– রুহুল আমিন 

আলোচনায় যাওয়ার আগে আমি ১৫ বছর বয়সী সুইডেন কন্যা গ্রেটা থুনবার্গের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তার আলোচিত বক্তব্যটি সরাসরি তুলে ধরছি।

আমার নাম গ্রেটা থুনবার্গ।আমার বয়স পনেরো।আমি সুইডেন থেকে এসেছি।আজ আমি জলবায়ু সংক্রান্ত ন্যায়বিচার প্রতিষ্টা নিয়ে কথা বলবো।
অনেকেই সুইডেনকে শুধুমাত্র একটি ছোট্ট দেশ হিসেবেই দেখেন এবং আমরা কি করছি তাতে কারো কিছু আসে যায় না।কিন্তু আমি শিখেছি পরিবর্তন আনতে ছোট বা বড় কোনো ব্যাপার নয়।যদি কয়েকটিমাত্র ছোট বাচ্চা মিলে শুধুমাত্র স্কুলে না গিয়ে সারা পৃথিবীর মিডিয়াগুলোর হেডলাইন হতে পারে,তাহলে চিন্তা করুন,আমরা যদি আসলেই চাই তাহলে সবাই মিলে কি পরিবর্তন ঘটাতে পারি।
কিন্তু সেটি করতে গেলে আমাদের স্পষ্ট ভাষায় কথা বলতে হবে এবং তা যত অপ্রীতিকরই হোক না কেন।আপনারা মুখে শুধু শাশ্বত সবুজ অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা আওড়ান,কারণ আপনারা জনপ্রিয়তা হারানোর ভয়ে থাকেন,এবং এই বাজে ধারণা নিয়েই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে বলেন।এই বাজে ধারণাই আজ আমাদের দুর্দশার কারণ।আপনাদের এটা বুঝা উচিত যে,এবার থামতে হবে,কারণ আপনারা সত্যিটা বলার জন্য এখনো পরিপক্ব হয়ে উঠেন নি বরং এই বোঝাটি আমাদের শিশুদের চাপিয়ে দিচ্ছেন।
কিন্তু আমি জনপ্রিয় হওয়ার জন্য লালায়িত নই।আমি এই পৃথিবী এবং এর জলবায়ু সংক্রান্ত ন্যায়বিচার প্রতিষ্টার সংগ্রাম করছি।এই সভ্যতাকে বলি দিতে হচ্ছে শুধুমাত্র কিছু অর্থলোভী কিংবা অর্থের পেছনে ছুটে বেড়ানো মানুষের জন্য।আমাদের মত কিছু ধনী দেশের বিলাসিতা বলি হচ্ছে আমাদের বায়ুমন্ডল।কিছু লোকের বিলাসিতার জন্য ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে।
আজ থেকে ৫০ বছর পর অর্থাৎ ২০৭৮ সালে আমি আমার ৭৮ তম জন্মদিন পালন করবো।যদি আমার কোন ছেলেমেয়ে থাকে,হয়তো তারাও থাকবে সেদিন আমার সাথে।হয়তো তারা আমার কাছে আপনাদের কথা জিজ্ঞেস করবে।হয়তো তারা জিজ্ঞেস করবে,সময় থাকার সত্ত্বেও কেন তোমরা কিছু করলে না।আপনারা বলেন আপনাদের সন্তানদের সবচেয়ে বেশী ভালোবাসেন,কিন্তু আপনারাই আবার তাদের চোখের সামনে তাদের ভবিষ্যৎকে চুরি করছেন।
যতক্ষণ পর্যন্ত আপনারা আপনাদের করণীয়-র প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে কোনটা রাজনৈতিক বিবেচনায় সম্ভব সেটি নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন ততক্ষণ পর্যন্ত কোন আশা নেই।সংকটকে হিসেবে না দেখলে সেটি সমাধান করা সম্ভব নয় জীবাশ্ম জ্বালানীকে তার জায়গায় রেখে আমাদের সমতা নিয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন।
যদি বিদ্যামান কাঠামোতে কোন সমাধান খুঁজে পাওয়া না যায়,আমাদের সেই কাঠামোই পরিবর্তন করা উচিত।বিশ্বনেতারা যেন আমাদের প্রতি সদয় হয় সেটি বলতে আমরা এখানে আসি নি।
আপনারা অতীতেও আমাদের অবহেলা করেছেন এবং ভবিষ্যৎতেও করবেন।আমরা অনেক অজুহাত শুনেছি আর কোন অজুহাত শোনান সময় নেই।আমরা শুধু বলতে এসেছি,আপনারা পছন্দ করেন বা না করেন পরিবর্তন খুবই সন্নিকটে।আসল ক্ষমতা জনগণের হাতে।
ধন্যবাদ।
জানি আপনারা তার বক্তব্যটি পড়ে বুঝতে পেরেছেন ছোট্ট বোনটা কি বুঝাতে চেয়েছেন পুরো বিশ্বের ক্ষমতাধর, স্বার্থান্বেষী শাসকদের কাছে যারা চিবিয়ে খাচ্ছে পুরো বিশ্বকে।
কিন্তু এই বিষয়ে বা জলবায়ু পরিবর্তন বিষয় আপনার, আমার করণীয় কি?
কখনও কি ভেবে দেখছেন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আপনার আশেপাশের পরিবেশটা কেমন দেখাচ্ছে?
এক জরিপে দেখলাম গত চার দশকে বাংলাদেশের ১ লক্ষ হেক্টর আবাদী জমি সাগরের বা নদীর গর্ভে হারিয়ে গেছে।
হয়ত কিছু দিন পর আপনারটাও হারিয়ে যাওয়ার পথে।তাই কি নয়?
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা বিশ্বের মধ্যে যে সব দেশ সবথেকে বেশি ক্ষতির সম্মোখীন হবে তার মধ্যে আপনার বাংলাদেশ এক নাম্বারে থাকবে কিন্তু তা নিয়ে আপনি,আমি কতটুকু চিন্তিত?
আজ আমরা ক্ষমতার লোভে আক্রান্ত হয়ে পড়েছি,স্বার্থরক্ষা জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছি কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কতটুকু ভুমিকা রাখছি এবং রেখে যাচ্ছি তা নিয়ে কি কখনও ভেবেছি?প্রশ্নের উত্তর হয়ত না আসবে।
আজকে যদি আমরা লক্ষ করলে দেখি,জলবায়ু ক্ষতির কারণ ভেবে কয়লা বিদ্যুৎ নির্মাণ থেকে যেখানে রাশিয়া,জার্মান সহ প্রথম শ্রেণীর দেশ গুলো সরে আসছে সেখানে আমরা সেই প্রকল্পকে সাদরে গ্রহণ করছি,আমরা সুন্দর বনের ব্যাপক ক্ষতি হবে জেনে ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানে মরিয়া হচ্ছি।
গবেষকবৃন্দ বলেন,গাছ আমাদের যে উপকার করেন তা যদি আমরা সত্যিকার অর্থে জানতাম তাহলে নিজের সন্তানের চেয়ে গাছের বেশি যত্ন নিতাম সেখানে আমরা হেক্টরের পর হেক্টর বনভূমি উজাড় করে রোহিঙ্গা বসতি নির্মাণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রজেক্ট করার জন্য মরিয়া।মহেশখালীতে বনভূমি নিধন করে তেলের কারখানা করা নিরর্থক।
আজকে যদি আমরা মহেশখালী, কুতুবদিয়া সাগরের তীরের কাছে চিত্রটি লক্ষ করি তাহলে দেখতে পাই, হাজার একর প্যারাবন উজাড় করে মাছের ঘের তৈরি করতে মরিয়া ক্ষমতাবানরা কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেই সরকারের পক্ষ থেকে।
অথচ গাছপালাই একমাত্র পৃথীবিকে শীতল রাখতে সক্ষম।
যে ধলঘাটা ছিলো চির সবুজের এলাকা সেই ধলঘাটার অর্ধেক ভূমি সাগরের গর্ভে হারিয়ে গেলো বাকিটুকু জোয়ার,ভাটার সাথে খেলা করে,কুতুবদিয়ার অর্ধেক ভূমি সাগরের গর্ভে,ভোলা,পটুয়াখালীর প্রায় ভূমি সাগরের গর্ভে হারিয়ে গেছে কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে?
কখনও ভেবে দেখেছেন?জলবায়ু পরিবর্তনটা আপনার আশেপাশের সুন্দর পরিবেশটা কিভাবে নাকানিচুবানি বানাচ্ছে?
সারা বাংলাদেশে যত্রতত্র ইটের ভাটা যে ইটের ভাটার ধোয়া কারণে পরিবেশের মারাত্নক ক্ষতি হচ্ছে। বেশিভাগ ইটের ভাটার ধোয়া নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অত্যাধুনিক যত্নের ব্যবস্থা নেই, যেটা তেমন কোনো চোখে পড়ার মত কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
আজকে আমরা তরুণ সমাজ কতটুকু জাগ্রত এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে নিজের মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে?
একটা কথা মাথায় রাখা উচিত, জনগণই সবকিছুর মালিক।
আমাদের ঘুম ভাঙ্গাতে হবে সেই স্বার্থান্বেষী গোষ্টিদের যারা নিজেদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে আজ ধ্বংস করছে সুন্দর পৃথিবীকে।
যারা ধ্বংস করার কাজে মগ্ন তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সচেতন হতে হবে।
পুরো বিশ্বকে জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি রক্ষা করতে হলে এখনই সময় গর্জে উঠার না হয় আপনি,আপনার আপনাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট দায়বদ্ধ হবেন,আমাদের কারণে যেন তারা না পাই একটি অনিশ্চিত পৃথিবী তার জন্য আমাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হয়ে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
যারা সবকিছু রাজনৈতিক বিবেচনায় রেখে বিচার করে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে।
একটা কথা বলি,
একটা সময় আসবে রাজনীতি বি ক্যাটাগরির বিষয় আর জলবায়ু পরিবর্তন হবে এ ক্যাটাগরির বিষয়।
পরিবেশে বলবো,তরুণ সমাজের প্রত্যেকটি তরুণ,তরুণীদের এক একজন গ্রেটা থুনবার্গ হতে হবে।