মোঃ নিজাম উদ্দিন, চকরিয়া:
চকরিয়ায় সেবা সংঘ আশ্রমের নাম দিয়ে ভুয়া প্রচারপত্র ছাপিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে এক সাধুবেশীর বিরুদ্ধে। শ্রীমৎ রেবতী ব্রহ্মচারী প্রকাশ টুনু নামের ব্যক্তি সাধু সেজে বিভিন্ন প্রান্তে চাঁদাবাজিসহ এলাকায় নানান অপকর্ম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেন ডুলাহাজারা ইউনিয়নের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। তার বর্তমান বাড়ি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে।
সরেজমিনে যাচাই করতে গিয়ে তার বিরুদ্ধে উঠে আসে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য। তার প্রকাশিত চাঁদা উত্তোলনের হ্যান্ডবিলে উল্লেখিত ”অদ্বৈতানন্দ সেবা সংঘ আশ্রম” নামের কোন আশ্রমের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সাধুরূপীর এ ব্যক্তির বিরুদ্ধে উঠে আসে, পুত্রের অনুপস্থিতিতে জোরপূর্বক পুত্রবধূর সাথে যৌন মিলন করতে গিয়ে তার লিঙ্গ কর্তনের ঘটনাও।
খবর নিয়ে জানা গেছে, বিগত কয়েক বছর আগে একই ইউনিয়নের রংমহল গ্রামের একটি আশ্রম থেকে বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে তাকে বের করে দেওয়া হয়। রংমহল হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের পক্ষে পরিমল দে ও হিন্দু পাড়ার সভাপতি মিন্টু দে জানান, সাধুবেশী শ্রীমৎ রেবতী ব্রহ্মচারী একজন ভন্ড ও প্রতারক। প্রকাশ অযোগ্য এমন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ অভিযুক্ত এ ব্যক্তি পরিচালিত কাল্পনিক আশ্রমের ৯ম বার্ষিক ধর্মসভার হ্যান্ডবিলে সভাপতি নাম উল্লেখ রয়েছে চট্টগ্রাম জর্জ কোর্টের এডভোকেট শ্রী কাঞ্চন বিশ্বাস।
এ ব্যাপারে এডভোকেট কাঞ্চন বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শ্রীমৎ রেবতী ব্রহ্মচারী নামের এক ধর্মীয় সাধু ওটি পরিচালনা করেন বলে শুনেছি। তবে অদ্বৈতানন্দ সেবা সংঘ আশ্রমটি কোথায় বা দেখতে কি রকম তিনি জানেন না। অপরদিকে চাঁদা উত্তোলনে ব্যবহৃত হ্যান্ডবিলের ভেতরে ও বাইরে ব্যবহৃত হয়েছে ভিন্ন-ভিন্ন তারিখ। এখানে ৯ম তম ধর্মসভা উল্লেখ থাকলেও ইতিপূর্বে কখনো তার নেতৃত্ব কোন ধর্মসভা হয়নি বলে স্থানীয়রা জানান। হ্যান্ডবিলে অর্ধ শতাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তির নাম উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু তারা অনেকের সাথে কথা হলে এ ব্যপারে কিছুই জানে না বলে জানান।
তৎমধ্যের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামের ডাঃ বাবুল দে বলেন, হ্যান্ডবিলে আমাকে না জানিয়ে আমার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ আমি এতে সংশ্লিষ্ট নই এবং আমি জানিও না। ধর্মসভা ও আশ্রমের নাম দিয়ে মানুষকে ধুঁকা দিয়ে চাঁদাবাজি করে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ করছে সে। ধর্মের নামে এ ভুয়া কর্মকাণ্ড ও প্রতারণা অত্যন্ত দুঃখজনক জানিয়ে তিনি সাধু নামধারী এ প্রতারকের বিরুদ্ধে শাস্তি দাবী করেন।
ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পূজা উদযাপন কমিটির সহসভাপতি বাপ্পি ভট্টাচার্য জানায়, বিভিন্ন এলাকার সম্মানি মানুষ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে ভুয়া হ্যান্ডবিল ও নিজের নামে কাল্পনিক ভিজিটিং কার্ড বানিয়ে চাঁদা উত্তোলন করছে এ সাধুরূপী। ভুয়া ভিজিটিং কার্ড দেখিয়ে হিন্দু প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে ধর্মের নামে চাঁদা আদায় করে প্রতারণা করে যাচ্ছে।
বাগান পাড়ার ব্যবসায়ী সজল দে জানায়, ধর্ম বিক্রি করে অপকর্ম ছাড়া তার কোন পেশা নেই। সাধুবেশী হলুদ কাপড় পরিধান করে দিনরাত বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে চাঁদা উত্তোলন করছে সে। সাধারণ লোকজন সরল বিশ্বাসে তাকে চাঁদা প্রদান করছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা হলে মাছ মাংস নিয়ে বাড়ি ফিরে এ সাধুরূপী প্রতারক। সমাজে তার প্রকাশ অযোগ্য বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় চরম অতিষ্ঠ বলে দাবী সজল দে’র। এসব অভিযোগে ইতিপূর্বে তাকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের কাছে প্রতারণা পূর্বক চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার করে শাস্তির দাবী জানায় ডুলাহাজারা ইউনিয়নের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শ্রীমৎ রেবতী ব্রহ্মচারী প্রকাশ টুনু বলেন এলাকার লোকজন আমার সাথে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আমার ধর্মসভার দিন এলাকাবাসী আমার নির্মিত পেন্ডেল ভাঙ্গচুর করে। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে সে।
স্থানীয় ডুলাহাজারা ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরিদুল আলম জানায়, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মের কথা আমি অবগত আছি। হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে এ ব্যপারে আলোচনা করে প্রশাসনের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলেও তিনি জানান।