ্থ সার্ভিস চালাচ্ছে। ওর স্বপ্ন, বর্গা চাষী মৌসুম শেষে যা দিবে তা দিয়ে সংসার চলবে। প্রতি দিন ‘ টনবৎ্থ চালিয়ে ওর যা ইনকাম হবে তা দিয়ে ঢাকায় থাকা- খাওয়াসহ প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ভার বহন করবে। পাশাপাশি কিস্তিতে ৯০’হাজার টাকা ঋণ পরিশোধ করবে। তার সপ্ন, স্বপ্নই থেকে গেছে। বর্গা চাষী মৌসুম শেষে ফসলের ভাগ দিবে তো দূরের কথা, নানা যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে তাকে বর্গা জমি ফেরত নেওয়ার অনুরোধ করায় সবুজ নিরুপায়। ফলে সবুজের ‘ টনবৎ্থ ইনকামের টাকা বাবা-মার ব্যয়ভারের জন্য পাঠাতে হচ্ছে। যে কারণে যুবক সবুজ ঋণের দায়ে জর্জরিত, তার তারুণ্যে হরদম হতাশা বিরাজ করছে। জীবনযোদ্ধা সবুজের এই কাহিনী কৃষি প্রধান দেশের জন্য দুঃখজনক হলেও সবুজের প্রচেষ্টা, সাহস, উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয় এবং তরুণ সমাজের জন্য অনুকরণীয়।
প্রান্তিক কৃষক জুলহাস তার আবাদি জমি বর্গা দিয়ে বঁাচতে চাইলেও জীবনযোদ্ধা সবুজের হতাশা কে দূর করবে? কৃষি প্রধান এই ভূখন্ডে প্রাচীনকালে ৮৫% শতাংশ মানুষ কৃষক ছিলেন। সুখ সমৃদ্ধ কৃষক জীবনের গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ এগুলো কাব্য সাহিত্যের কোন কাল্পনিক কাহিনী নয়। যা দৃঢ় সত্য এবং বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। সুখি সমৃদ্ধ তৎকালীন কৃষকদের উপর পর্যায়ক্রমে বর্গীদের অত্যাচার, ফিরিঙ্গি-পুর্তগীজ, জলদস্যুদের নির্যাতন, ইংরেজদের খাজনা আদায়ের সূর্যাস্ত আইন, শোষণ ও নিপীড়ন। এসেছিল মন্বন্তর-মহামারি। উজাড় হয়েছিল গ্রাম বাংলা, নিঃস্ব হয়ে পড়ে কৃষককুল। এক সময়কার কৃষকরা পরিনত হয়েছিল ভূমিহীন চাষীতে। দারিদ্রই যঁাদের কোনঠাসা করে। একদিকে সুখি সমৃদ্ধ কৃষকের জীবনযাত্রা হয়ে পড়ে বেদনাদায়ক। অন্যদিকে কালের ঘুর্ণায়নে পাকিস্তানী শোষকদের শোষণ – শাষণের মধ্যেও কৃষকদের চালিয়ে যেতে হয় খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম। ভাষার জন্য জীবন দান, একাত্তরের মুক্তির সংগ্রামে লাখ শহীদদের রক্তে রঞ্জিত বাংলার বিবর্ণ কৃষি মাঠের পুনরায় উন্নতি ঘটতে থাকে। বর্তমানে কৃষি প্রধান বাংলাদেশের শতকরা পঞ্চাশ ভাগ মানুষ কৃষি সম্পৃক্ত। বাংলাদেশের কৃষক ও কৃষি সম্পর্কীয় একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি অষ্টম শ্রেণি’র দুই জন শিক্ষার্থীকে লেখতে বলেছিলাম। ওরা দুইজনই অত্যন্ত সুন্দর ভাষায় প্রতিবেদন দুইটি লেখেছে। একজন ছাত্র তার প্রতিবেনে বর্ণনা করেছে, “ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করে কৃষকরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবে না। কৃষকদের উন্নতি করতে হলে দেশের সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হলে এবং কৃষকদের উন্নতি করতে হলে যে সব ব্যবস্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন এর মধ্যে, ক) নিরক্ষর কৃষকদের মাঝে কৃষি শিক্ষার বিস্তার, খ) কৃষক সমবায় সমিতি গড়ে তোলা, গ) বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা এবং সে গুলোর ব্যবহার সম্বন্ধে কৃষকদের জ্ঞান দান করা, ঘ) উন্নত মানের কীটনাশক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ সরবরাহ করা, ঙ) কৃষি কাজের জন্য কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দান করা, চ) কৃষি পণ্যের ন্যায্য দামের নিশ্চয়তা প্রদান করা।” অন্য ছাত্রটি প্রতিবেদনে বর্ণনা করেছে, “বাংলার কৃষকরা বাঙ্গালী জাতির মেরুদন্ড। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। এরপরও কৃষকরা বহু কাল ধরে অবহেলিত। বিশেষ করে, তঁাদের সামাজিক মর্যাদা এখনো নিম্নমানের। যে দিনে আমাদের দেশের সরকার, কৃষক ও কৃষিকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেবেন, ওই দিনই অর্থনীতির সচল চাকা, সবল হবে। ঘরে ঘরে ফুটে উঠবে স্বাচ্ছন্দের ছবি। বলা যায়, কৃষি মাঠে কৃষকের আত্মার ভেতর লুকিয়ে আছে আমাদেরই সমৃদ্ধির প্রাচুর্যের বীজ।” মাধুর্য মিশ্রিত ভাষায় বর্ণিত এই প্রতিবেদনগুলো একজন শিশু শিক্ষার্থী পরীক্ষায় ভাল নাম্বার পাওয়ার রসদ হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা কঠিন। লেখাটি প্রস্তুত করার পূর্বে ৩০ জন প্রান্তিক কৃষকের সাথে এক ঘন্টা আলোচনা হয়েছে। রাগ-অভিমান প্রকাশ পেয়েছে। রাষ্ট্র সংশ্লিষ্টদের সমালোচনা কম হয়নি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি নিবেদন আবেদন ও ক্ষোভের কথা তারা বলার চেষ্টা করেছেন। কৃষক, আলমাছ আলী। বয়স ৫০ উর্দ্ধ। তিনি বলেছেন, ‘ভাই, সাম্বাদিক ত হইছেন, আমগো কতা গুইলা অহুন, পিইয়াজ, মরিচদের কাছে না কইয়া শেকের ম্যায়ারে কইতে পারবেন?’ জানতে চেয়েছিলাম রসুন, পিঁয়াজ, মরিচ কারা ? উত্তরে বলেছেন,‘বড় বড় কতা কয়, মন্ত্রী মিনিষ্টর অইছে, কতার বড়ই ঝাল কামের কাম……. …….।” এই ধরনের কথা বলার পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছেন,‘মায়ের কান্দন মাসি কান্দে না, শেকের ম্যায়া এই দেশটারে যে ভাবে দেহে, ওই ভাবে অহুন, পিইয়াজ, মরিচরা দেহে না। আমগো (কৃষকদের) দুঃকের কতা হাছিনা ছাড়া কেউ বুঝব না।’ প্রান্তিক চাষিদের নিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছে, কৃষকদের দূরাবস্থার ভয়ঙ্কর চিত্র। ৫২ শতাংশ জমি নিয়ে গঠিত ১ বিঘা জমির প্রারম্ভিক চাষ থেকে শুরু করে, ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত তিন পর্যায়ে, একজন কৃষকের যে খরচ শেষে যা গোলায় তোলে তা হতাশাজনক। প্রথম ধাপে জমি প্রস্তুত। বীজতলা ১২’শ টাকা, হালচাষ তিনটি, প্রতি চাষ ৪’শ টাকা হারে ১২’শ টাকা, জমিতে মই মারা একটি, ৫’শ টাকা। দ্বিতীয় ধাপে রোপণ বাবদ ৩’ হাজার টাকা, সেচ প্রতি বিঘা ৩’হাজার টাকা, কীটনাশক ও পরিচর্চা বাবদ ১৫’শ টাকা, শেষ পর্যায়, মাড়াই করার জন্য শ্রমিক ৬ জন ৮’শ টাকা হারে ৪৮’শ টাকা, কৃষি মাঠ থেকে ফসল ঘরে আনা বাবদ ৮’শ টাকা, সর্বমোট ১ বিঘা প্রতি একজন প্রান্তিক কৃষকের মোট খরচ ২১’হাজার ৫’শ টাকা। ওই ১ বিঘাতে উৎপাদিত ফসল আসল ৩০ মণ, প্রতি মণ ফসলের দাম ৫’শ ৫০ টাকা হারে তার আয়ের ঘরে আসল ১৬’হাজার ৫’শ টাকা। উৎপাদন খরচ ২১’হাজার ৫’শ টাকা হওয়ায় কৃষকের প্রতি বিঘায় লোকসান গুনতে হচ্ছে ৫’হাজার টাকা। ৫ বিঘা সম্পত্তির একজন প্রন্তিক চাষির লোকসান গুনতে মোট ২৫’হাজার টাকা। কবি রাজিয়া খাতুন চৌধুরাণী তঁার ‘চাষী’ কবিতায় তুলে এনেছেন, “ সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা/দেশ মাতার ঐ মুক্তিকামী দেশের সে যে আশা/ মুক্তিকামী মহাসাধক মুক্ত করে দেশ / সবারই সে অন্ন যোগায় নেই কো গর্ব লেশ।” অথচ এই সাধকদের এই অবস্থা কেন ? এই প্রশ্ন প্রান্তিক চাষীদের কাছে রেখেছিলাম। উত্তরে তারা যা বলেছেন, তার সারাংশ হলো,‘বাংলাদেশের মাটি উর্বর, কৃষকরা পরিশ্রমী, দেশের একেক অঞ্চলের আবহাওয়া একেক রকম, উচু-নিচু, সমতল, পাহাড়, নদী অঞ্চল ভেদে মাটির ধরণ বালি,এঁটেল, দো’আশ আবার কোথাও লবণাক্ত। অথচ ফসল উৎপাদনে নেই পরামর্শ।” কৃষি ফল ফসলের মধ্যে কি পরে? তা বলতে পারে নি আলোচনায় অংশগ্রহনকারী কোন কৃষকই। তারা কৃষি বলতে বুঝিয়েছেন, ধান, পাট, গম,আখ, ভুট্রা, শাকসবজি, রসুন, পিঁয়াজ, আদা, হলুদ। পশু পাখি, হঁাস-মুরগী, ছাগল-গরু, গাছ-গাছরা ও মৎস সম্পদ যে কৃষির আওতায় তা তাদের ৭৫% শতাংশ কৃষকরাই জানে না। অথচ তাদের রক্ত ঘামেই উৎপাদিত পণ্য ফসলে পুষ্ট হচ্ছে দেশের মানুষ। তবে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক কৃষকই যৌক্তিকভাবে বলতে পেরেছেন, সারা দেশের আবহাওয়া, মাটি ও প্রকৃতির ধরণ বিবেচনায় অঞ্চল ভেদে কৃষকদের ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করা, কৃষি উপকরণের দাম কমিয়ে আনা, সুদবিহীন কৃষি লোন প্রদানে রাষ্ট্রীয় সহযোগীতা দেওয়া সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। কৃষকদের দাবি মাত্র দুইটি। তার প্রথমটি ক) সরকার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি ফসল ক্রয় করবেন। খ) বাংলাদেশে উৎপাদিত চাউল, চিনি, পিঁয়াজ,রসুন কোন ভাবেই বিদেশ থেকে আমদানী করা যাবে না। তাদের যৌক্তিক দাবি, কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি কৃষি ফসল ক্রয় কিভাবে সম্ভব? জানতে চাইলে, তারা ফসল ক্রয়ের একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। তাদের প্রস্তাবিত কমিটিই হবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও বিজিবি জোয়ান দ্বারা। যে কমিটিতে থাকবে প্রতি ইউনিয়নের প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা সদস্য ও ওই ইউনিয়নের প্রতিটি স্কুলের একজন করে শিক্ষক। একটি ইউনিয়নের জন্য ৯ জন জনপ্রতিনিধি থাকবেন, যারা শুধু ক্রয় কমিটিকে কৃষকের সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিবেন। প্রান্তিক চাষীর ১০ টাকার ব্যাংক একাউন্টের কার্ড দেখে বর্তমানে যে কৃষি ফসল কেনা হচ্ছে, তা বাতিল করে কৃষকদের কৃষি কার্ড প্রদানের প্রস্তাব করেছেন। তাদের যুক্তি, এই কার্ড দ্বারা একজন কৃষক, কৃষি ঋণ, কৃষি পণ্য ক্রয়-বিক্রয়সহ বিভিন্ন কৃষি সম্পৃক্ত কাজে ব্যবহার করবেন। এতে করে তাদের ভাষায়, ‘আতি-পাতি’ নেতা এবং দালালরা ফায়দা লুটতে পারবে না।” প্রস্তাবের ‘খ’ তে তারা যে বলেছেন বাংলাদেশে উৎপন্ন হয় এ ধরণের ফসল কোন ক্রমেই বিদেশ থেকে আমদানি করা যাবে না। তাদের এই প্রস্তাবের বিরোধীতা করে বলা হয়েছিল, এতে করে বিদেশীদের সাথে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে। এ ধরনের মন্তব্য করায় তারা বলেছেন, ‘আমাদের রক্ত ঘামে উৎপাদিত ফসলের আমরা মূল্য পাইনা, ১২ টাকা কেজি ধান বিক্রি করে ৬০ টাকা কেজি চাউল খেতে হয়, এরপরও বিদেশীদের সাথে সম্পর্ক রাখতে হবে! সরকার তো আমাদের, বিদেশীদের নয়।’ কৃষকরা চিনি পিঁয়াজ, রসুন আমদানী বন্ধের প্রস্তাব করে বলেন, এধরনের পণ্যে দ্বিগুন করারোপ করা হলে বিদেশী পণ্যের দাম বেড়ে যাবে, ফলে গ্রাহকরা বিদেশী পণ্য না কিনে দেশী পণ্যের দিকে ঝঁুকবে। এতে করে কৃষক সমাজ রক্ষা পাবেন। সর্বশেষ আলোচনায় কৃষকরা পাট ফসলের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবার আকূতি জানিয়েছেন। এব্যাপারে তাদের মতামত ও অভিব্যক্তি, ‘পাট ফসল উৎপাদনের আগে দেশের জোট মিল গুলোকে চাঙ্গা করা, পলিথিন মুক্ত দেশ গঠনে গণজোয়ার সৃষ্টি, আইনি প্রক্রিয়া জোরদার করা, সরকারের ফরজে আইন হয়ে দঁাড়িয়েছে। ’ নিরক্ষর অর্ধশিক্ষিত-অশিক্ষিত এই কৃষক আড্ডায় উপস্থিত কৃষকরা দুঃখ করে বলেছেন, ‘আমরা এতই খারাপ যে, আমাদের পাটকল গুলো বন্ধ, বিমান শিল্পে লোকসান, কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পায় না, চিনি কলে লক্ষ লক্ষ চিনি নষ্ট হয়ে যায়। অথচ বালিশ ইঞ্জিনিয়াররা অবাধে কোটিপতি হচ্ছে। এক বালিশের দাম ৫’হাজার ৯’শ ৫৭ টাকা, যা উঠাতে লেগেছে ৭’শ৬০ টাকা।’ পলিথিন মুক্ত দেশ গঠনে কৃষকের কি উন্নয়ন হবে ? তা জানতে চাইলে, তারা জানান, ‘এতে করে পাট পণ্যের বাজার ব্যাগসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পাটজাত দ্রব্য দেশের মানুষ প্রতিনিয়ত ব্যবহার করবে। এতে করে আবারও সোনার দেশে, সোনালী আঁশের, পাটের আবাদে, কৃষকরা সোনার হাসি হাসবে। পলিথিন বন্ধে সরকারের কি করণীয় আছে? তা জানতে চাইলে, তারা বলেন, ‘দেশের পরিবেশ ধ্বংসকারী উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সরকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। কোন ক্রমেই পলিথিন উৎপাদনকারীদের অনুষ্ঠানে সরকার সংশ্লিষ্টরা অতিথি হওয়া ও উপঢৌকন নিতে পারবেন না।’ এ ক্ষেত্রে সোজা-সাপ্টা পরামর্শ দিতে গিয়ে তারা বলেন, ‘সমাজ-রাষ্ট্রের বড় ক্ষত মাদক-জঙ্গী যে ভাবে নিধন করা হচ্ছে, তেমনি পলিথিন উৎপাদন বন্ধে সরকারকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে।’ কৃষকদের সাথে ঘন্টা ব্যাপী আলোচনায় স্পষ্ট হয়েছে, কৃষকরা এদেশের সত্যিকার অর্থের প্রাণশক্তি। তাদের বিশ্বাস, দেশের কৃষকদের সরকার সুযোগ সৃষ্টি করে দিলে এই কৃষকরাই সরকারের উন্নয়নে সর্বশ্রেষ্ঠ হাতিয়ার হিসাবে কাজ করবে। লেখাটি তৈয়ার করার শেষ পযার্য় কথা হয়, ৮০ উর্দ্ধ কৃষক শামছুল হকের সাথে, তিনি বলেন, ‘ আমরা ভাত ত দূরের কতা, রুটিও খাবার পাই নাই, খেসারী ডাইলের গুড়া খাইছি। এহন মাইনসের অভাব নাই, হাছিনা ত বালাই দেশ চালাইতাছে, কৃষকের এই অবস্থা হওয়ার ত কতা না’। বিশ্লেষকদেরও একই কথা। পতিত বিএনপি সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহজাহান সিরাজ, দেশকে প্রায় পলিথিন মুক্ত করতে পেরেছিলেন। তৎকালিন শিক্ষামন্ত্রী এহসানুল হক মিলন, নকল মুক্ত শিক্ষাঙ্গন নিশ্চিত করার গৌরব অর্জন করেছিলেন। বর্তমান সরকার সকল ক্ষেত্রেই উন্নয়নের মহাসড়কে হঁাটছেন এতে কোন সন্দেহ নাই। তবে কেন, কোন দুর্বলতার গ্যাড়াকলে পড়ে দেশের প্রাণ ও অর্থনীতির মেরুদন্ড, কৃষকদের দূরাবস্থা এবং পলিথিন মুক্ত দেশ গঠনে উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা পালন করতে পারছে না? আর দেরী নয়, “কৃষক বঁাচলে দেশ বাচঁবে” স্লোগান বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবী।
লেখক ঃ সাংবাদিক, কলামনিস্ট।