প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু ও নবজাতকের মৃত্যুর অন্যতম একটি কারন হলো বাড়ীতে অদক্ষ দাই বা ধাত্রী দ্বারা বাচ্চা ডেলিভারী করানো। এখনও প্রায় ৫৩% ডেলিভারী বাড়ীতে হয়ে থাকে (সূত্র: বাংলাদেশ মেটারনাল মর্টালিটি এন্ড হেলথ্ কেয়ার সার্ভে ২০১৬), ফলে মা ও নবজাতকের মৃত্যুর ঝুঁকির পাশাপাশি নানান ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়, এর মধ্যে মায়েদের ‘প্রসবজনিত ফিস্টুলা’ অন্যতম। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় প্রসবজনিত ২০,০০০ ফিস্টুলা রোগী বিদ্যমান, যাদের জরুরী ভিত্তিতে ফিস্টুলা সার্জারি করা প্রয়োজন। অন্যদিকে প্রতি বছর প্রায় ১,০০০ জন মা নতুন করে প্রসবজনিত ফিস্টুলা’র শিকার হচ্ছেন।

গত ২৩ মে, আন্তর্জাতিক প্রসবজনিত ফিস্টুলা নির্মূল দিবস ২০১৯ উৎযাপন উপলক্ষ্যে হোপ ফাৃউন্ডেশন ফর উইমেন এন্ড চিলড্রেন অব বাংলাদেশ কক্সবাজার এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও আলোচনা সভায় হোপ ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডাইরেক্টর কে এম জাহিদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে যেভাবে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রসবজনিত ফিস্টুলার চিকিৎসা সেবা অব্যাহত আছে তাতে খুব শ্রীগ্রই বাংলাদেশ থেকে প্রসবজনিত ফিস্টুলা নির্মূল হবে। বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্যখাতে অভূতপূর্ব সাফলতা দেখিয়েছে আর এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ কর্তৃক পদকও পেয়েছেন। কান্ট্রি ডাইরেক্টর কে এম জাহিদুজ্জামান আরো বলেন, এই কর্মধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ প্রসবজনিত ফিস্টুলা নির্মূল হবেই, পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

দিবসটি উপলক্ষ্যে সকালে হোপ ফাউন্ডেশন কক্সবাজার সদর হাসপাতাল চত্ত্বর থেকে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি শহীদ মিনার গিয়ে শেষ হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন কক্সবাজার সদর হাসপাতাল এর দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এহসান এবং অন্যান্য সিনিয়র কনসালটেন্টবৃন্দ, হোপ হসপিটালের চীফ মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোহাম্মদ ইসমাইল, সিনিয়র কনসালটেন্ট এবং ফিস্টুলা সার্জন ডাঃ নৃন্ময় বিশ্বাস, রেসিডেন্ট কনসালটেন্ট এবং ফিস্টুলা সার্জন ডাঃ ফাহমিদা আক্তার, ফিস্টুলা কোঅর্ডিনেটর আজমুল হুদা, হোপ সিনিয়র ম্যানেজার মোঃ শওকত আলী, কো-অর্ডিনেটর রাকিবুল হক, প্রমুখ। প্রসবজনিত ফিস্টুলা সম্পর্কে এবং হোপ হাসপাতালের সেবাসমুহ নিন্মে তুলে ধরা হল:

প্রসবজনিত ফিস্টুলা কি ও কেন হয়: অদক্ষ দাই বা ধাত্রী দ্বারা বাচ্চা ডেলিভারী করালে কিংবা প্রসব ব্যথা ১২ ঘন্টার বেশী স্থায়ী হলে বাধাগ্রস্থ প্রসবের কারণে ফিস্টুলা হতে পারে। বাচ্চা প্রসবে বাধাগ্রস্থ হলে এবং দীর্ঘ সময় প্রসব ব্যথা চলতে থাকলে মায়েদের প্রস্রাব ও মল থলিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ফলে চাপ পড়া স্থানের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং ছিদ্র হয়ে যায়। এরপর থেকে প্রসবের রাস্তা দিয়ে অনবরত প্র¯্রাব এবং মল অথবা এর যে কোন একটি ঝরতে থাকে, এটাই হলো ফিস্টুলা অর্থাৎ ফিস্টুলা হলে মাসিকের রাস্তা দিয়ে অনবরত প্র¯্রাব ও পায়খানা ঝরে বা এর যে কোন একটি ঝরতেই থাকবে।

প্রসবজনিত ফিস্টুলায় আক্রান্তের পরিনতি: ফিস্টুলায় আক্রান্ত মায়েদের শরীর থেকে সারাক্ষন দূর্গন্ধ ছড়ায়। ফলশ্রূতিতে পারিবরিক জীবনে অশান্তির পাশাপাশি তাদের সংসার ভেঙ্গে যায়, সামাজিকভাবে তাদেরকে অবমূল্যায়ন করা হয়, এমনকি তাদেরকে এক ঘরে করে দেয়া হয়। সহায় সম্বলহীন হয়ে অনেকে ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নেয় আবার কখনও কখনও তারা মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগতে থাকে।

প্রসবজনিত ফিস্টুলা বিষয়ে কিছু কুসংস্কার: বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলের মানুষ এখনও এই রোগটির কারণ ও প্রতিকার জানে না বলে এটিকে কেউ কেউ ‘অভিশাপ’ মনে করে। আসলে এটি নিতান্তই প্রসবজনিত জটিলতার ফল। প্রসবজনিত ফিস্টুলা শুধুমাত্র প্রসবজনিত জটিলতার কারনেই হয়ে থাকে।

প্রসবজনিত ফিস্টুলা চিকিৎসা ও পূর্নবাসন: কিছু কিছু সরকারী হাসপাতালের পাশাপাশি কক্সবাজারের বেসরকারী হোপ হসপিটাল অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বিশেষজ্ঞ চিকিসকের মাধ্যমে বিনামূল্যে ফিস্টুলা’র চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। হোপ হসপিটালটি মুলত: ‘হোপ ফাউন্ডেশন ফর উইমেন এন্ড চিলড্রেন অব বাংলাদেশ’ এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৯ সাল থেকে হোপ হসপিটালটি কক্সবাজারের রামু উপজেলার চেইন্দা মিঠাছড়ি নামক স্থানে কাজ শুরু করেছে। ৪০ শষ্যাবিশিষ্ট হসপিটালটি ২০১১ সাল থেকে যথেষ্ট সুনামের সহিত সম্পূর্ন বিনামূল্যে ৪৭৮ জন মায়েদের প্রসবজনিত ফিস্টুলা সেবা প্রদান করেছে (তথ্য: হোপ হসপিটাল, মে ২০১৯)। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৮৫ জন ফিস্টুলা রোগী হোপ হসপিটাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ জীবন যাপন করছে। দিন দিন এই সংখ্যা বেড়েই চলছে। খুব শীগ্রই হোপ ফাউন্ডেশন ফিস্টুলা ফাউন্ডেশনের ও ইউএনএফপিএ’র আর্থিক সহায়তায় ৭৫ শষ্যাবিশিষ্ট ‘হোপ মেটার্নিটি এন্ড ফিস্টুলা সেন্টার’ চালু করতে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশে ফিস্টুলা’র অত্যাধুনিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। ইতিমধ্যে যারা এই হসপিটাল থেকে ফিস্টুলা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্যভাবে জীবন-যাপন করছেন তাদের মধ্যে প্রায় ৩০ জনকে হোপ হসপিটাল কর্মসংস্থানের মাধ্যমে তাদের সামাজিক মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট ড: ইফতিখার মাহমুদ বলেন বাংলাদেশকে প্রসবজনিত ফিস্টুলা মুক্ত করা এবং প্রসবজনিত ফিস্টুলা বিষয়ে সকলকে সচেতন না করা পর্যন্ত হোপ ফাউন্ডেশন তাদের কার্যক্রমসমুহ চালিয়ে যাবে। তিনি এই কর্মসুচীর সফল বাস্তবায়নে সমাজের সর্বস্তরের জনগন, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ এবং সংবাদপত্র-মিডিয়ার সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন।

{***যদি কোন প্রসবজনিত ফিস্টুলা রোগীর খোঁজ পান বা সন্ধান পান তবে তাকে দ্রূত হোপ হসপিটাল, চেইন্দা, দক্ষিন মিঠাছড়ি, রামু, কক্সবাজার পাঠিয়ে দিন, অথবা রোগীর নাম, ঠিকানা ও যোগাযোগ নং সহ খবর দিলে হোপ ফাউন্ডেশন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাদের সাথে যোগাযোগ করবে। হোপ ফাউন্ডেশন সম্পূর্ন বিনামূল্যে প্রসবজনিত ফিস্টুলার চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। যোগাযোগ করুন: ০১৮১৮-৯২৮৪৯৩, ০১৮১৯-৯০৯৩১৮। বিস্তারিত জানতে চাইলে লিখুন:  {azmulhuda7@gmail.com}