মুহম্মদ নূরুল ইসলাম

অবতরণিকা :

বিসমিল্লাহ্হির রাহমানির রাহিম।

সকল প্রশংসা সেই সত্তার যার হাতের মুঠোতে আমার জীবন-মৃত্যু। সকল প্রশংসা তাঁরই যিনি আমাকে অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন, শুকরিয়া প্রকাশ করছি রাব্বুল আলামীনের যিনি আমার কলমকে সচল রেখেছেন।

অসংখ্য দরুদ ও সালাম বিশ^মানবতার মুক্তির দূত, মহান শিক্ষক সাইয়্যিদুল মুরসালিন হযরত মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি, যিনি ইসলামকে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। যিনি মানবজাতির জন্য আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে ইসলামের দা’ঈ হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন। যিনি পৃথিবীর ইতিহাসে এক ঘোরতর জাহেলিয়াতের যুগে আবির্ভুত হয়ে ইসলামের দাওয়াতের মাধ্যমে জাহেলিয়াতের পংকিলতায় নিমজ্জিত জাতিকে তাওহিদি চেতনায় উদ্ভাসিত ও আলোকিত করেছেন। সালাম, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক সকল সাহাবায়ে কেরাম, উম্মুল মুমিনিন, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, মুস্তাহেদিন, মুফাস্সিরিন এবং সকল আগত-অনাগত মুসলিম নর-নারীর প্রতি।

কুরআন মজীদ একটি অনন্য ও অসাধারণ গ্রন্থ। এটি সর্বশেষ আসমানি কিতাব। কুরআন মজীদ নিছক একটি আইনের কিতাব মাত্র নয় বরং একই সাথে এটি একটি শিক্ষা ও উপদেশমূলক গ্রন্থও। তাওরাত, যবুর ও ইঞ্জিলসহ অন্যান্য আসমানি কিতাব ও সহিফাসমূহের ধারাবাহিকতায় আল কুরআন নাযিল হয়েছে। এই আল কুরআন নাযিল হয়েছে আরব দেশে, আরবি ভাষায়। তাওরাত, যবুর ও ইঞ্জিল নাযিল হয়েছিলো আল্লাহ্ তা’আলার সৃষ্টি মানুষের উপর। অনুরূপভাবে পবিত্র কুরআনও নাযিল হয়েছে মানুষের উপর। যাঁর উপর আল কুরআন নাযিল হয়েছে তিনি আমাদের মতো রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ হলেও তিনি ছিলেন মহামানব। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের চেয়ে তাঁর মধ্যে ছিলো পৃথক গুণাবলী ও পৃথক বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ্ তা’আলা আকাশ, পৃথিবী ও পাহাড়-পর্বতকে আল কুরআনের ভার দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু কেউ আল কুরআনের ভার বহন করতে রাজি হয় নি। কিন্তু মানুষ (বোকা বলেই) আল কুরআনের ভার বহন করতে রাজি হয়েছে। রাব্বুল আলামীন কুরআন মজীদের সূরা আল আহযাবের (সূরা নম্বর-৩৩) ৭২ নম্বর আয়াতে এব্যাপারে এরশাদ করেছেন এভাবে, “আমি এ আমানতকে (আল কুরআন) আকাশসমূহ, পৃথিবী ও পর্বতরাজির ওপর পেশ করলাম, তারা একে বহন করতে রাজি হয়নি এবং তাতে ভয় পেয়ে যায়, কিন্তু মানুষ একে বহন করেছে নিশ্চয়ই সে বড়ো জালেম ও অজ্ঞ।”

যিনি আল কুরআনের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি আর কেউ নন তিনি আমাদের মহানবী, শেষ নবী, রাসূলে করীম হযরত মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

কুরআন মজিদের সূরা আল্ যিলযাল শ্রবণ শেষে প্রতিক্রিয়া তথা অনুভুতি নিয়ে আমার বক্ষ মান প্রবন্ধটি তৈরি করতে চেষ্টা করেছি।

সূচনা :

তখন ২০১২ সালের আগস্ট মাস। আমার স্ত্রী হাসিনা চৌধুরী লিলিসহ পবিত্র ওমরাহ হজ্জ উপলক্ষে তখন আমি আল্লাহ তা’আলার পবিত্র ঘর মসজিদুল হারামে অবস্থান করছি। তখন ছিলো পবিত্র মাহে রমজান। পবিত্র মাহে রমজানের শেষ দশ দিন নিয়মিতভাবে মসজিদুল হারামে এশাসহ তারাবিহ্ নামাজ আদায় করার সৌভাগ্য হয়েছে আমাদের। এরকম এক রাতে তারাবিহ্ নামাজে ইমামতি করছিলেন পৃথিবীবিখ্যাত মুফাস্সির, কুরআনে হাফেজ আল্লাহ্র পবিত্র ঘর মসজিদুল হারামের অন্যতম খতিব, মুফতি শেখ আবদুর রহমান আস সুদাইস। আমরা কয়েক লক্ষ মুসল্লি তাঁর পেছনে কাতারবন্দি। এক পর্যায়ে তিনি নামাজে সূরা ফাতেহার পরে সূরা আল্ যিলযাল তিলওয়াত করছিলেন। এক পর্যায়ে তাঁর কণ্ঠ ভারী হয়ে এলো। পরে তাঁর কণ্ঠ আরো ভারী হয়ে কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। খতিব শেখ আবদুর রহমান আস সুদাইস-এর তিলওয়াতের সাথে সাথে আমার পাশের্^ দ-ায়মান মুসল্লিরাও নিজেদের কান্না ধরে রাখতে পারলেন না। আমার পাশের্^র মুসল্লিরা ছিলেন আরবি ভাষা-ভাষী। আমরা ছিলাম মসজিদুল হারামের বাইরে খোলা মাঠে। এসময় পুরো মাঠেই একটা নীরব কান্নার রুল শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছেন। কেনো জানি আমারও চোখে পানি এসে গেলো। বুক ফেটে কান্না আসলেও তা সামলিয়ে চোখের জলে কপোল ভিজে যাচ্ছিলো। খতিব শেখ আবদুর রহমান আস সুদাইস সূরা আল্ যিলযাল পাঠ করা পর্যন্ত নিজে অশ্রু বিসর্জন দিয়েছেন সাথে সাথে লক্ষ লক্ষ মুসল্লিকেও কাঁদিয়েছেন।

ঘটনা এতটুকুই। আমি জানতাম নামাজ শেষে মুনাজাত করার সময় খতিব, ইমাম সাহেবরা অনেক সময় আল্লাহ্ তা’আলার করুণা প্রার্থনা করে মুনাজাতের মাধ্যমে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং মুসল্লিদের কাঁদান। কিন্তু নামাজের সময় ক্বিরাত বা তিলওয়াতের মাধ্যমেও যে ইমাম বা খতিব সাহেবরা অশ্রু বিসর্জন করেন এবং মুসল্লিদেরকে কাঁদান তাই এই প্রথম দেখলাম। সেদিন মসজিদুল হারামের খতিব শেখ আবদুর রহমান আস সুদাইসির ক্বিরাত বা তিলওয়াত শুনে অন্যান্যদের সাথে আমিও নিজের বুকের কান্নাকে ধরে রাখতে পারিনি। আমি সেদিন মসজিদুল হারামের চত্বরের মধ্যে নামাজ আদায় করতে অশ্রুকে ধরে রাখতে পারিনি কিন্তু না বুঝে। কথায় আছে না, ‘পাগলের তিন হাসি।’ অনুরূপ আমার অবস্থাও হয়েছিল তাই। পাগলের তিন হাসির মধ্যে প্রথমত. পাগল হাসে সবাই হাসে সে জন্য, দ্বিতীয়ত. কিছুই না বুঝে পাগল নিজে নিজে হাসে, আর তৃতীয়ত. হাসার বিষয় বস্তু বুঝতে পেরেই পাগল নিজেই হাসে। সেদিন আমিও আমার পাশের্^র মুসল্লিদের কান্না দেখে নিজে না বুঝে নিজের অশ্রু সংবরণ করতে পারিনি আর তাই কেঁদে ফেলেছিলাম। কিন্তু এই কান্নার উৎস তথা খতিব শেখ আবদুর রহমান আস সুদাইসির ক্বিরাত পাঠে বা তিলওয়াতে মুসল্লিরা কেনো কান্না করলেন তা অন্বেষণ করার আগ্রহ পেয়ে বসলো।

প্রাক্কথন :

আমাদের পারিবারিক নিয়ম অনুযায়ী স্কুলে বা মক্তবে যাওয়ার আগেই আম্মা সিপারা বা আমপারার হাতে কড়ি নিতে হয়। আর সেটা বাড়িতে মওলানা সাহেব রেখেই। আমরা সেই বাল্যকালেই আমপারা শেষ করে কুরআন মজীদ খতম করা পর্যন্তই আল কুরআনের উপর আমার দখল। এটা মূলত বাড়ির হুজুরের (যিনি আরবি শিক্ষা প্রদান করেন স্থানীয় ভাষায় তিনিই হুজুর) কাছ থেকে আল কুরআন পাঠ শিক্ষা গ্রহণ করে হুজুরকে পাঠদান বা পাঠ আদায় করা পর্যন্তই। ফলে আল কুরআনের কোন্ সূরাতে কী বর্ণনা আছে, কোন্ সূরার অর্থ কী, সূরার শানে নুযুল কী তা কিছু জানি না বা জানার আগ্রহও ছিলো না, জানার দরকারও ছিলো না। আমি মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করিনি। তবে মাধ্যমিক স্কুলে আমাদেরকে বাধ্যতামূলক একশত নাম্বারের ইসলাম ধর্ম শিক্ষা বা ইসলামিয়াতের পরীক্ষা দিতে হতো। এর মধ্যে কিছু অংশ ছিল আরবি। আরবিতে গ্রামারসহ সাধারণ পাঠ্য বিষয়গুলো ছিলো। ইসলামিয়াতের মধ্যে ৪০টি হাদিস যেমন পড়তে হতো তেমনিভাবে কুরআন মজীদের নির্দিষ্ট কিছু সূরা শানে নুযুলসহ অর্থ পড়া বাধ্যতামূলক ছিলো। তবে মাদ্রাসা শিক্ষা বা আরবি বা কুরআন মজীদের উপর বেশি পড়ালেখা না থাকার কারণে আল কুরআনের মর্মার্থ বা কুরআনের গভীরতা সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিলো না।

মসজিদুল হারামে নামাজের সময় খতিব হযরত শেখ আবদুর রহমান আস সুদাইস-এর তিলওয়াত শোনার পরে অশ্রু সংবরণ না করার ফলে কুরআন মজীদকে গভীরভাবে পাঠ করার আগ্রহ সৃষ্টি হলো।

দেশে ফিরে আসার পরেই কুরআন মজীদ পড়া শুরু। বিশেষ করে কুরআন মজীদের বিভিন্ন সূরার সানে নুযুল, বঙ্গানুবাদ, ব্যাখ্যা ও পর্যালোচনা পাঠ এখনও অব্যাহত রয়েছে। মূলত এর মাধ্যমেই কুরআন মজীদের বিভিন্ন সূরার মর্মার্থ সম্পর্কে মোটামুটিভাবে একটি ধারণা পেতে থাকি। একটি স্বচ্ছ ধারণা পাই সূরা আল যিলযাল সম্পর্কেও।

কী আছে সূরা আল যিলযালে :

মহাগ্রন্থ কুরআন মজীদে সর্বমোট ১১৪ টি সূরা রয়েছে। আল যিলযাল কুরআন মজীদের ৯৯তম সূরা। এই সূরা আল যিলযালে মোট ৮টি আয়াত রয়েছে। আয়াতগুলোর বাংলা শাব্দিক অর্থ নি¤েœ প্রদান করা হলো।Ñ

১. যখন পৃথিবীকে প্রবলবেগে ঝাঁকুনি দেয়া হবে। ২. পৃথিবী তার ভেতরের সমস্ত ভার বাইরে বের করে দেবে। ৩. আর মানুষ বলবে, এর কী হয়েছে? ৪. সেদিন সে তার নিজের (ওপর যা কিছু ঘটেছে সেই) সব অবস্থা বর্ণনা করবে। ৫. কারণ তোমার রব তাকে (এমনটি করার) হুকুম দিয়ে থাকবেন। ৬. সেদিন লোকেরা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থায় ফিরে আসবে, ৭. যাতে তাদের কৃতকর্ম তাদেরকে দেখানো যায়। ৮. তারপর যে অতি অল্প পরিমাণ ভালো কাজ করবে সে তা দেখে নেবে এবং যে অতি অল্প পরিমাণ খারাপ কাজ করবে সে তা দেখে নেবে।

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য :

সূরা আল যিলযাল-এর বিষয়বস্তু হচ্ছে, মৃত্যুর পরবর্তী জীবন এবং সেখানে দুনিয়াতে করা সমস্ত কাজের হিসেব মানুষের সামনে এসে যাবে। সর্বপ্রথম তিনটি ছোট ছোট বাক্যে বলা হয়েছে, মৃত্যুর পর মানুষের দ্বিতীয় জীবনের সূত্রপাত কিভাবে হবে এবং মানুষের জন্য তা হবে কেমন বিষ্ময়কর। তারপর দু’টি বাক্যে বলা হয়েছে, মানুষ এই পৃথিবীর বুকে অবস্থান করে নিশ্চিন্তে সব রকমের কাজ করে গেছে। সে কোনো দিন কল্পনাও করতে পারেনি যে, এই নি®প্রাণ জিনিস কোনো দিন তার কাজকর্মের পক্ষে-বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে। আল্লাহ্ তা’আলার হুকুমে সেদিন সে কথা বলতে থাকবে। প্রত্যেকটি লোকের ব্যাপারে সে বলবে, কোন্ সময় কোথায় সে কী কাজ করেছিল। তারপর বলা হয়েছে, সেদিন পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ নিজেদের কবর থেকে বের হয়ে দলে দলে আসতে থাকবে। তাদের কর্মকা- তাদেরকে দেখানো হবে। এমন পূর্ণাংগ ও বিস্তারিতভাবে এই কর্মকা- পেশ করা হবে যে, সামান্য বালুকণা পরিমাণ নেকি বা পাপও (সওয়াব ও গুনাহ্) সামনে এসে যাবে। যা হিসাব থেকে বাদ যাবে না।

খতিব শেখ আবদুল রহমান আস সুদাইসির কান্না :

পবিত্র মসজিদুল হারামের খতিব মাওলানা শেখ আবদুর রহমান আস সুদাইস আরবের বাসিন্দা ও আরবি ভাষাভাষী। ফলে তিনি কুরআন মজীদের ভাষা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখেন। কুরআন মজীদের সূরা ইউসূফ-এর ২ নম্বর আয়াতে রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেছেন এভাবে, ‘আমি এটাকে কুরআন হিসেবে আরবি ভাষায় নাযিল করেছি, যাতে তোমরা (আরববাসি) তা ভালোভাবে বুঝতে পারো।’

একই ভাবে আল কুরআনের সূরা রা’দ-এর ৩৭ নম্বর আয়াত, সূরা নাহল-এর ১০৩ নম্বর আয়াত সূরা ত্বা’হা-এর ১১৩ নম্বর আয়াত, সূরা শু’আরার ১৯৫ নম্বর আয়াত, সূরা যুমারের ২৮ নম্বর আয়াত, সূরা হা-মীম সাজদাহ-এর ৩ ও ৪৪ নম্বর আয়াত, সূরা শূরার ৭ নম্বর আয়াত, সূরা যুখরুফ-এর ৩ নম্বর আয়াত ও সূরা আহকাফ-এর ১২ নম্বর আয়াতে এব্যাপারে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। আরবি ভাষাভাষী আরববাসির জন্য আরবি ভাষার এই কুরআন মজীদ নাজিল করা হয়েছে যাতে করে আরবি ভাষাভাষিরা আল কুরআনের বক্তব্য পড়তে ও বুঝতে পারেন।

পরম করুণাময় আল্লাহ তা’আলা কিয়ামত (পৃথিবী ধ্বংস) সম্পর্কে কুরআন মজীদের বিভিন্ন সূরাতে এরশাদ করেছেন। কিন্তু সূরা ‘আল্ যিলযাল’-এ এব্যাপারে সবচেয়ে বেশি ও বিষদভাবে এরশাদ করেছেন।

সূরা আল যিলযাল-এর ‘যালযালাহু’র অর্থ করতে গিয়ে মুফাস্সিরগণ বলেছেন, একাধিক্রমে পরপর জোরে জোরে ঝাড়া দেয়া। কাজেই ‘যুল্যালাতিল্ আরদ্বু’ বলতে ধাক্কার পর ধাক্কা দিয়ে এবং ভূমিকম্পের পর ভূমিকম্পের মাধ্যমে পৃথিবীকে ভীষণভাবে কাঁপিয়ে দেয়া হবে। আর যেহেতু পৃথিবীকে নাড়া দেবার কথা বলা হয়েছে তাই এ থেকে আপনা-আপনিই এই অর্থ বের হয়ে আসে যে, পৃথিবীর কোনো একটি অংশ কোনো একটি স্থান বা অঞ্চল নয় বরং সমগ্র পৃথিবীকে কম্পিত করে দেয়া হবে। তারপর এই নাড়া দেবার এই ভূকম্পনের ভয়াবহতা আরো বেশি করে প্রকাশ করার জন্য তার সাথে বাড়তি ‘যিলযালাহা’ শব্দটি বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এ শব্দটির শাব্দিক মানে হচ্ছে, “কম্পিত হওয়া।” অর্থাৎ তার মতো বিশাল ভূগোলককে যেভাবে ঝাঁকানি দিলে কাঁপে অথবা যেভাবে ঝাঁকানি দিলে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে ভীষণভাবে কাঁপে ঠিক সেভাবে তাকে ঝাঁকানি দেয়া হবে।

কিয়ামতের প্রথম পর্বের সূচনা হবে যে কম্পন থেকে এটি হচ্ছে সেই কম্পন। অর্থাৎ যে কম্পনের পর দুনিয়ার সব সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তার সমগ্র ব্যবস্থাপনা ওলট-পালট হয়ে যাবে। কিন্তু মুফাস্সিরগণের একটি বড় দলের মতে যে কম্পনের মাধ্যমে কিয়ামতের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হবে অর্থাৎ যখন আগের পিছের সমস্ত মানুষ পুনর্বার জীবিত হয়ে উঠবে, এটি সেই কম্পন। মুফাস্সিরগণের মতে ধাক্কার পরেই পৃথিবীর সমস্ত পাহাড়-পর্বত ধ্বংস হয়ে পেঁজা তুলার মতো উড়তে থাকবে। মানুষ কবর থেকে উঠে হাশরের ময়দানের দিকে দৌঁড়াতে থাকবে।

সেদিন মসজিদুল হারামে তারাবিহ্ নামাজ আদায় করার সময় খতিব শেখ আবদুর রহমান আস সুদাইস আরবের অধিবাসী আরবি ভাষাভাষী বলেই সূরা আল্ যিলযালের মর্মার্থ হৃদয়ঙ্গম করেছেন এবং সূরার মর্মার্থ তাঁকে প্রভাবিত করেছে। বিশেষ করে কিয়ামত কীভাবে সংগঠিত হবে এবং কিয়ামত পরবর্তী কী কী সংগঠিত হবে তা তিনি বুঝতে পেরেছেন বলেই রাব্বুল আলামীনের সেই বাণী তাঁর অন্তরে স্পর্শ করেছে। যার ফলে তিনি সেই দিনের ভয়াবহতার কথা স্মরণ করে, সেদিনের ভয়-বিহ্বলতায় কেঁদে ফেলেছেন। একই সাথে যেসব আরববাসী এবং যারা কুরআন মজীদের সূরা আল যিলযাল সম্পর্কে ধারণা রাখেন তাঁরা সবাই কেঁদে ফেলেছেন। কিন্তু আমি আরবের বাসিন্দা নই। আমিও অন্যান্যদের দেখাদেখি অনুপ্রাণিত বা অনুরণিত হয়ে কেঁদে ফেলেছিলাম। সেদিন আমার মতো আরও অনেক অন-আরব ওখানে নামাজের সময় কেঁদে ফেলেছিলেন। খতিব শেখ আবদুর রহমান আস সুদাইস সেদিন নামাজে তিলওয়াতের সাথে সাথে কেনো কেঁদে ফেলেছিলেন তা অবশ্যি আমি পরে বুঝতে সক্ষম হই। বিশেষ করে কুরআন মজীদের সূরা আল যিলযাল পাঠ, সূরার শানে নুযুল, বাংলা অর্থ ও ব্যাখ্যা জানার কারণেই। ইসলাম ধর্মের বিশ^াস ও সূরা আল যিলযালের বর্ণনা মতে মানুষের পুনরুত্থান দিবস এবং পুনরুত্থান পরবর্তী সময়ের চিত্র যখন চোখের সামনে ভেসে উঠে এবং নিজের ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ পাপগুলোর শাস্তির কথা ভেবে মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই ভয়ে কেঁপে উঠবে ও কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়বে।

সূরা যিলযাল তিলওয়াতে কক্সবাজারে দ্বিতীয়বার কান্না :

২০১৬ সালে অক্টোবর বা নভেম্বরের কথা। তখন সময় বিকাল ৫টার কাছাকাছি। আমি তখন বাসায় একা একা কম্পিউটারে লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। হঠাৎ পুরো বিল্ডিংটা দুলে উঠলো। এসময় আমি কম্পিউটারের সামনে চেয়ারে বসা ছিলাম। বিল্ডিংটা দুলে উঠার সাথে সাথে আমি চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠলাম। লক্ষ করলাম বাসার আলমিরা, ফ্রিজ, চেয়ার, টেবিল, বুকসেল্ফসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ঝন ঝন আওয়াজে লাফাচ্ছে। আমি বিল্ডিং-এর চারতলায় ছিলাম বলেই বিল্ডিং-এর ঝাঁকুনি বেশি অনুভব করলাম কিনা? দেখি আবারো পুরো বিল্ডিং মুচড় দিয়ে উঠছে। বিল্ডিং-এ একাধিক ধাক্কার ফলে ভবনের অপরাপর তলার ছেলে-বুড়ো-মহিলার আর্তচিৎকার শোনা যাচ্ছিলো। আমি একা একা বিল্ডিং-এর ভেতরে উচ্চস্বরে আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে আযান দেওয়া শুরু করলাম। সেই বাল্যকাল থেকেই বাবা, মা, দাদা, দাদিদের কাছ থেকে শুনে এসেছি ভূমিকম্প হলে আযান দিতে হয়। এতে করে পৃথিবীতে আল্লাহ্র রহমত নেমে আসে এবং ভূমিকম্প থেমে যায়। ভূমিকম্পের সময় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সঙ্গবদ্ধভাবে উলু ধ্বনি দিয়ে থাকে।

যাক সে কথা। মনে ভয়ে ধরে গেলো যেনো পুরো বিল্ডিং এখন ধ্বসে পড়বে। হয়তো আজই আমাদের শেষ দিন। মানুষ বিপদে পড়লে আল্লাহ্কে বেশি বেশি স্মরণ করে, আমিও তো মানুষ, এর বাইরে নই। এসময় কুরআন মজীদের সূরা আল যিলযালের বর্ণিত কিয়ামতের ভয়াবহতা মনে পড়ে গেলো। হয়তো আজকেই সূরা আল যিলযালে বর্ণিত সেই দিন। কিন্তু মিনিট দুই-এক পরে বিল্ডিং-এর কাঁপুনি থেমে গেলো। তার কয়েক মিনিট পরেই বাসার পাশের বদর মোকাম মসজিদের মাইক থেকে মাগরিবের নামাজের আযানের শব্দ ভেসে এলো। মাইকে নামাজিদের আহবান করা হচ্ছে,Ñ ‘হাইয়্যালাস সালাহ্, ‘হাইয়্যালাস সালাহ্ (নামাজের জন্য এসো, নামাজের জন্য এসো), ‘হাইয়্যালাল ফালাহ্, ‘হাইয়্যালাল ফালাহ (কল্যাণের জন্য এসো, কল্যাণের জন্য এসো)।

ভূমিকম্পের ধাক্কার পরে একটু একটু করে স্বাভাবিক হলাম। অযু করে মাগরিবের নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদে গেলাম। তখন মসজিদে ইমাম হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন কক্সবাজার সদর উপজেলার বর্তমান জালালাবাদ ইউনিয়নের ফরাজীপাড়ার বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন হাফেজ ক্বারী মোহাম্মদ ইউনুছ ফরাজী। তিনি একজন কুরআনে হাফেজ শুধু নন, তিনি একজন প্রখ্যাত ক্বারীও। একই সাথে তিনি দারুল আরকাম নামের একটি হেফজখানা পরিচালনা করেন। নামাজে তিনি সূরা ফাতিহার পরেই সূরা আল যিলযাল তিলওয়াত করলেন। তিনি নিজে আরবি ভাষার উপর বিশেষজ্ঞব্যক্তি হিসেবে সূরা আল যিলযালের ভাবার্থ বুঝে কেঁদে ফেললেন। একই সাথে আমিও সূরা আল যিলযাল তিলওয়াতের পরে কেঁদে ফেললাম। কিন্তু মসজিদে ইমামের পেছনে দ-ায়মান অন্য কোনো মুসল্লির মধ্যে ভূমিকম্প বা সূরা আল যিলযাল তিলওয়াতের কোনো প্রভাব দেখলাম না। নামাজ শেষে দেখা গেলো মসজিদের অর্ধেক অংশে মাত্র মুসল্লি ছিলো। মসজিদের বাকী অর্ধেক অংশের কাতারগুলো ছিলো শূন্য। আমার ভাবতেও অবাক লাগলো ভয়াবহ একটি ভূমিকম্প আমাদেরকে ছেয়ে ফেলেছিলো। হয়তো আজকেই আমাদের জীবনের শেষ ক্ষণটি ছিলো। সেই ভয়াবহতা থেকে রেহাই পাওয়ার পরও মানুষ মসজিদ মুখো হলো না। সে কারণেই বুঝি রাব্বুল আলামীন কুরআন মজীদের সূরা আল আহযাবের ৭২ নম্বর আয়াতে এরশাদ করেছেন এভাবে, “……………….. কিন্তু মানুষ একে বহন করেছে নিশ্চয়ই সে বড়ো জালেম ও অজ্ঞ।”

অভিব্যক্তি :

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মসজিদে ফজর, মাগরিব, এশা ও জুমার নামাজে সূরা ফাতিহার পরেই অনেক ইমাম বা খতিব সাহেবরা সূরা আল যিলযাল তিলওয়াত করেন। কিন্তু সূরা আল যিলযাল তিলওয়াতে কোনো খতিব বা ইমামকে এই সূরার বাস্তবতা বা ভয়াবহতা স্পর্শ (মসজিদুল হারাম বা বদর মোকাম মসজিদের খতিব ও ইমামের তিলওয়াত ছাড়া) করেছে বলে আমার জানা নেই, এমন কি এরকম ঘটনার কথা শুনিনি। প্রশ্ন আসতে পারে, যাঁরা কুরআনে হাফেজ বা মুফাস্সির বা কুরআনের উপর বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ যাঁরা মসজিদের খতিব বা ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যাঁরা হাজার হাজার মুসল্লির সামনে নামাজে ইমামতি করেন সূরা আল যিলযালের ভয়াবহতা বা সূরার মর্মার্থ কি তাদেরকে স্পর্শ করে না? সূরার মর্মার্থ কি তাঁদের অন্তরের কোমল স্থানে আঘাত করে না? আমরা যারা কুরআন মজীদ সম্পর্কে অজ্ঞ, আরবি ভাষায় নাজিলকৃত আল কুরআন পাঠ করা ছাড়া অন্য কোনো ভাবেই আমাদেরকে তা স্পর্শ না করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু খতিব, ইমাম সাহেব যাঁরা কুরআন মজীদের উপর বিশেষজ্ঞ তাঁদেরকে সূরা আল যিলযাল স্পর্শ না করা বা সূরায় বর্ণিত ভয়াবহতা ও ভীতি নাড়া না দেওয়া খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা। হ্যাঁ, হতে পারে মসজিদুল হারামের ইমাম শেখ আব্দুর রহমান আস সুদাইস-এর মত অন্যান্য ইমামদের অন্তর অত কোমল নয়। তাঁরা সুরা আল যিলযাল বা অন্য সূরাতে কিয়ামতের ভয়াবহতা বা দোজখের ভয়াবহতা, ভীতি সম্পর্কে ওয়াকেবহাল হলেও নামাজে হয়তোবা কান্না সংবরণ করতে পারেন।

মানুষ এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে যেতে চায় না। এই নিয়ে কতো সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে তার কোনো পরিসমাপ্তি নেই। ফলে মানুষ যখন কোনো বিপদে পড়ে, মানুষ যখন দেখে তার সামনে মহাবিপদ এই বিপদে বুঝি তিনি শেষ হয়ে যাবেন বা তাঁর মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে তখন বিষয়টি তাঁর হৃদয়ের কোমল স্থানে আঘাত করে এবং বুক ফেঁটে কান্না আসে। বুকের সেই কান্নাটা চোখের জল হয়ে ঝরে পড়ে।

এখানে একথা বলা অমুলক হবে না যে, যারা সূরা আল যিলযাল তিলওয়াত করেন তাদেরকে সূরার বিষয়বস্তু, ভয়াবহতা, সূরার বাস্তবতা, ভীতি স্পর্শ করে না বলেই তারা সূরা আল যিলযাল তিলওয়াতের সময় নির্লিপ্ত থাকেন।

নামাজে কান্না

প্রশ্ন আসতে পারে নামাজে ক্রন্দন করা যাবে কিনা? ক্রন্দন করলে নামাজ হবে কিনা? স্বাভাবিকভাবে নামাজরত অবস্থায় উচ্চস্বরে ক্রন্দন করা যাবে না। উচ্চ শব্দ করে ক্রন্দন করলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে। হ্যাঁ, তবে নামাজে কান্না করার বিধানও আছে। যদি কোনো ব্যক্তি নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্ তা’আলার সানে নিজেকে সপে দেন যখন নিজের অন্তর থেকে কান্না বেরিয়ে আসে। যে কান্না কোনো অবস্থাতেই আটকানো যায় না। সেই কান্না ফুপিয়ে ফুপিয়ে নয় বরঞ্চ অন্তরের অন্তস্থল তথা হৃদয়ের কোমলস্থান থেকে নিসৃত কান্নাগুলো চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে। চোখের জলে কপোল ভিজে যায়। মুখে দাঁড়ি থাকলে দাঁড়ি সমেত শরীরের জামা ভিজে যায়। অনেক সময় গোঙ্গানির শব্দ পাশর্^বর্তী ব্যক্তিরা অনুমান করতে পারে বা বুঝতে পারে। আর কেরাত বা তিলওয়াত করলে গলা ভারী হয়ে যায়। এতে মনে করা যায়, তাঁর অন্তরের কোমলস্থান থেকে কান্না বেরিয়ে আসছে যা তিনি আটকাতে পারছেন না।

আল কুরআন করিম ও হাদিস শরীফে নামাজে কান্নাকে সমর্থন করেছে।

আল্লাহ্ তা’আলা আল কুরআন করিমের সুরা আনফালের (সুরা নং-৮) ২-৪ নম্বর আয়াতে এরশাদ করেছেন এভাবে, “সাচ্চা ঈমানদার তো তারাই, আল্লাহ্কে স্মরণ করা হলে যাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে। আর আল্লাহ্র আয়াত যখন তাদের সামনে পড়া হয় তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা নিজেদের রবের ওপর ভরসা করে। নামাজ কায়েম করে এবং আমি যা দিয়েছি, তা থেকে অন্যের জন্যে ব্যয় (দান) করে। এরাই প্রকৃত বিশ্বাসী। প্রতিপালকের কাছ থেকে এরা পাবে মর্যাদা, ক্ষমা ও উত্তম জীবনোপকরণ।”

এ থেকে আমরা বুঝতে পারি আল্লাহকে স্মরণ করা হলে বা আল্লাহ্ যেসব ভয়াবহ আযাবের কথা বলেছেন নামাজরত অবস্থায় তিলওয়াতের সময় সেসব যখন চোখের সামনে ভেসে উঠে এবং তা স্মরণ করে হৃদয় কেঁপে উঠে তখন স্বাভাবিকভাবেই হৃদয়ের কোমল স্থান থেকে কান্না বেরিয়ে আসবে, সেই কান্নাকে কোনো অবস্থাতেই থামানো যাবে না। এপ্রসঙ্গে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে এভাবে, ‘সুওয়ায়দ ইব্ন নাসর র…. আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাই হিস সালাম-এর কাছে আসতাম, তখন তিনি সালাত আদায় করছিলেন, আর তাঁর ভিতরে ডেকচির শব্দের ন্যায় শব্দ হচ্ছিল। অর্থাৎ তিনি কাঁদছিলেন।’ (সুনানে আবু দাউদ-১২১৭)।

সুনানে আবু দাউদ রহ. বর্ণিত ৯০৪ হাদিসে আবদুর রহমান ইবন মুহাম্মদ র. ….. মুতাররিফ র. থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন : একদা আমি রাসূলুল্রাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহে ওয়া সাল্লামকে এমতাবস্থায় নামায আদায় করতে দেখি যে, তাঁর বক্ষ মোবারক হতে ক্রন্দন ধ্বনি শ্রুত হচ্ছিলÑÑ(নাসাঈ, তিরমিযী)।

উপসংহার :

আমরা আমাদের সাদা চোখে দেখতে পাই, সূরা আল যিলযাল পবিত্র কুরআন মজিদের একটি সূরা মাত্র। কিন্তু এর গভীরতা কত বেশি, সূরার বাস্তবতা, সূরার মর্মার্থ, সূরার ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা মোটেই ধারণা রাখি না। প্রকৃত অর্থে, সূরা আয্ যিলযাল-এ পৃথিবী ধ্বংস তথা কিয়ামত সংগঠিত হওয়া, মানুষের পুনরুত্থান এবং পুনরুত্থান পরবর্তী মানুষের অবস্থা সম্পর্কে মর্মন্তুদ বর্ণনা রয়েছে। বিশেষ করে আমার মতো অজ্ঞ আজমী-রা বা অনারবরা এসম্পর্কে উদাসীন বা ওয়াকিবহাল নই। কারণ আমাদের মাতৃভাষা আরবি নয়। মায়ের জটর থেকে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণের পরে যখন মুখে কথা ফোঁটে তখন আমরা আমাদের মাতৃভাষাতেই কথা বলা শুরু করি।

যারা প্রকৃত অর্থে নায়েবে রাসূল সা., যারা কুরআন মজীদ সম্পর্কে বিশেষভাবে জ্ঞান রাখেন, মসজিদের খতিব, ইমাম সাহেবদের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিত আমার মতো অজ্ঞদেরকে সূরা আল যিলযাল শুধু নয়, কুরআনের বিভিন্ন সূরায় বর্ণিত শাস্তি ও পুরস্কার সম্পর্কে বেশি বেশি ধারণা বা বয়ান দেওয়া।

একই সাথে যাদের পক্ষে সম্ভব পরিবারের সদস্যদেরকে বেশি বেশি কুরআন মজীদ ও হাদিস পাঠ এবং এর ভাবার্থ, মর্মার্থ সম্পর্কে অবগত ও ওয়াকিবহাল করার মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারকে ইসলামী আদর্শে দীক্ষা প্রদান ও অভ্যাস গড়ে তোলা অপরিহার্য।

সূরা আল যিলযাল সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রেওয়াইৎ করেছেন। এসব রেওয়াতের মধ্যে,Ñ ইমাম তিরমিযী রা. … আনাস রা. হতে বর্ণনা করেন যে, আনাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘কেহ সূরা আল যিলযাল পাঠ করলে সে অর্ধেক কুরআন তিলাওয়াতের সওয়াব পাবে।’ অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন : “সূরা এখলাছ পূর্ণ কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান আর সূরা আল যিলযাল এক চতুর্থাংশের সমান।”

ইমাম তিরমিযী রা…. ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণনা করেন যে, ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : “সূরা আল যিলযাল কুরআনের অর্ধেক, সূরা এখলাছ এক তৃতীয়াংশ এবং সূরা কাফিরূন এক চতুর্থাংশের সমান।”

মহান রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে এব্যাপারে বেশি বেশি আমল করার তওফিক দান করুন। আমিন। সুম্মা আমিন।

লেখক : গবেষক, ইতিহাস লেখক, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী।