বার্তা পরিবেশক :

বেলাল আহমদ নাম পাল্টে হয়ে গেলেন বেলাল আল আজাদ ওরফে বেলাল আজাদ। নিজেকে কখনো সাংবাদিক, পুলিশের সোর্স, পেশকার, মুহুরী আইনজীবি সহকারী পরিচয় দিয়ে দিন-দুপুরে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণে। তার প্রধান টার্গেট গ্রাম-গঞ্জ থেকে আইনী সেবা নিতে কোর্টে আসা অসহায় নারী-পুরুষ। হত্যা, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, মাদক, ইয়াবা সহ সমস্ত জঠিল মামলায় জামিন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ-লাখ টাকা। এতে করে একদিকে প্রতারিত হচ্ছে নিরীহ লোকজন এবং অন্যদিকে সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে প্রকৃত আইনজীবি সহকারীদের।

তার ব্যাপারে খোঁজ নিযে জানা যায়, জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি গ্রামের মৃত বদিউর রহমানের ২য় ছেলে বেলাল(৩৫) পিতার মৃত্যুর পর অভাব-অনটনের সংসারে হাল ধরতে পড়ালেখা ছেড়ে চট্টগ্রামের একটি স্থানীয় পত্রিকার হকার হিসেবে নিজের কর্ম জীবন শুরু করলেও পরবর্তীতে জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। জাল সার্টিফিকেট বানিয়ে একটি নামকরা এনজিওতে চাকরী করতে গিয়ে ধরা খেয়ে জেলও খাটে বেশ কিছুদিন। জেল থেকে বের হয়ে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কোর্টে আসা-যাওয়া করতে করতে একসময় কোর্টই হয়ে যায় তার কর্মস্থল। বিভিন্ন তদবীর ও দেন-দরবারের মাধ্যমে বাগিয়ে নেয় আইনজীবি সহকারীর নিবন্ধন। দিনে দিনে বাড়তে থাকে তার জাল-জালিয়াতী মূলক কর্মকান্ড। হঠাৎ করে বিপূল পরিমাণ অবৈধ টাকা হাতে পেয়ে জড়িয়ে পড়ে নারী কেলেংকারী, বহুবিবাহ ও নেশার জগতে। বর্তমানে তার তিন স্ত্রী রয়েছে। প্রকাশ্যে মাদক সেবন ও নেশা গ্রহনের সময় গোল দিঘীর পাড় থেকে সদর থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ কর্তৃক হাতেনাতে ধৃত হয়ে সদর থানা মামলা নং-১৮ এবং জিআর-৬৭৩/২০১৬ইং মামলা মূলে সে বেশ কিছুদিন জেল খাটে। এরপর বিজ্ঞ আইনজীবি এডভোকেট মোঃ ইউসুফের স্বাক্ষর জাল করে আদালতে হাজিরা দিতে গেলে ধরা পড়ে জিআর-৪০৫/২০১৬ইং মামলায় আবারো জেল খাটে। তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা নং-৫০০/২০১৬ইং সহ আরো অসংখ্য মামলা রয়েছে।
জানতে চাইলে আইনজীবি সহকারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তুহিন এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বেলাল আজাদ এক সময় উক্ত সমিতির সদস্য ছিল। তবে এখন নেই। তিন বছর আগে জাল-জালিয়াতীর সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কারণে তার সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ। সে সমিতির কর্তৃপক্ষ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আদালত পাড়ায় প্রতিনিয়ত একটি জালিয়াত চক্র গড়ে তোলে বিজ্ঞ বিচারক, বিজ্ঞ আইনজীবি, জেল সুপার, ইউপি চেয়ারম্যান সহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সীল ও স্বাক্ষর জাল করে সম্পূর্ণ প্রতারণা করে যাচ্ছে।
সর্বশেষ, চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পশ্চিম ফোমরা এলাকার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে রজি উল্লাহ নামের এক ইয়াবা কারবারিকে গত ২০১৭ সালের ১৬ই অক্টোবর উখিয়া থানার পুলিশ বিপূল পরিমাণ ইয়াবা সহ আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করে। যার উখিয়া থানা মামলা নং-১৯, তারিখ-১৬/১০/১৭ইং, জিআর মামলা নং-৩৯৪/২০১৭ইং এবং এসটি মামলা নং-৯৭৪/১৮ইং। উক্ত মামলার আসামীকে জামিন পাইয়ে দেওয়ার জন্য চুক্তি ভিত্তিক মোটা অংকের মিশন নিয়ে তদবীর চালাতে থাকে বেলাল আজাদ। এক পর্যায়ে হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভ করে ইয়াবা কারবারি রজি উল্লাহ। উক্ত জামিন নামার নথিপত্রের সাথে কক্সবাজার জেলা কারাগারের ডেপুটি জেলারের স্বাক্ষর জাল করে সৃজিত একটি অঙ্গীকার নামা সহ জেলাজজ আদালতে প্রেরণ করার পর জেলাজজ আদালত জামিন বহাল রেখে আসামীকে মুক্তি দেওয়ার জন্য জামিনের ফাইলটি কক্সবাজার জেলা কারাগারে প্রেরণ করেন। কিন্তু উক্ত মামলার নথিপত্রের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে ডেপুটি জেলারের নকল করা সীল-স্বাক্ষর সম্বলিত অঙ্গিকার নামাটি জেল সুপারের হাতে ধরা পড়ে। এতে কারাকর্তৃপক্ষ আসামী ছেড়ে না দিয়ে বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। আদালত বিষয়টি আমলে নিয় উক্ত মামলার আইনজীবিকে গত ০৮/০৪/২০১৯ইং তারিখ ৪৪৮নং স্বারক মূলে ১০দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। পরে আইনজীবি উক্ত নোটিশের জবাব দেন। জবাবে বলা হয়েছে তার আইনজীবি সহকারী বেলাল আজাদ জাল ও জালিয়াতীর মাধ্যমে ডেপুটি জেলারের স্বাক্ষর ও সীল সৃজন করে। এতে সরল বিশ্বাসে তিনি স্বাক্ষর করেন। পরবর্তীতে তিনি জেলা আইনজীবি সমিতিতে বেলাল আজাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন করেন।