এম.আর মাহমুদ

“মাগনা পেলে নাকি ব্রাহ্মণও গোমাংস ভক্ষণ করে” উক্তিটি আমার এক প্রিয় শিক্ষকের। তিনি অবশ্য বেঁচে নাই। আমার শিক্ষাগুরু হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতেন। কোন ধর্মের প্রতি বৈরী আচরণ করতে দেখেনি। তিনি উপরে উল্লেখিত উক্তিটি কেন করেছিলেন, তা জানার ইচ্ছা থাকলেও গুরু মহাশয় বিব্রতবোধ করতে পারেন বিধায় তাৎপর্য জানতে চাইনি। নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময় ফাঁকা বিলে বেশুমার শকুন চড়তে দেখেছি। তবে বর্তমানে শকুন বিলুপ্তপ্রায়। যেখানে গরু মারা যেত সেখানেই শকুনের দল গিয়ে গরুর মাংস ভক্ষণ করত। জীবনে কোনদিন শকুন গো-মাংস ছাড়া অন্য কিছু ভক্ষণ করতে তেমন দেখেনি। শকুন মরা গরুর মাংস খেতেই অভ্যস্থ ছিল মাগনা পেত বলে। শকুনের দলকে যদি প্রতি কেজি গো-মাংস ৬‘শ টাকায় ক্রয় করে খেতে হতো, তাহলে কোনদিন শকুন গো-মাংসের পাশেও যেত না। আসলে এসব কথা বলার পিছনে শুধুই একটি কারণ। ক’দিন আগে সৌদি সরকার হজ্ব পালন করতে যাওয়া হাজ্বীদের কোরবানী দেওয়া দুম্বার উচ্ছিষ্ট মাংসগুলো প্রক্রিয়াজাত করে বাংলাদেশসহ কিছু গরিব মুসলিম রাষ্ট্রে হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরণের জন্য পাঠিয়ে থাকে। সে মোতাবেক জেলা ও উপজেলা প্রশাসন জনপ্রতিনিধিদের তালিকা মোতাবেক এতিমখানা, হাফেজখানা সহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও হতদরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে থাকে। কিন্তু এবারের দুম্বার মাংস বিতরণের ক্ষেত্রে দেখা গেল নতুন একটি অধ্যায়। সৌদি সরকার কর্তৃক পাঠানো উচ্ছিষ্ট দুম্বার মাংসগুলো সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, এতিমখানা, হাফেজখানা, প্রেসক্লাবসহ জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। কিন্তু বিতরণকৃত দুম্বার মাংসগুলো হতদরিদ্রদের কপালে জুটেনি। জুটেছে ভাগ্যবান কর্মকর্তা-কর্মচারী, গুটি কয়েক নেতা নামধারী সাংবাদিক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও জনপ্রতিনিধিদের কপালে। কিন্তু জুটলনা হত দরিদ্রদের কপালে। দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধীরা মনে করেছেন, ভিক্ষুককে হাতি উপহার দেয়ার চাইতে, যারা হাতি রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবে তাদেরকে রিলিফের মাংস উপহার দেয়া শ্রেয়। কক্সবাজারের চকরিয়ায় বেশুমার কলম সৈনিক জন্ম নিয়েছে। তারা বেশিরভাগই কলমজীবি। লেখাপড়ার যোগ্যতা যাই থাকনা কেন তারা সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। প্রশাসন মানবিক কারণে এসব সাংবাদিকদের সমালোচনার রাহুঘ্রাস থেকে রক্ষা পেতে ১০/১২টি দুম্বার প্যাকেট ২/৩ জন আলোচিত সাংবাদিক নেতার মাধ্যমে সব সাংবাদিকদের মাঝে বিতরণের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। তবে সাংবাদিকদের নামে আনা দুম্বার মাংস সিংহভাগ সাংবাদিকদের মাঝে বিতরণ করা হয়নি। আবার এসব মাংসের কথা অনেকে ঘৃনা ভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। ব্যক্তিগতভাবে হলফ করে বলতে পারি সাংবাদিকতা জীবনে কোনদিন উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক দেয়া দুম্বার মাংস বাড়িতে নিয়ে আমার কোন আওলাদকে খাওয়াইনি। যতদিন বেঁচে আছি ততদিন বিপণœ মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে নিজের পরিবার-পরিজনকে খাওয়ানোর চেষ্টা করিনি। ভবিষ্যতেও করার ইচ্ছা নাই। লজ্জা লাগে একটি কারণে সাংবাদিকরা অপরের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। কিন্তু সামান্য রিলিফের দুম্বার মাংসের প্যাকেট নিয়ে সাংবাদিক নেতারা কেন- মাছি মেরে হাত কালা করতে গেলো।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একজন সচেতন ব্যক্তি মন্তব্য করতে দেখেছি, প্রেস ক্লাবের এতিম মিসকিনদের জন্য সৌদি সরকারের দুম্বার প্যাকেট দিয়েছে। আসলে কি আমরা সবাই এতিম-মিসকিন? সামান্য দুম্বার মাংসের লোভ আমরা সামলাতে পারলাম না। মনে হয় চকরিয়া উপজেলায় ১৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার জন্য দেড় হাজারের মত দুম্বার প্যাকেট বিতরণ করেছে। এ পরিমাণ দুম্বার মাংস দেড় হাজার হতদরিদ্রদের মুখে জুটেছে কিনা সন্দেহ রয়েছে। কারণ সবই ইউনিয়নে একই বক্তব্য দুম্বার মাংস বিতরণ করলেও যারা পাওয়ার হকদার তারা পায়নি। হয়তো অনেক নেতা-কর্মীদের ফ্রিজ অনুসন্ধান করলে রিলিফের দুম্বার মাংস এখনও পাওয়া যাবে। মনে হচ্ছে রমজান শেষে ঈদুল ফিতর পর্যন্ত এ মাংস দিয়েই তারা ভুরিভোজ করে যাবে।

তারিখঃ ২২ মে ২০১৯