বার্তা পরিবেশক:

কবি কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব বাংলা সাহিত্যে এক উজ্জ্বল ধূমকেতুর মতো। তিনি বাংলা সাহিত্যের আলোক বর্তিকা স্বরূপ। সমাজের বাধা-নিষেধ, বিদেশি শাসকদের শাসনদ-, কারাবাসের নির্মম অত্যাচার কোনোটাই তাকে হতোদ্যম করতে পারেনি।

কাজী নজরুল ইসলাম কবিতার পাশাপাশি গান লিখেছেন প্রচুর। তার গানের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

কাজী নজরুল ইসলাম যৌবনের কবি, মানবতার কবি, সাম্যের কবি, বিদ্রোহের কবি, প্রেমের কবি, রোমান্টিক কবি, গানের কবি, সর্বোপারি যুগ সচেতন দ্রোহের কবি। বাংলা সাহিত্যে মাইকেল যুগের পরে, রবীন্দ্র যুগ শেষে নজরুল যুগ শুরু। নজরুল যুগ এখনো চলমান।

নজরুল শিশুর জন্য যেমন লিখেছেন, তরুণের জন্যও লিখেছেন, লিখেছেন যুবকের জন্য, পৌঢ়ের জন্য। ১৭৯১ সালে তাঁর কবিতা, গান বাঙালিকে বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে। তাঁর গানের মধ্যেই মুক্তিকামী মানুষ বার বার স্বাধীনতার তাড়া অনুভব করেছেন, পেয়েছেন উদ্দিপনা।

তিনি অসাম্প্রদায়িক বলেই হিন্দু-মুসলমানদের জন্য সমান ভাবে সংগীত রচনা করতে পেরেছেন। তিনি লিখেছেন ম্যামা সংগীত, ভজন, কীর্তন। তাঁর লিখা কীর্তন, ভজন, শ্যামা সংগীত ছাড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা-পাবন অচল। অনুরুপ আল্লাহ ও রাসূল সা.-এর প্রশংসা মূলক হামদ, নাত রচনা করেছেন। তাঁর গান ছাড়া মুসলমানদের রজমানের পরের ঈদ মলিন। রজমানের এই রোজার শেষে এলা খুশির ঈদ ছাড়া মুসলমানদের ঈদের আনন্দ অসম্পূর্ণ।

কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর উদ্যোগে ২৪ মে ২০১৯ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২০তম জন্ম-জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তাগণ এসব কথা বলেন।

বক্তাগণ বলেন, কবি কাজী নজরুল ইসলামের বাল্যকাল ও কৈশোর সুখকর ছিল না। নজরুল কাব্যে প্রেম আছে, ব্যর্থ প্রেমের বিষাদাত্মক অনুভূতি আছে, আছে বিদ্রোহের সুর। তবুও তাঁর কবিতায় অসাম্প্রাদায়িক চেতনা, মানবিকবোধ এবং নির্যাতিত মানুষের কথা এসেছে বারবার। এসবের মূলে ছিল ব্যক্তি নজরুলের জীবনের বঞ্চনা, সংগ্রাম ও দারিদ্র। নজরুলের কবিতার মতো তাঁর সমকালের অন্য কোনো কবি কবিতায় এ-রকম আবেগি সুরে শ্রমজীবী মানুষের কথা কেউ বলেন নি।

কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর উদ্যোগে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম-জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাডেমীর সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলাম।

শহরের এন্ডারসন রোডে একাডেমীর অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা পরিচালনা করেন একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক কবি রুহুল কাদের বাবুল ও সহকারী সাধারণ সম্পাদক কবি মনজুরুল ইসলাম।

পুরো অনুষ্ঠানটি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা ও কবিতাপাঠ নিয়ে সাজানো ছিলো।

কবির জীবনালেক্ষ নিয়ে আলোচনা করেন, একাডেমীর স্থায়ী পরিষদের চেয়ারম্যান কবি সুলতান আহমদ, স্থায়ী পরিষদের সদস্য গবেষক নুরুল আজিজ চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক কবি মোহাম্মদ আমির উদ্দীন, সহকারী সাধারণ সম্পাদক কবি মনজুরুল ইসলাম, নির্বাহী সদস্য ছড়াকার জহির ইসলাম ও আবৃত্তিকার কল্লোল দে চৌধুরী।

কবিতা পাঠ করেন কবি সুলতান আহমেদ, মনজুরুল ইসলাম, জহির ইসলাম। নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করেন একাডেমীর নির্বাহী সদস্য আবৃত্তিকার কল্লোল দে চৌধুরী।

কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর ৪৫০ তম সাহিত্য সভা ও ঈদ পুনর্মিলনী ১৪ জুন

কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর ৪৫০তম সাহিত্য সভা ও ঈদ পুনর্মিলনী আগামী ১৪ জুন ২০১৯ শুক্রবার সকাল বিকাল ৪টায় কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।

অনুষ্ঠানে একাডেমীর সংশ্লিষ্ট সকলসহ জেলার কবি-সাহিত্যিক, সাহিত্যামোদিদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য একাডেমীর সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক কবি রুহুল কাদের বাবুল আহবান জানিয়েছেন।