শাহীন মাহমুদ রাসেল

ঈদুল ফিতর সামনে রেখে কক্সবাজারের বিভিন্ন হাটবাজারে ১০০০, ৫০০ ও ১০০ টাকার জাল নোট ছড়িয়ে পড়েছে। আসল-নকল বুঝতে না পেরে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন। নকল টাকায় মালামাল বিক্রি করে বিক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই এলাকায় ১৩ মে বিকেলে দুইটি মুরগি বিক্রি করতে আসেন সদর উপজেলার লিংকরোড গ্রামের সলিম উদ্দিন (৬১)। এক যুবক তাঁর কাছ থেকে ৮০০ টাকায় সবগুলো মুরগি কিনে ১০০০ টাকার একটি নতুন নোট ধরিয়ে দেন। নোটটি পকেটে নিয়ে বৃদ্ধ যুবকটিকে ২০০ টাকা ফেরত দেন। এরপর বৃদ্ধ ওই ১০০০ টাকার নোটটি নিয়ে যান শহরের হকার মার্কেটে। সেখানে ওই টাকায় প্রয়োজনীয় পোশাক কিনতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন সেটি জাল। সলিম বলেন, ছেলেমেয়েদের জন্য নতুন জামাকাপড় কিনতে বাড়ির মুরগিগুলো বিক্রি করেছিলাম। কিন্তু প্রতারক চক্র সে ইচ্ছা পূরণ করতে দিল না। এর বিচার আল্লাহ করবেন।

সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের পশ্চিম লারপাড়া এলাকার হাবিবের পুত্র রহিম বৈদ্য অসহায় দিনমজুর ও তরকারী ব্যবসায়ী মোবারক আলীর সাথে জাল টাকা দিয়ে প্রতারণা করেছেন। প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগও দেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী মোবারক আলী।

১৬ মে রামু উপজেলার চৌমুহনীতে কেনাকাটা করতে এসে চারটি জাল ১০০০ টাকার নোটসহ এক যুবক ধরা পড়েন। লোকজন যখন পুলিশে খবর দিতে চেষ্টা করছিলেন, তখন সুযোগ বুঝে ওই যুবক পালিয়ে যান। শহরের পান বাজজার রোড এলাকার তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, ১৫ মে এক ব্যক্তি এক হাজার ৭৫০ টাকার কাপড় কিনে তিনটি ৫০০ টাকার নোটসহ আরও ২৫০ টাকা দিয়ে চলে যান। পরে টাকা গুনতে গিয়ে একটি ৫০০ টাকার জাল ধরা পড়ে। ঝামেলা এড়াতে ওই জাল নোটটি পুড়িয়ে ফেলেছি।

স্থানীয় লোকজন বলেন, শহরের নিউ মার্কেট, পান বাজার সড়ক, পৌরসভা মার্কেট, বাজারঘাটাসহ বিভিন্ন বিপণিকেন্দ্রে প্রায় প্রতিদিনই জাল নোট নিয়ে কেনাকাটা করতে এসে নারী-পুরুষেরা ধরা পড়ছেন। কিন্তু তাঁদের কাছে দুই বা একটি নোট পাওয়ায় ও পুলিশি ঝামেলার কারণে এ নিয়ে খুব একটা হইচই করা হয় না। কক্সবাজার বণিক সমিতির সহসভাপতি বকুল হোসেন বলেন, ঈদ সামনে রেখে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র বাজারে ১০০০, ৫০০ ও ১০০ টাকার জাল নোট ছড়াচ্ছে। বেকার যুবক ও নারীরা এ চক্রের সঙ্গে জড়িত হয়ে ক্রেতা সেজে এসব জাল নোট বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে জাল নোট শনাক্ত করার কোনো মেশিন না থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতা দুই পক্ষই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। আর মেশিন না থাকার এ সুযোগ নিচ্ছে প্রতারক চক্র।

কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, বাজারে জাল নোট প্রতারক চক্রসহ যে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম ঠেকাতে তাদের সার্বক্ষণিক ফোর্স তৎপর রয়েছে।

কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বলেন, ঈদ সামনে রেখে ইয়াবা ও জাল নোট ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এখন বিপণিকেন্দ্রগুলোতে পুলিশের নজরদারি বাড়িয়ে জাল নোট পাচারকারীদের ধরার চেষ্টা চলছে। কোরবানির পশুহাটে জাল নোট শনাক্তের যন্ত্র বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।