জাগো নিউজ: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের কাঠালিয়া পাহাড় গ্রামে হাজারো লবণ চাষির বাস। তাদের একজন তানভীর হাসান। তার চার কানি (১ কানি সমান ৩৯ শতাংশ) জমিতে লবণ রয়েছে প্রায় ৪ লাখ মণ। সম্প্রতি কয়েকটি বড় বড় কোম্পানি লবণ কেনা বন্ধ করে দেয়ায় কমে গেছে লবণের দাম। হঠাৎ দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তানভীর হাসানের মতো চাষিরা।

তিনি জানান, যে লবণ বিক্রি হতো ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা মণ, এখন সেটার দাম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। এই টাকায় লবণ বিক্রি করলে যে আয় হবে, তাতে শ্রমিকের খরচই উঠবে না।

বুধবার (২২ মে) কাঠালিয়া পাহাড় গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ক্ষেতের পাশে গর্ত করে শত শত চাষি তাদের লবণ সংরক্ষণ করে রেখে দিয়েছেন। তানভীরের মতো এসব চাষিও হঠাৎ দাম কমে যাওয়ায় লবণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বলে জানান।

Lobon.jpg

লবণ চাষিরা জানান, শীতকাল থেকে তারা লবণ চাষ শুরু করেন। বৃষ্টি শুরু হলে চাষ বন্ধ হয়ে যায়। এ বছর পর্যাপ্ত পরিমাণ রোদ ও কম বৃষ্টিপাত থাকায় তাদের লবণ উৎপাদন ভালো হয়েছে। বর্ষা আসছে, সবাই এখন লবণ বিক্রি শেষ করবেন। কিন্তি এমন সময় হঠাৎ লবণের দাম কমে যাওয়ায় ডিলাররা লবণের দাম প্রায় অর্ধেক বলছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে তাদেরকে বড় ধরনের ঘাটতির মধ্যে পড়তে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করে। গত ১২ মে সংবাদ সম্মেলন করে এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানের ৫২টি পণ্য নিম্নমানের ও ভেজাল রয়েছে বলে জানায় বিএসটিআই। পরে ওই ৫২টি খাদ্যপণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এসব পণ্যের মধ্যে ৯টি লবণ কোম্পানিও রয়েছে। সেগুলো হলো- এসিআই, মোল্লা সল্ট, তীর, মধুমতি, মদিনা, দাদা সুপার, স্টারশিপ, নূর স্পেশাল ও তাজ। এ রকম পরিস্থিতিতে এই লবণ কোম্পানিগুলো লবণ কেনা বন্ধ করে দেয়ায় চাষিদের উৎপাদিত লবণের দাম কমে গেছে।

এ বিষয়ে এসিআই সল্ট লিমিটেডের বিসনেস ডিরেক্টর মো. কামরুল হাসান বলেন, আমাদের কারখানার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৬ লাখ কেজি লবণ প্রয়োজন হয়। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞায় আমাদের লবণ উৎপাদন বন্ধ থাকায় খুচরা বাজার থেকে এ লবণ কেনা বন্ধ করে দিয়েছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার লবণ কিনব।

Lobon.jpg

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ, কক্সবাজার সদরসহ কক্সবাজারের উপকূল এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপজেলায় লবণ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত আছে প্রায় ৪ লাখের বেশি কৃষক ও শ্রমিক। চলতি মৌসুমে দেশে লবণের ১৬ লাখ ৬৫ হাজার টনের চাহিদা পূরণ করবে এসব কৃষক ও শ্রমিকরা। আর ভোক্তা ও শিল্পখাতের এ চাহিদার বিপরীতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১৮ লাখ টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখন পর্যন্ত লবণ উৎপাদন ১৮ লাখ টন ছাড়িয়েছে।

এ বিষয়ে বিসিকের কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক দিলদার আহমদ চৌধুরী বলেন, ডিসেম্বর থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় ১৮ লাখ টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। আগামী কয়েক দিনে তা আরও বাড়তে পারে।

লবণ চাষিদের দাবি, তারা যাতে লবণের ন্যায্যমূল্য পান, সেই ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। সেই সঙ্গে লবণ শিল্পকে বাঁচাতে হলে কক্সবাজারে লবণ বোর্ড গঠন করতে হবে। চাষিরা যাতে লবণের সঠিক দাম পায়, বিষয়টি দেখভাল করবে লবণ বোর্ড।