আজাদ মনসুর:
মাঠ পর্যায়ে সাংবাদিকতা করা যদিও কঠিন। ফলে এ পেশাকে এক সময় মানুষ অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। এ পেশার লোকজনকে অনেকেই জাতির বিবেক বলে থাকেন। ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকতার সাবলীল মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। শুধু দেশ, জাতি নয়, বিশ্ব উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও সাংবাদিকদের অগ্রণী ভূমিকা দেশে দেশে স্বীকৃত। সাধারণ জনগণের এ মহান পেশার প্রতি প্রগাঢ় আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। কারণ এ সমাজের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরবারির ন্যায় কলমের শানিত অস্ত্র একমাত্র সাংবাদিকরাই ধরে থাকেন। তাই সে সময়ে এ পেশাটির প্রতি মানুষদের দরত ছিল বেশি। বিভিন্ন ধরনের ঘটনা প্রবাহের সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি পত্রিকার মাধ্যমে দেশের বর্তমান অবস্থা ও করণীয় বিষয়ও অহরহ দিক-নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। তাই তো প্রকৃত সাংবাদিকের কোন দেশ কাল পাত্র নেই। তারা জগৎ সভার এক একজন পরীক্ষক ও নিরীক্ষক। সামাজিক অনাচার ও বৈপরিত্যের বিরুদ্ধে সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা, মানবতার অতন্দ্র প্রহরী সাংবাদিকরা দেশ ও জাতির শেষ ভরসা। প্রায় দু’দশকের সাংবাদিকতার ইত্যকার বিষয়ে অভিজ্ঞতা সম্বলিত ধারাবাহিক লেখা সম্মানিয় পাঠকদের সামনে আসছি ‘কক্সবাজারের সাংবাদিকতার যতকথা’ নামক শিরোনাম নিয়ে। ইতো মধ্যে প্রথম পর্ব নিয়ে অনেকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, মোবাইল নাম্বারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে লেখাটি পড়ে মতামত প্রকাশ করেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য। তাদের ধন্যবাদ। আজ লেখাটির দ্বিতীয় পর্ব।

মফস্বল থেকে এসে সাংবাদিকতা করা অনেক কষ্ট সাধ্য হতো। তাই কক্সবাজারে ভাড়া বাসা করে থেকে যেতাম। আবার অনেক সময় কক্সবাজার প্রেসক্লাবের রেস্ট হাউজেও অনেক বছর ভাড়ায় থাকা হয়েছে। কক্সবাজারে কর্মরত সাংবাদিকদের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে এখানকার সাংবাদিকদের নীতি র্নিধারকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা বাঞ্চনীয়। কক্সবাজার সাংবাদিক আবাসন প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমদ যদিও সে সময়ে আশার আলো জাগিয়ে ছিলেন আবাসন প্রকল্পের সদস্য করার। কিন্তু সাংবাদিক বদিউল আলমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এক্কান ছোঁড় জাগা, কজন আঁড়িব, চাইয়েনা হতা কঁই (ছোট্ট একটা জায়গা, কইজনই বা ওই জায়গাতে সংকোলন হবে! ঠিক আছে বিবেচনা করে দেখি)। আবেদনের সব নথি যতনে রয়েছে। বিবেচনাতেই আটকে গেল সদস্য পদ। এভাবেই কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। হলো না কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সদস্য লাভ, হলো না কক্সবাজার আবাসন প্রকল্পের সদস্য লাভের সুযোগ। অর্থ্যাৎ বুঝাতে চাচ্ছি যে সকল সিনিয়র নামধারী প্রবীণ সাংবাদিক অগ্রজ আমাদের প্রাণের ভাইয়েরা রয়েছেন তারা কোন ভাবে চাইনি যে সে সময়কার আমরা কোন তরুণ সাংবাদিক সাবলম্বী না হই। চরম ক্ষোভে ওই সংগঠন দু’ইটির সদস্য পদ অধরায় কক্সবাজার সাংবাদিক সংসদ (সিএসএস) এর জন্ম। সিএসএস এর একটিই সংকল্প যতদিন সিএসএস থাকবে ততদিন সাংবাদিকতার কল্যাণে কাজ হবে। এটা কেবল সাংবাদিক সংগঠন নয় এটা একটি বহুমূখি প্রতিষ্ঠান।

সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার ডানপন্থি একটি ট্রেড ইউনিয়ন ভিত্তিক সাংবাদিক সংগঠন। ওই সংগঠনে আমি কাগজে কলমে একজন সদস্য। সাধারণ সভা, ইফতার পার্টি, পিকনিক, বিভিন্ন দিবস, স্মরণানুষ্ঠান ছাড়া কোন প্রোগ্রামে ডাকা হয়না। দেখা গেছে অনেক কল্যাণমূলক উদ্যোগ নেয়া হলেও সেখানে গুটিকয়েক পদধারী সদস্য ছাড়া বাকিদের ডাকা হয়না। এখানেও সুবিধাবাধিদের ষড়যন্ত্রের ঘ্রাণ পাচ্ছি। তারা খুব গোপনে বসেন ওই ধরনের সভা করতে। আরে, একেক করে মাথা বিক্রি করবেন আর কল্যাণমূলক কোন কাজে অন্তত পরামর্শের জন্যও ডাকবেন না তা কি হয়!

কি হিসেবে সিনিয়র মূল্যায়ন করেন একটু জানাবেন? আপনারা তু জানেন বৈরি পরিবেশ চলছে সাংবাদিকতার। বিশেষ করে ডান ঘরনার সাংবাদিকদের। কই একটা পত্রিকা তু দিতে পাচ্ছেন না সদস্যদের। পেলেও একজনে ৪টি করে নিয়ে বসেন। অনেক অনেক নজির আছে। তাহলে মাধ্যম না পেলে সাংবাদিকতা করবে কোন মাধ্যমে? আপনারা যারা সিনিয়র বলে দাবী করছেন, আপনাদের মধ্যে অনেকের কাছে কোন পত্রিকা নেই। কিন্তু সুযোগ-সুবিধা এবং সিনিয়র বলে সবখানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন না? কাজের মূল্যায়ন ও সাংবাদিকতার বয়স মূল্যায়নে নিবেদিত হবেন আমি আশাবাদি। ভাল লেখিয়ে ও সাংবাদিকতার বয়স ও তার কর্মজীবনের কারণে কক্সবাজারের সাংবাদিক, সংবাদপত্র ও সংবাদসেবীদের কল্যানে কোন স্বীকৃতি ভবিষ্যতে কাজে আসলে তাকে মূল্যায়ন করুণ এবং কাছে টানার চেষ্টা করুন। এভাবে চলতে থাকলে দেখবেন আপনাদের নামও একদিন মুছে যাবে। আপনারা মূল্যায়ন করতে জানলে প্রজন্ম সাংবাদিকরাও একদিন আপনাদের সম্মান করবে যা সিএসএস নামক সংগঠনটি দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা দেখেছি অনেক সিনিয়র ভাইয়েরা আপনাদের সম্মানিত করার সময় মঞ্চে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন। আমরা তু একে অন্যের খুঁত খোঁজতে তৎপর তাই না? যা কিনা আমাদের হীণমন্যতারই বহিঃপ্রকাশ। আমরা সবাই জানি চেয়ার কোনদিনের জন্য চিরস্থায়ী নয়, যেমনি নয় আমরা মানব জাতিও। একদিন চলে যাব ওপারে যেখান থেকে কেউ কোন দিনই ফিরেনা। কিন্তু প্রতিষ্ঠান বা চেয়ারটি অন্যদের সেবায় থেকে যাবে। এহেন আচরণে আমাদের সব কর্ম অতিত হয়ে যাবে। কেউই মনে রাখবেন না। সুতরাং করার সুযোগ দিলে এর ধারাবাহিকতা থাকবে। অনেক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয় জানি, তবে ওখানে থেকে বেঁচে নিন ভাল ও সৃজন কাজ করা সংগঠনটির কর্মঠ এবং যোগ্যতা সম্পর্ণ কর্মীদের। একটা বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে তৈলমর্দন ও নব দেয়া এই দু’টি বিষয় মহামারিতে রূপ নিয়েছে। কাউকে তৈল মালিশ ও নব দিতে না পারাটাও বাড়তি অযোগ্যতা হিসেবে পরিগনিত হচ্ছে। যা মোটেও কাম্য নয়। এখন দেশের সবখানে এহেন চর্চার প্রতিযোগিতা চলছে।

দু’টি পত্রিকা থেকে আমি প্রায় দু’লাখ টাকা বেতনের বকেয়া পাচ্ছি। ঘুঁনে ধরা আমাদের বিবেক হয়ে উঠছেনা প্রতিবাদি হয়ে। সাংবাদিক তু লজ্জা চরমের মাথা খাবে এই ঝুঁকিতে প্রকাশ করছিনা আসলে স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিকদের বৈরি পরিবেশের কথা। অনেক পদের সাংবাদিকদের তু বেতন দেয়াও হয়না। হাতে গুনা কয়েকটা পত্রিকায় দিলেও নূন্যতম কয়েকটা পদবী ছাড়া বাকিদের তেমন সম্মানি নেই। যারা সাংবাদিক নেতা তারা নিজেদের সুবিধা নিয়ে বসে থাকে আর মাঠের সাংবাদিকদের কোন খোঁজ নেয়ার দরকার মনে করেন না। তাদের পরিবারের কোন অবস্থা। একটা ভিজিটিং কার্ড, পত্রিকার লগো সম্মলিত আইডি কার্ড নিয়ে কোন রকম বেঁচে থাকা। এভাবে ছেড়ে দেয়া হয় মাঠে। এভাবে চলতে পারেনা একটি শিল্পের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করা শ্রমিকদের। কথা বলার লোক নেই সমাধানের রাস্তা কোথায়? কলম ধরেছি যখন, লেখাটি ধারাবাহিক চলতে থাকবে অবশ্যই উক্ত বিষয়গুলোও তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ। আপনারা যারা বিবেকবান সিনিয়র সাংবাদিক যারা বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিক নেতা বলে পরিচয় দিচ্ছেন এটা কাদের বলে? নিশ্চয় আপনার পেছনের সারিতে যারা আছে তাদের ক্ষমতা বলে, আপনার পেছনের সারিতে কেউ না থাকলে আপনি কিন্তু একা। বুঝতে হবে…

যাক, যা বলছিলাম। কক্সবাজার সাংবাদিক সংসদ (সিএসএস) এর বিভিন্ন কর্মসূচিতে জেলা ও জেলার বাহিরের বিভিন্ন আলোকিত বিশিষ্টজন অতিথি হয়ে সিএসএসকে ধন্য করেছেন। প্রধান অতিথি হয়ে মাননীয় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সিএসএস সাংবাদিক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রশিক্ষণার্থীদের সনদ বিতরণ করেন। এছাড়াও তৎকালিন জেলা প্রশাসকবৃন্দ, পুলিশ সুপারবৃন্দ, জেলা পরিষদ এর প্রধান নির্বাহীবৃন্দ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দসহ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ আমাদের বিভিন্ন প্রোগাম সফল ও সার্থক করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে স্পন্সর’র মাধ্যেমে সহযোগিতা করেছেন ডায়নামিক ল্যান্ডমার্ক লিমিটেড, কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেষ্ট হাউজ মালিক সমিতি, কক্সবাজার পৌরসভা, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন, কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থা, ওয়েসিস হোটেল এন্ড রিসোর্ট, ইউনাইটেড এয়ার ওয়েজ লিঃ, মিডলকক্স ইউনাইটেডসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ।

কষ্ট লাগছে কক্সবাজার সাংবাদিক সংসদ ‘সিএসএস’ অনেকগুলো নথি ভিজে গেছে। যেখানে নোটিশ বুক, কার্যবিবরণী, সদস্যদের ফরম, পেপার কাটিং, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে করা স্থিরচিত্রসহ অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। ওগুলো থেকে মোটামুটি ভাল আছে এমন কাগজগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

কক্সবাজার প্রেক্ষাপটে অনেকগুলো পেশাগত সমস্যার অন্ত নেই। তারপরও যেন নিজের পেশার মানুষদের নিয়ে কাজ করার প্রত্যয়ে ছুঁটে চলি সদা। মানবিক সৌন্দর্যে অবিচল পথচলা সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার জন্য যে মানুষগুলোর শ্রম, মেধা, মনন ও প্রজ্ঞার কথা কে জানত? প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবদুল্লাহ নয়ন, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও একাধিকবার সভাপতির দায়িত্বে থাকা আজাদ মনসুর’র স্বপ্ন আজ আলোকোজ্জ্বল। স্বীকৃতির জন্য বসে থাকাটা বুকামি। কাজ করতে হবে কাজ। এ সময়ে কে কি বলছে তা দেখার সময় কই? সুন্দর চিন্তার কাজগুলো যেরকমই হোক সমাজে সম্মানিত হলেই চলে। এখানে বলে রাখি, এই প্রতিষ্ঠানের একধম সহযোগি সদস্য হয়ে যারা পেছনের সারিতে ছিলেন আজ তারাই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক্স ও অনলাইন মিডিয়াতে কক্সবাজারকে আলোকিত করছেন। তারা যদি এই সংগঠনের প্রতি নূন্যতম দুর্বল না থাকে বা সংগঠনটির কোন কাজে সফলতার সাথে এগিয়ে না আসে কিংবা সময় না দেয় তাহলে ধরে নিব তারাই জাতির কলংক। তাদের থেকে কোন কিছু আশা করা নচেৎ বুকামি ছাড়া কিছু হতে পারেনা। নিশ্চয় জন্মদাতাদের ভুলতে পারেন না কেউ, যারা ভুলেন তাদের জন্ম নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাই যাদের দ্বিতীয় জন্ম দিয়েছেন শিক্ষক সমাজে পরিচিতি করে দিয়েছেন কোন প্রতিষ্ঠান এদের ভুলা মানে জন্মদাতাদের ভুলার সামিল। তাই সামনে ‘সিএসএস’র পুরনো অনেক সদস্য ও নতুন সদস্যদের সম্মিলনে একটি দৃষ্টান্ত ছড়ানো অনুষ্ঠানের আয়োজন হবে। এক দশকপূর্তিতে আমরা আসছি নতুন হয়ে…

আরও বহুদূর, বহুদূর যেতে হবে সিএসএস’কে। উপরোক্ত ধারাবাহিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি সাংবাদিকতার মানোন্নয়নের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন, সামাজিক দায়বোধ থেকে মানবকল্যাণ মূলক কাজ, সিএসএস’র প্রত্যেক সদস্যের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা, সিএসএস ট্রাস্ট, সিএসএস আবাসন প্রকল্পসহ ইতোমধ্যে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত আজ সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত কর্মকার্তাদের প্রাণিত করেছে। একদিন এগুলো সফলতা আসবেই। হয়তো বৈরি পরিবেশ পেরিয়ে স্ব-গৌরবে ভাস্বর হবে সিএসএস। তা না হয় অন্যদিন বলি। এ সময়ে শুধু সাফল্যের কথাগুলোই স্বরণ করে দেয়ার সময়। চলবে…

আজাদ মনসুর (এম.এ, এলএল.বি)
আইটি স্পেশালিষ্ট, প্রণেতা-কক্সবাজার সাংবাদিক কোষ
সভাপতি-কক্সবাজার সাংবাদিক সংসদ (সিএসএস)
azadcox90@gmail.com ০১৮৪৫-৬৯ ৫৯ ১৬