আবদুল নবী

আজকাল খবরের কাগজ হাতে নিলেই কিছু খবরের শিরোনাম পড়ে নিজেকে অপরাধী মনে হয়। বর্তমান মৌসুমে কৃষকেরা হতাশায় পরিপূর্ণ। তারা ধান চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছে না শুধুমাত্র বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে, অন্যায়ের কারণে। তারা কেনই বা চাষ করবে যদি তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য দেওয়া না হয়, তাদের শ্রমের মূল্য দেওয়া না হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা রোদে পোড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করতেছে দেশের জন্য। অথচ আজ তারা নিজেরাই সেখান থেকে বঞ্চিত।

কয়েকদিন আগে থেকে খবরের কাগজ, অনলাইন নিউজ ইত্যাদি সব জায়গায় একটা জিনিস খুবই ভয়াবহ রূপ প্রকাশ করেছে। আর সেটা হলো ধান চাষীরা ক্ষতির মুখে। ভেবে দেখুনতো, ২০০৮ সালে যে জিনিসটার মূল্য ১০ টাকা ছিলো সেটা আজ বৃদ্ধি পেয়ে ৩০ টাকা হয়েছে। যেটা ১ টাকা ছিলো সেটা আজ বৃদ্ধি পেয়ে ৫ টাকা হয়েছে। একইভাবে ২০০৮ সালে প্রতি মণ ধান বিক্রি হতো ৮৩০ টাকা। বর্তমানে তা ধীরে ধীরে জ্যামিতিক হারে হ্রাস পেয়ে ১ মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৪৯০ টাকা।

আজব চিন্তার বিষয়। কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ পরিমাণে। এই পরিশ্রমী দেশের খাদ্য উৎপাদনের প্রধান কান্ডারী কৃষকদের পেটে লাথি মারা, তাদেরকে বঞ্চিত করা কোন সভ্য ও উন্নয়নশীল জাতির আচরণ কিংবা উদ্দেশ্য হতে পারে না। ছোটবেলা থেকে বই, ম্যাগাজিন ইত্যাদিতে পড়ে আসতেছি “বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের অর্থনীতি কৃষির উপর নির্ভরশীল”। আজ সেই বইগুলোর প্রতিটি শিক্ষা মিথ্যে প্রমাণিত হচ্ছে। যারা দেশের অর্থনীতির চাকা ঘূর্ণায়মান রাখে তাদের উপর এই অমানবিক বিচার কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

সরকার একবারও তাদের কথা ভাবেন না। কারণ, এই গরীব মেহনতী উদার হৃদয়ের মানুষগুলোতো আর প্রেসক্লাবের সামনে এসে মানববন্ধন করতে পারবে না, গার্মেন্টস শ্রমিকদের মতো রাজপথে আসতে পারবে না, রাজনৈতিক দলের মতো সভা- সেমিনার করতে পারবেন না, হরতাল করে ভাংচুর করতে পারবে না। তারা হয়তো এই কাজগুলো করতে পারবে না। তবে তারা যে কাজটা করতে পারে সেটা হলো তারা সবাইকে ক্ষুধায় জ্বালিয়ে মারতে পারবে। অর্থনীতির চাকা ভেঙ্গে দিতে পারবে। তারা ১ মৌসুম যদি ধান চাষ বন্ধ করে দেয় তাহলে বাংলার অর্থমন্ত্রী বলো প্রধানমন্ত্রী বলো সবাইকে দেশের মানুষকে খাদ্য দেওয়ার জন্য বিদেশে ভিক্ষা করতে হবে। ভিক্ষা করেও পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য আনা সম্ভব হতো না। ৭৬’এর মনন্ত্বরে আবার দেখা দিবে মহামারী রূপে।

আজ দেশের মোট কৃষকের ৯৭% কৃষক রাগ, হতাশা এবং ক্ষোভে কাদঁতেছেন। তাদেরকে ন্যায্য মূল্য দেওয়া হচ্ছে না বলে তারা চাষে অনীহা প্রকাশ করতেছে। দেশের উন্নয়ন তরান্বিত করতে হলে কৃষকদের সন্তুষ্ট রাখা খুবই জরুরী। তাই সার্বিক বিবেচনা করে আগে অর্থনীতিকে বাঁচান। তারপর দালালচক্র এর পকেট এর কথা চিন্তা করলে সমস্যা নেই। ২০০৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকা কমে। যার কারণে কৃষকেরা তাদের ব্যয়মূল্যও পাচ্ছে না। তাই সরকারের উচিত তাদেরকে ন্যায্য মূল্য পাওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করে একটি কঠোর আইন প্রণয়ন করা।

লেখক: কক্সবাজার সিটি কলেজ: