মোহাম্মদ হোসেন,হাটহাজারী :
বাজার মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে হাটহাজারীর কবুতর হাটার মান্নান ফল বিতানে অভিযান চালিয়ে ফল পাকানোর কেমিক্যালসহ দুই দোকানীকে আটক করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। শনিবার (১৮ মে) বিকাল সাড়ে ৪ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত পরিচালিত এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন।
রুহুল আমিন বলেন, হাটহাজারী পৌরসভার কবুতর হাটার মান্নান ফল বিতানে অভিযান কালে Ripen-15 নামক একটা কেমিক্যাল ব্যবহার করে ফল পাকানোর প্রমান পাওয়া যায়। কর্মচারীরা প্রথমে অস্বীকার করে, পরে তল্লাশি চালিয়ে দোকানের ফলস সিলিং এর উপর স্প্রে মেশিন সহ কেমিক্যাল পাওয়া যায়। পরে দোকানপাট কর্মচারীরা অপরাধ স্বীকার করেন এবং ক্ষমা চান।

প্রকাশ্যেই মেশানো হচ্ছে কার্বাইড জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ। ফলে কলার বাহ্যিক রং ১২ ঘণ্টার মধ্যেই হলুদ ও আকর্ষণীয় আকার ও রং ধারণ করছে। বিষাক্ত যে কেমিক্যাল মিশানো হচ্ছে তা মানবদেহের জন্য মারাত্নক ঝুঁকিপূর্ণ। কেমিক্যাল মিশ্রিত কলা খেয়ে জীবনহানির সম্ভাবনাও বেশি।মাহে রমজানে মাসে কলার প্রচুর চাহিদার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসাধু কলা ব্যবসায়ীরা এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হাটহাজারী পৌর সদরের হাটবাজারে প্রতিদিন ৫/৬ ট্রাক কলা বিভিন্ন এলাকা থেকে আসে। পৌর সদরের হাটবাজারগুলো ছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাজারগুলোতে কলার দোকান রয়েছে ২০-২৫টি। এসব কলার দোকানে প্রতিদিন কলা পাকানো এবং কলার রং আকর্ষণীয় করার জন্য কার্বাইড বা কেমিক্যাল জাতীয় পদার্থ মেশানো হচ্ছে।এসব হাটবাজারে যেসব কলা বিক্রি করা হচ্ছে তার শতভাগ কলাই বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো। খুব তাড়াতাড়ি যাতে এসব কলা পেকে যায় তাই ব্যবসায়ীরা এই কেমিক্যাল মিশিয়ে থাকেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলা ব্যবসায়ী জানায়, কলায় এসব পদার্থ মেশালে কলা দ্রুত পাকে এবং কলা দেখতে খুব সুন্দর দেখায়, তাই কাস্টমাররা এসব কলা কিনে নিয়ে যায়। এতে আমাদেরও লাভ হয় বেশি। কৃত্রিমভাবে পাকানো কলা খুব দ্রুত পচেও যায়।এসব পদার্থ মেশানো কলা খেলে যে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে এই কলা ব্যবসায়ী বলেন, সবাই মেশায় তাই আমিও মেশাই। কেমিক্যাল মেশানোর প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিভু দে জানান, কলা আমরা অনেক দূর থেকে নিয়ে আসি। আনার পর একটি বদ্ধ ঘরে রেখে রাসায়নিক ছিটানো হয়। ছিটানোর ফলে এই কলা জলদি পেকে যায়। আমাদের বিক্রি করতেও সুবিধা হয়। তাই তারা একসঙ্গে কলা পাকাতে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করেন।

ক্রেতা হারিমা বেগম বলেন, বর্তমান ইউএন ও রুহুল আমিন হাটহাজারীতে যোগদানের পর বাজারে ভেজাল অনেকটা কমে গেছে,সব সময় এই রকম অভিযান এই বাজারে প্রয়োজন ছিল। তিনি আরো বলেন,যারা খাদ্যদ্রব্যে এসব কেমিক্যাল মিশায় তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে দিনদিন এসব বেড়েই চলেছে। পবিত্র রমজান মাসেও থেমে নেই এদের কর্মকাণ্ড। এসব কেমিক্যাল মিশ্রিত খাবার খেয়ে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তও হচ্ছে।এ বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বিভিন্ন চিকিৎসকদের সাথে। তারা বলেন, বিষাক্ত এসব দাহ্য পদার্থ মিশানো কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং সাথে সাথে বমিভাব ও ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কেমিক্যাল মিশ্রিত কোন খাদ্য গ্রহণ করলে তার প্রভাব পড়ে লিভার ও কিডনীর উপর।তিনি বলেন, ওইসব খাদ্য গ্রহণের পরে তা দাহ্যে পরিণত হওয়ার পর নিঃসারণ ঘটে লিভার এবং কিডনির মাধ্যমে। ফলে কেমিক্যাল মেশানো খাদ্য শরীরের এই দুটি অংশের উপর প্রভাব ফেললেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিডনিকেই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ করে। এ ব্যাপারে সংশ্লীষ্ট কতৃপক্ষের আরো জোরালো হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ক্রেতারা।