• আব্দুল মান্নান রানা

প্রথমে একটি কথা সুস্পষ্ট করে বলে রাখি।আর সেটি হল আমাদের দেশে বর্তমানে দেশ প্রেমিক তথা সভ্য চিন্তার অধিকারী মানুষ ১০ হাজারেও একজন পাওয়া দুর্লভ!!

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ওয়েব পাতায় একটি লক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। তা হল আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি নিয়ে।২০০৮ সালে দলটির নির্বাচনি ইশতেহার সাধারণ জনগনের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল নিদারুন ভাবে।এরপর ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় ছিল দলটি। এই ১০ বছরে এসব প্রতিশ্রুতির অনেক কিছুই পূরণ হয়নি।ঐক্যফ্রন্ট একটা একটা প্রতিশ্রুতি আর বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। প্রতিটির নিচে লিখেছে কথা দিয়ে কথা রাখেনি আওয়ামী লীগ।

প্রশ্ন আসতে পারে কে রেখেছে কথা??!!
ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপি ১৯৯০ সালের পর দু’বার পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় ছিল। “তারা কি কথা রেখেছিল??! আমি নির্ধিদায় বলে দিতে পারি। তারাও কথা দিয়ে কথা রাখেনি!!

যদি রাখত তবে বিএনপি’র আমলে দুর্নীতি, দলীয়করণ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড,সন্ত্রাসী ঘটনাগুলো ঘটত না।নিশ্চয়ই তারা এসব করার কথা বলে ক্ষমতায় আসেনি কিন্তু তবুও তারা করল!!এসব করবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেনি আওয়ামী লীগও। কিন্তু দুই আমলেই কমবেশি এসব ঘটেছে।

এদেশে প্রকৃত নির্বাচন হলে ক্ষমতার পালা বদল হওয়ার মৌলিক কারণ এটি তথা কেউ কথা দিয়ে কথা রাখে না।
এক দলের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে আরেক দলকে ভোট দেয় মানুষ কিন্তু মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো রাজনীতিবিদ নির্বাচনের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে তাচ্ছিল্য করে!

এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নির্বাচনি ইশতেহারের কোনো মূল্য আছে তাহলে?!!

সম্ভবত খুব একটা নেই বললেই চলে!!!

এই লেখনির চূড়ান্ত কথাটি পরের ক’টা বাক্যে নিহিত!!!

তবে একটি বিষয় অন্তত বলা যায়, ইশতেহারে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি লিখিতভাবে থাকে বলে এটি কিছুটা হলেও দায়বদ্ধতা তৈরি করে। তবে সেটি নিশ্চয়ই আইনের শাসন চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে।

ক্রসফায়ার বন্ধ, কোনো কালো আইন বাতিল করার মতো সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি ইশতেহারে থাকলে প্রশ্ন তোলা যায়, কিন্তু কেন করা হয়নি তা???!!!

উন্নত রাজনৈতিক বিশ্বে ইশতেহারের গুরুত্ব প্রায় সংবিধানের কাছাকাছি যদিও আমাদের দেশে এই রীতি চালু হতে আরও ১০০ বছরেরও বেশি সময় লাগবে!!সেখানে ইশতেহার মানে অনান্তরিক প্রতিশ্রুতি কিংবা নির্বাচনে জেতার অপকৌশল নয়।তাদের কাছে ইশতেহার মানে পবিত্র প্রতিশ্রুতি, এমনকি প্রতিজ্ঞাও বঠে।

তারা ক্ষমতায় গেলে প্রতিশ্রুতি তথা ইশতেহারের বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। যার সূক্ষ্ম প্রমাণ আমেরিকার নির্বাচন! আমেরিকার দীর্ঘ ১০০ বছরের ইতিহাস হয়তো আমি বলতে পারব না। কারণ তা নিয়ে আজ অব্দি আমি চুলচেরা কোনো গবেষণা করিনি!
তবে এটি বলতে পারি যে,বিগত ২০ বছরে ২জন আমেরিকার শাসনকর্তার শাসন গুলো নিশ্চয়ই সেই দেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল!
(১৯৯৮- ২০০৭) জজ বুশ এবং (২০০৭-২০১৬)বারাক ওবামা। আমেরিকায় একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার প্রসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারে। তাদের কিন্তু আমি যেটি উপলব্ধি করলাম তারা দুজনেই দুই দুবার নির্বাচনে জিতেছে। কারণ একটাই তাদের নির্বাচনি ইশতেহারের সিংহভাগেই তারা বাস্তবায়ন করেছে!!কারণ সেদেশের জনগণ আন্দোলন করে প্যাস্টুনের মাধ্যমে আর শাসকরা প্যাস্টুনের ভাষা বুঝে।কিন্তু আমাদের দেশের জনগণ আন্দোলন করে দেশের সম্পদ নষ্ট করে অথচ সরকার কিংবা বিরোধী কোন দলেই তা আমলেই নেই না!

আর আমাদের দেশে নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন না হওয়ার মৌলিক কারণও নিহাত কম নয়। তবুও আমি যে ক’টা কারণ উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছি তা হল:

১.সাধারণ জনগণ দৃশ্যমান কিছু উন্নয়ন দেখলেই সেটিকে চূড়ান্ত উন্নয়ন বলে স্বীকৃতি দিতে কুন্ঠিত বোধ করে না।

২.রাজনীতিবিদদের জবাবদিহি নেই বললেই চলে।

৩. দুর্নীতি আর রাজনীতি প্রায় একাকার হয়ে গেল।

৪.বর্তমানে রাজনীতিতে ইনভেস্টমেন্ট বেড়েছে ফলে দুর্নীতিও লাগামহীনভাবে বেড়েছে।
৫.আইন, বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা নেই বললেই চলে!
৬.শাসন বিভাগে অদক্ষ মানুষের সংখ্যা বেড়েছে।
৭.রাজনীতিবিদরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজেদেরকে অপরাজনীতি চর্চায় নিবেদিত করেছে।
তাছাড়াও আরো অনেক কারণ আছে!

যাহোক, তবুও রাষ্ট্র পরিচালকদের তরে সবিনয় অনুরোধ থাকবে।দয়া করে আপনারা জনগনের অভাব ও আর্তনাত বুঝার চেষ্টা করুণ।
খাদ্য ভেজাল প্রতিরোধ করি,স্বদেশী পণ্য ব্যবহার করি। আসুন আমরা সবাই স্বদেশকে ভালবাসি। স্ব স্ব অবস্থান থেকে রাষ্ট্রীয় সম্পদকে সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের দেশকে বিশ্বের কাছে মাথাউচু করে দাঁড়ানোর জন্য সৎ সাহস প্রদান করি।