নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া এলাকায় অভিভাবকহীন এক পরিবারের কোটি টাকার জমি দখল করে রাখার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি গায়ের জোরে দীর্ঘদিন ধরে জমিগুলো দখল করে রেখেছে। ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন নানাভাবে চেষ্টা করেও জমিগুলো উদ্ধার করতে পারছেন না। সম্প্রতি ওই জমি স্মার্ট গ্রুপ নামে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়ে সেখানে ফিলিং স্টেশনসহ স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। এই নিয়ে ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের শরণাপন্ন হলে ওই জমির উপর ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তবে ১৪৪ ধারাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্মাণকাজ অব্যাহত রেখেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬মে) কক্সবাজার শহরের এক হোটেলে সংবাদ সম্মেলনকরে এই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

অভিযোগ মতে, ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া মৌজার বি.এস ৪৯১ খতিয়ানের ২৩৪৭ দাগের ৩২ শতক, একই মৌজার ৬৪ খতিয়ানের ২৩৫২ দাগের ১৯.৮০ শতক এবং ৪ খতিয়ানের বি.এস দাগের ২৬৩৪ দাগের ৩০ শতকসহ মোট .৮১৮০ শতক জমির আর.এস ও বিস.এস মুলে মালিক মৃত উজির আলীর পুত্র মৃত ছালেহ আহামদ। তিনি বহুদিন আগে মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুকালে তার দুই স্ত্রী ও তিন মেয়ে ছিলো তবে কোনো ছেলে সন্তান ছিলো না। তিনি মারা যাওয়ার পর অভিভাবকহীন হয়ে যায় তার দুই স্ত্রী ও কন্যারা। এই সুযোগে ওই জমিগুলো দখল করে নেয় খরুলিয়া মুকবুল সওদগর পাড়া এলাকার খুইল্যা মিয়ার পুত্র যথাক্রমে- শামসুল আলম, মোস্তাক আহামদ, গিয়াস উদ্দীন এবং মৃত মুবিনুল হকের পুত্র সাহেব মোহাম্মদ জিকু ও মোঃ সিফাত।

ভুক্তভোগীরা জানান, সেই সময় ছালেহ আহমদের মেয়েরা ছোট এবং দুই স্ত্রী অভিভাবকহীন হওয়ায় কোনোভাবেই জমিগুলো ভোগ দখল করতে পারেনি। এমনকি আইনী লড়াই করারও তাদের কেউই ছিলো না। তবে ব্যক্তিগতভাবে তারা অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোনোভাবেই তারা প্রভাবশালী জমিদখলকারীদের সাথে পেরে উঠতে পারেনি। তারপরও দীর্ঘদিন তারা প্রতিনিয়ত তাদের স্বামী-পিতার জমিগুলো উদ্ধার করার জন্য নানাভাবে আকুতি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের এই অসহায়ত্বকে বিপরীতভাবে ব্যবহার করে ওই দখলকারীরা কোটি টাকার ওই জমিগুলো ভোগ দখল করেই আসছেন। কিন্তু ছালেহ আহমদের স্ত্রী ও কন্যারা বৈধ কাগজপত্র সংরক্ষণ ও নিয়মিত খাজনা আদায় করে এসেছেন।

মৃত ছালেহ আহমদের দুই স্ত্রী ও কন্যারা বলেন, বিভিন্ন সময় আমাদের জমি ফেরত দেয়ার জন্য দখলখকারীদের আকুতি-মিনতি করলেও তারা কখনো তা আমলে নেয়নি। উল্টো আমাদের নানাভাবে হুমকি ধমকি দেয়। সম্প্রতি আমাদের রেকর্ডীয় মালিকানাধীন জমিতে আমরা কাজ করতে গেলে তারা আমাদের উপর হামলা চালায়। এতে আমাদের অনেক দিনমজুর আহত হয়েছিলো। সে সময় তারা বিরোধপূর্ণ জমি সংক্রান্ত সমস্যা সমধানের আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত সমধান করেনি। অপকৌশলে নানাভাবে কালক্ষেপণ করেন। গত কয়েকদিন আগে আমরা দেখতে পাই যে, আমাদের মালিকানাধীন ওই জমিটি দখল পোক্ত করতে তারা সেখানে মাটি ভরাট করছে। এতে আমরা বাধা দিলে তারা তা মানেনি। আমরা শুনেছি স্মার্ট গ্রুপ নামে একটি কোম্পানি জমিগুলো ভাড়া দিয়েছে। বাধ্য হয়ে আমরা আদালতের শরণাপন্ন হই। আদালত কাগজপত্র দেখে গত ১৩ মে ওই জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করেন। বিষয়টি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কক্সবাজার সহকারি কমিশনার ভূমি এবং কক্সবাজার মডেল থানাকে নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশকে অমান্য করেই স্থাপনা নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে। গত বুধবার আমরা বাধা দিতে গেলে জবর দখলকারী ও ওই কোম্পানির লোকজন মিলে আমাদের উপর হামলা করেছে এবং তারা নিজেরাই পরিকল্পিত কিছু ভাংচুর করে। ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তারা আমরা হামলা করেছি বলে পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করিয়েছে।

ভুক্তভোগীরা বলেন, আমরা একথা স্পষ্ট করতে বলতে চাই- উল্লেখিত জমির মালিকানা নিয়ে যদি জবর দখলকারীরা সঠিক কাগজপত্র দেখাতে পারেন তবে আমাদের আর কোনো দাবি থাকবে না। এক্ষেত্রে কাউকে কোন কথা বলতে হবে না। কিন্তু তারা কাগজপত্র নিয়ে বসতে বললে আর বসে না। আমরা অসহায় ও আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলে বারবার তাদের কাছে ছুটে গিয়েছি সমাধানের জন্য। কিন্তু তারা আমাদের কোন কথা শুনে না। গায়ের জোরে তারা সব করতে চায়। জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মুখের কথার কোন ভিত্তি থাকে না। কাগজে কলমে মালিকানা নিশ্চিত থাকে। কিন্তু গায়ের জোরে তারা কাগজপত্রকে তোয়াক্কা করছে না। এ অবস্থায় ভূমিদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা চাই।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মৃত ছালেহ আহমদের বড় স্ত্রী মুর্তজা বেগম ও ছোট স্ত্রী মরিয়ম খাতুন, মেয়ে শাহিন আকতার, ছেনোয়ারা বেগম ও জেসমিন আকতার।