সংবাদদাতাঃ
উখিয়ার তাজনিমারখোলা এলাকায় স্থানীয় মেম্বারকে চাঁদা না দেয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে রোহিঙ্গাদের হেফজখানা। গত প্রায় ৩ মাস ধরে ওই হেফজখানা বন্ধ থাকায় রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। -অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
স্থানীয় রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ তোহা একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী আলেম। তার এক পা নেই। তবু ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজনে বছরখানেক আগে আত্মীয়-স্বজন ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে চাঁদা তুলে  হেফজখানা প্রতিষ্ঠা করেন। একচালা বিশিষ্ট ধর্মীয় এই প্রতিষ্ঠানটি তৈরী করার সময় স্থানীয় জয়নাল মেম্বার এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করেন। জয়নাল মেম্বারের সঙ্গে জড়িত রয়েছে কয়েকজন মাঝি। তাদের দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ক্যাম্প ইনচার্জ এর মাধ্যমে হেফজখানাটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে সাধারণ রোহিঙ্গারা দিন দিন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে বলেও জানা গেছে।
সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত জয়নাল মেম্বার রোহিঙ্গা মেয়ে ধর্ষণ ও পুলিশকে মারধরের মামলায় কারাবন্দি রয়েছে। তবুও থেমে নেই তার বাহিনীর অপকর্ম। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত চাঁদা চলে আসছে তারা।
হেফজখানা ও এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ তোহা বার্মার বুচিদং এলাকার মৃত আবদুর রশিদের ছেলে। মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসার পথে পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। এতে তার ডান পা কেটে ফেলতে হয়। এক পা নিয়ে চলছে তার জীবন।
ঘটনার বিষয়ে হাফেজ তোহার কাছে জানতে চাইলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, মায়ানমারে সব অধিকার ও সসম্পদ হারিয়ে বাংলাদেশে এসে ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে কষ্টের জীবনের বাকি সময়টুকু কোরআনের খেদমতে কাটিয়ে দেওয়ার জন্য একটি হাফেজখানা এতিমখানা তৈরি করি। তাতেও শান্তি নেই। চাঁদাবাজরা বন্ধ করে দিয়েছে দ্বীনের একটি বাগান। উল্টো আমাকে নানাভাবে হয়রানি করছে। হুমকি দিচ্ছে।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা মুরব্বি জানিয়েছে, হাফেজ তোহাকে আর্থিক সুবিধা দিয়ে হেফজ খানায় কিছু বাগানের চোরাই গাছ জমা রাখার প্রস্তাব দিয়েছিল জয়নাল মেম্বার। কিন্তু তাতে রাজি হননি হাফেজ তোহা। তখন থেকে মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে জয়নাল মেম্বার ও তার বাহিনীর লোকজন। এমনকি ক্যাম্প ইনচার্জকে ভুল বুঝিয়ে হেফজ খানার বিরুদ্ধে ‘কানভারি’ করে। এলাকাবাসী জানিয়েছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে চোরাই গাছ এনে হেফজ মাদ্রাসার আঙ্গিনায় বেচাবিক্রি করতো জয়নাল মেম্বার। বিষয়টি নিয়ে রোহিঙ্গা আলেমদের সাথে বিতর্ক করেন জয়নাল মেম্বার। ওই বিতর্কের সূত্র থেকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সাধারণ রোহিঙ্গা। জয়নাল মেম্বারের বাহিনীর চাঁদাবাজি থেকে মুক্তি ও অশিক্ষিত রোহিঙ্গা শিশুদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে সর্বশ্রেণীর মানুষ।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) এর কাছে জানতে চাইলে বলেন, রোহিঙ্গারা নিজেরা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করার বিধান নাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করার অনেক এনজিও রয়েছে। তাই আমরা একটি স্কুল বন্ধ করেছি। কোন হেফজখানা বন্ধ করিনি। জয়নাল মেম্বার সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্যাম্প ইনচার্জ বিস্তারিত মন্তব্য করেননি। বলেন, তার সম্পর্কে এলাকার সবাই অবগত।