বাংলা ট্রিবিউন

লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বড় জয় পাওয়ায় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অমীমাংসিত ইস্যুগুলো দ্রুত সমাধানের মুখ দেখবে বলে আশা করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বলছেন, এবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় মোদি সরকারের ক্ষমতা আরও বাড়বে। সেজন্য তারা রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যেকোনও উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে চাইবে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক আপত্তি-অনাপত্তি নিরসন করে তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সাফল্য অর্জন করতে চাইবে।

আওয়ামী লীগের নেতাদের ভাষ্য, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হতে যাওয়া মোদি সরকারের গত মেয়াদে দুটি বড় ইস্যুতে সমাধান এসেছে। এর একটি হলো সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন ও অপরটি হলো সমুদ্রসীমা নির্ধারণ। এ ছাড়া, ভারতকে সড়কপথে ট্রানজিট দেওয়া, চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেওয়াসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। আর আমাদের পক্ষ থেকে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা, তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি করাসহ নানা দাবি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে এবার উদ্যোগ নেওয়া হলে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা ও তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তিটা হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া, ভারত তার নিজের স্বার্থেই জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় এদেশের সঙ্গে কাজ করবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ-এনার্জি খাত, দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ নিয়ে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারবে।

প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনের ভোট গণনা শেষে ফলাফলে দেখা যায়, এবারও ভূমিধস জয় পেয়েছে বিজেপি। কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যগতভাবে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে মনে করা হয়েছিলো, বিজেপি সরকারের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের টানাপোড়েন তৈরি হতে পারে। কিন্তু সে ধারণা ভুল প্রমাণ করে বিজেপি সরকারের গত মেয়াদে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরও উন্নতি হয়।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই বিজয় গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে। মোদি সরকারের গত পাঁচ বছর মেয়াদে আমরা দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান করতে পেরেছি। এর মধ্যে একটি হলো ছিট মহল বিনিময় এবং অপরটি হলো সমুদ্রসীমা চিহ্নিতকরণ। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাতে ঘাটতি কমে আসে, সেটার চেষ্টা চলছে। এবার সেটা কমে আসতে পারে। কারণ, এ আলোচনার জন্য প্রচুর সময় পাওয়া যাবে। এ ছাড়া, এনার্জি, বিদ্যুতের ক্ষেত্রে কী কী সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে, যা নিয়ে দুই দেশের সরকার আগে থেকে কাজ করছে; সেসব উদ্যোগের গতি বাড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করা যায়। কেননা, গুজরাটের মানুষ মোদি, তিনি বাণিজ্য-বিনিয়োগটা ভালো বোঝেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই তিনি এর পরিধিটা বাড়াতে চাইবেন। আর এদেশও নিজ স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে বিনিয়োগ গ্রহণ করতে আগ্রহী।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, ‘মোদির আমলে যেসব ইস্যুর সমাধান হয়েছে, তার অনেকগুলোর আলোচনা কংগ্রেস আমলে শুরু হয়েছিল। কাজেই এটা বলতে হবে যে, বিজেপি সরকারের সঙ্গেও আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। মোদি সরকারের গত মেয়াদে সময়ের অভাবে কিছু আলোচনায় অগ্রগতি হয়নি। আবার তিস্তার পানি চুক্তির ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপত্তি করেছিলেন। এবার পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি শক্তিশালী হয়েছে; অভ্যন্তরীণ দর কষাকষিতে যেটা বিজেপিকে সুবিধা দেবে। আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত থাকলে তিস্তা চুক্তি আলোর মুখ দেখতে পারে বলে আমরা আশাবাদী হতে পারি।’

দ্বিতীয় মেয়াদে মোদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের ভবিষ্যত সম্পর্ক কেমন হবে, এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আজ শুক্রবার (২৪ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মোদি সরকারের গত আমলে আমাদের সঙ্গে অনেক অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হয়েছে। গত মেয়াদে মোদি সরকারের সাহসিকতা ও বিচক্ষণতা প্রমাণ, দুই দেশের সীমান্ত সমস্যার সমাধান। আমরা আশা করি, তিস্তা চুক্তিসহ অমীমাংসিত বিষয়গুলোতে সমাধানের প্রক্রিয়া আরও দ্রুততর হবে।’

মোদির জয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সুসম্পর্ক রয়েছে। উভয় দেশ অনেক ক্ষেত্রেই একে-অপরের সহযোগিতা করছে।’ এই সুসম্পর্ক আরও দৃঢ় ও বন্ধুত্বপূর্ণ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।