আব্দুর রহমান হাশেমীঃ
পবিত্র মাহে রমজান মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে মানবজাতির জন্যে এক বিশেষ রহমত। সিয়াম বা সওম আরবি শব্দ। যার বাংলা হলো ‘বিরত থাকা’। রোজা শব্দটা বাংলায় ব্যবহৃত হলেও মূলতঃ ফারসি শব্দ।
ইসলামি শরিয়াতের পরিভাষায় নিয়তের সহিত সুবেহ সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার ও সকল প্রকার যৌন-সম্ভোগ হতে বিরত থাকাকে সওম বলে।
রাসুলুল্লাহ’র (স.) হিজরতের দ্বিতীয় বছর শাবান মাসে রমজানের রোযা ফরজ হওয়ার নির্দেশনায় আয়াত নাজিল হয়। তাই সকল প্রাপ্ত-বয়স্ক, সুস্থ, মুকিম ও স্বাধীন মুসলিম নারী-পুরুষ সকলের উপর রমজানের রোজা ফরজ।
কুরআনে এসেছে “হে ঈমানদারগণ তোমাদের জন্যে রোজাকে ফরজ করা হয়েছে যেমনি ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তিদের ওপর, যাতে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারো। -(সুরা বাকারাহ আয়াত:১৮৩)

★রমজানের তাৎপর্য:
রমজানের তাৎপর্য বর্ণনায় বিশ্বনবী (সঃ) এর বহু হাদিস বিদ্যমান।
রাসুল (সঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা রাখবে ঈমান ও (ইহতেসাব)চেতনা সহকারে তাঁর পূর্ববর্তি গুনাহ মাফ হয়ে যায়। (সহীহ বুখারি)
রাসুল (সঃ) সওমের গুরুত্বে অারো বলেন, যে ব্যক্তি একদিন আল্লাহর পথে রোজা রাখবে, আল্লাহ তাঁর মূখমন্ডল জাহান্নাম হতে সত্তর বছর দুরে সরিয়ে রাখবেন। (বুখারি-মুসলিম, তিরমিযি, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)
আর এ মাসে…
১) আল্লাহর রহমতের দরজা সমুহ খুলে দেয়া হয়
২) জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়
৩) শয়তানকে শৃংখলাবদ্ধ করা হয়। (মুসনাদে আহমদ)
রোজাদার ব্যক্তি রোজা রাখার কারণে কবরে সুপারিশপ্রাপ্ত হবেন।
রাসুল (স) ইরশাদ করেন, রোজা ও কুরআন রোজাদার বান্দার জন্যে সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আল্লাহ! আমি এ ব্যক্তিকে দিনে খাবার ও অন্যান্য কামনা-বাসনা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি। আপনি আমার সুপারিশ গ্রহন করুন। কুরআন বলবে, হে আল্লাহ! আমি এ ব্যক্তিকে রাতের নিদ্রা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি। আপনি আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। আল্লাহ তাদের সুপারিশ গ্রহন করবেন। (বায়হাকি শুয়াইবুল ঈমান)

★রোজার বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য:
আজ থেকে প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বে রাসুলুল্লাহ (স.) এর মূখনিসৃত বাণী-‘তোমরা রোজা রাখো তাহলে সুস্থ থাকবে।’
অথচ আজকের চিকিৎসা বিজ্ঞানও এটা স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে।
বিশ্বের নোবেলপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীগণ কতগুলো গবেষণা মতামত দিয়েছেন। যেমন-
১) রোজার কারণে চামড়ায় পানির পরিমাণ কমে যায় বলে ব্রণ ও চর্মরোগ কমে যায়।
২) রোজা কলিজার পাশে জমা হওয়া চর্বি কমিয়ে ফেলে। তাই পরিপাকতন্ত্র দ্রুত কাজ করে।
৩) রোজা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ইউরোপে শরীরের ক্যালরি কমানোর জন্যে ৩০ দিন দৈনিক ১২ ঘন্টা করে রোজার মত উপোষ রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়।
৪) রোজা ডায়াবেটিস অবিশ্বাস্যভাবে কন্ট্রোল করে। অনেকের রোজা রাখলে ঔষধও খেতে হয়না।
৫) রোজার মাধ্যমে বাত রোগী উপকৃত হন।

★ রমজানের বিশেষত্ব:
মাহে রমজানের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হচ্ছে কুরআনুল করীম অবতীর্ণ হওয়া।
আল্লাহ তায়ালা বলেন- রমজান মাস হল সেই মাস যাতে নাযিল করা হয়েছে আল কুরআন। যা মানুষের জন্যে জীবন বিধান এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্যে সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ, আর হক-বাতিলের মাঝে পার্থক্যকারি। (সুরা বাকারাহ আয়াত:১৮৫)

এ মাসে একটি রাত আছে যা হাজার মাস হতে অনেক উত্তম (লাইলাতুল ক্বদর)। যে লোক এই রাত্রির মহাকল্যান লাভ হতে বঞ্চিত থাকল, সে সত্যিই বঞ্চিত ব্যক্তি।(নাসায়ী)
সকল ইবাদাতে সওয়াব আমলনামা অনুসারে দেয়া হলেও কেবল রমজানের পুরস্কার আল্লাহ নিজ হাতে দিবেন।
হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, রোজা আমার জন্যে, আর এর পুরস্কার আমি নিজ হাতে প্রদান করব।
রোজাদারদের জন্যে জান্নাতের রাইয়ান নামক বিশেষ দরজা খোলা হবে তা দিয়ে কেবল রোজাদার প্রবেশ করানো হবে, রোজাদার প্রবেশ শেষ হলে রাইয়ান দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে।(বুখারি)
রোজাদারের জন্যে বিশেষ দুইটা খুশি-
১) একটি ইফতারে সময়
২) অন্যটি স্বয়ং আল্লাহর সাথে স্বাক্ষাতের সময়।(বুখারি-মুসলিম)
রমজানে ইতেকাফের মতো মহান এক ইবাদাত রয়েছে। আর প্রতিটি নফল কাজ যেন সুন্নাতের সওয়াব। প্রতিটি সুন্নাত যেন ফরজের সওয়াব। আর প্রত্যেকটা ফরজকে ৭০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়। (মুসলিম)
আর রমজান মাসে প্রত্যেক নেক আমল ১০ গুণ হতে ৭০০ শত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। (বুখারি-মুসলিম)
প্রিয় বন্ধুরা,
মাহে রমজান রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মহা বারতা নিয়ে আমাদের মাঝে আগমন করেছে ও চলমান অবস্থায় আছে। শুধু ভূরিভোজ ত্যাগ নয়, যেন তাক্বওয়া অর্জনের মাধ্যমে মহান রবের কাছে প্রিয় হতে পারি- সে প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ করি। আল্লাহ আমাদের রমজানের শিক্ষাকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার তৌফিক দিন। আমীন।

লেখকঃ
আব্দুর রহমান হাশেমী
(কামিল হাদিস, মাষ্টার্স সমাজবিজ্ঞান)