এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া

চকরিয়ায় আবাদি জমির পাশাপাশি শতবছরের পুকুর জলাশয় ভরাট করে চলছে বহুতল ভবন নির্মাণের অলিখিত প্রতিযোগিতা। নিয়ন্ত্রনহীন অপরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বহুতল ভবন ও স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত থাকায় উপজেলার জুড়ে হ্রাস পেতে চলছে আবাদি জমির পরিমান। পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা স্থানীয় প্রশাসন পুকুর জলাশয় ভরাট ও আবাদি জমি দখলের প্রতিযোগিতা বন্ধে কোনো ধরণের ব্যবস্থা না নেয়ায় বর্তমানে উপজেলায় কৃষি খাত চরম হুমকির মুখে পড়েছে।

প্রশাসনের নিল্পিতার সুযোগে সম্প্রতি সময়ে চকরিয়া পৌরসভার আটনম্বর ওয়ার্ডের নামার চিরিঙ্গাস্থ চেয়ারম্যান পাড়ায় স্থানীয় কাউন্সিলর মুজিবুল হক মুজিব একটিপক্ষ থেকে আংশিক অংশ ক্রয়ের পর স্থানীয় তিনশত পরিবারের মালিকানাধীন শতবছরের একটি পুকুর ভরাটের অপচেষ্ঠা শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া পৌরসভার নামার চিরিঙ্গাস্থ চেয়ারম্যান পাড়ার বাসিন্দা ও পৌরসভা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো.ওয়ালিদ মিল্টন। তিনি বলেন পরিবেশ সংরক্ষন আইন অনুযায়ী পুকুর জলাশয় ভরাট করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু বিষয়টি জেনেও স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর কতিপয় ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু অংশ ক্রয় করে বর্তমানে চকরিয়া পৌরসভার নামার চিরিঙ্গা তিনশত পরিবারের অংশীয় শতবছরের মুন্সি পুকুরটি ভরাট করার জন্য মেতে উঠেছে। তিনি একটি অংশ ক্রয় করলেও অপর ২৯৯টি পরিবারের অংশকে তোয়াক্কা করছেনা। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে এলাকাবাসির পক্ষে আনোয়ারুল মহসিন নামের এক সচেতন নাগরিক বাদি হয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দপ্তরে লিখিত অভিযোগও করেছেন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন মহল দাবি করেছেন, অপরিকল্পিত নগরায়নের কারনে উপজেলা ও পৌরসভার প্রতিটি অঞ্চলে আবাদি জমি সংকটের ফলে আগামীতে চাষাবাদ কমে যেতে পারে। এ অবস্থায় উপজেলায় চরম খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যবস্থাও হুমকির মুখে পড়েছে।

পরিবেশবাদিরা জানিয়েছেন, অপরিকল্পিত পুকুর ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণের কারনে যে কোন মুহুর্তে এসব স্থাপনা ধ্বসে পড়ে বড় ধরণের দূর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে সরকার চকরিয়া উপজেলার বাণিজ্যিক শহর ও উপজেলা পরিষদসহ আশপাশ এলাকা নিয়ে পৌরসভা হিসেবে অনুমোদন দেন। মুলত পৌরসভা ঘোষণার পর থেকে এলাকার আবাদি ও অনাবাদি জমির মুল্য বাড়তে থাকতে চম্বুকগতিতে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারনে একই সাথে উপজেলার প্রায় ইউনিয়নের বেড়ে যায় আবাদি জমির মূল্য।

সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালের পর ঘূর্ণিঝড় ও ৯৫ সালের ভয়াবহ বন্যায় আতংকিত জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের অসংখ্য পরিবার নিজ এলাকার জমিজমা ও ভিটেবাড়ি বিক্রি করে চকরিয়া উপজেলায় এসে বসতি স্থাপন শুরু করেন। স্থানীয়দের মতে, এ উপজেলায় বহিরাগত এসব জনগনের অবাদ অবস্থানের কারনে দিনদিন বেড়ে যায় জমির মুল্য।

জানা গেছে, চকরিয়া পৌরসভার হিসাব মতে, ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭৭ হাজার ৪৯৮ জন নাগরিক স্থায়ী বাসিন্দা বনবাস করছেন এমন সত্যতা নিশ্চিত করলেও পৌরশহরের বেশিরভাগ এলাকায় বগিরাগতরা জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে বসতি গড়ে তুলে রাতারাতি নাগরিকত্ব নিয়ে বসবাস শুরু করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, বহিরাগত এসব নাগরিকদের অবাদ স্থাপনা নির্মাণের কারনেই মুলত বর্তমানে পৌরসভা ও উপজেলা জুড়ে আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। একের পর এক ভরাট হচ্ছে পুকুর ও জলাশয়। এ অবস্থার কারনে উপজেলায় ভবিষ্যতে কৃষি ব্যবস্থা চরম হুমকির মুখে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পৌর এলাকায় নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে সরকারি এ নিয়ম উপেক্ষা করে সংশ্লিষ্টরা জমিনের সম্ভাব্যতা যাচাই বাচাই না করে নকশা অনুমোদন করেন। এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সাময়িক লাভবান হলেও তাদের অলিখিত এ সুযোগ সুবিধার কারনে অনেকটা বাধাহীন ভাবে বহিরাগতরা আবাদি জমিতেই বহুতল ভবন অট্টালিকা নির্মাণ করে চলছে।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি বর্গাচাষী সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন পুতু বলেন, অপরিকল্পিত নগারায়নের ব্যাপারে প্রশাসন এখনই ব্যবস্থা না নিলে আগামীতে উপজেলায় চাষাবাদের জমি খুঁেজ পাওয়া যাবে না। ফলে খাদ্য উদ্বৃত্ত এই উপজেলায় সৃষ্টি হবে চরম খাদ্য ঘাটতি। কৃষি ব্যবস্থার স্বার্থে নিয়ন্ত্রনহীন এ প্রতিযোগিতা বন্ধে জনমত গড়ে তোলতে হবে।

চকরিয়া উপজেলার প্রতিটি অঞ্চলে আবাদি জমি কমে যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ বলেন, বিষয়টি কৃষি খাতের জন্য চরম অশনি সংকেত। এব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্যোগ নেয়া হবে।