– আব্দুল মান্নান রানা :

তবে চলুন, কাজটা বুঝে নিয়ে দায়িত্ব থেকে নৈতিক দায়িত্বের ফর্মুলায় ফেলে বরাবর কষে ফেলি!!

কথাটি আপনার, আমার, আমাদের সবার। আমরা সকলেই এই রোগে সংক্রামিত। স্বপ্ন দেখি সারাটি জীবন অমৃতের স্বাদ নেওয়ার কিন্তু কাজ করি ভীষণ অল্প।

আমার একজন অন্তরঙ্গ বন্ধু আছে। নাম রুহুল আমিন। বেচারা খুব সাদামাঠা একজন সরল ও তারুণ্য দীপ্ত তরুণ। দেশ প্রেম এবং মানবপ্রেমে তার হৃদয়পটে শতসহস্র দাগ কেঁটেছে।
সেদিন, কথা বলছিলাম যে শহরে বাস করি সেই শহরের ধূলাবালি,যত্রতত্র ময়লা ফেলা,রাস্তায় গাড়িচালকদের অনিয়ম গাড়িচালানো,শহরেও মৃদু পানির দারুণ সংকট,দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিদের অনেকের দায়িত্বহীনতা প্রভৃতি বিষয়ে।

সেই বলে, মান্নান

আমি যদি দায়িত্ব পায় তবে সেটিকে সম্পূর্ণ নৈতিক দায়িত্বে রূপান্তর করে আন্তরিকভাবে কাজ করব!আমি বললাম ততদিনে এই সমস্যায় ভোগান্তিতে পড়ে শহরের নারী পুরুষ সহ হাজার হাজার শিশু।অকালে ঝরে যাবে হাজারো স্বপ্নবিলাসী মানুষের স্বপ্ন!

যারা প্রত্যেকেই চাই একটি সুন্দর সবুজ পৃথিবী!

বন্ধু আমার! চোখের কোণোই জমাট বদ্ধ হওয়া অশ্রু ধারা আর ধরে রাখতে পারলেন না।
বলল, মান্নান, এভাবেই কি আমাদের সকলের অসচেতনতার কারণে প্রিয় মাতৃভূমিটি তলিয়ে যাবে?!তবে এত অাত্মহতি,ত্যাগ,রক্তদান করে স্বাধীনতা অর্জন করার কি দরকার ছিল?!

সমাধান কি?!
কার দিকে আঙ্গুলনির্দেশ করব?!
জবাব একটাই!যেহেতু, আমরা পরিবর্তন চাই সেহেতু, সচেতন আগে আমাকে,আপনাকে এবং আমাদের সবাইকে হতে হবে।

দায়িত্ব যারা পেয়েছে তারা যেমন আমরাও প্রায় তেমন!

পৃথিবীতে এত কলুষতা, এত পঙ্কিলতা, এত আবিলতা,এত অরাজকতা, এত পুঁজ বিষ্ঠার মাঝে কি করে স্বস্তিতে থাকি?
সে ক্ষেত্রে পাল্টা প্রশ্ন করা যায়,’ এর জন্য দায়ী কে?
এর সমাধান কী? যেকোনো পরিবর্তনের শুরু করতে হয় নিজেকে দিয়ে।

চলুন আমার অপরাধ এবং দোষটা একটু বুঝেনি!
আমি কি নিজেকে কলুষমুক্ত,পঙ্কমুক্ত,অনাবিল এবং সুশৃঙ্খল করার প্রয়াস নিয়েছি কি না,তার জবাব না দিয়ে কোন অধিকারে অন্যের দিকে আঙ্গুলনির্দেশ করব?
আমি যদি কেবল আমাকে সুন্দর করতে পারি, তাতে নিঃসন্দেহে পৃথিবী থেকে একটি অসুন্দর তো কমে যায়!
আমরা যতই নিজেকে একক মনে করি না কেন, আমাদের চারপাশে কতজন আমাদের অনুসরণ করে তা জানতে পেলে আমরা হয়তো ভয়ে “হার্টফেল”করতাম!
সুতরাং শুদ্ধি অভিযানের শুরুটা হতে হবে আমাকে দিয়ে,বাকিটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ঘটবে।কিন্তু আমাদের সমস্যা হলো,আমরা নিজে করার চেয়ে অন্যকে করার নির্দেশ দিতে বেশি ভালবাসি।

এলাইনের উপরের কথাটা লিখা মাত্র হঠাৎ একটি স্মৃতি মনে পড়েছে। ভূলেও কেউ মনে করবেন না যে,আমি স্মৃতিচারণ করছি।

আসল কথায় আসি…
২০১৮ সালে কক্সবাজার সিটি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের উদ্যোগে
” ক্লিন ডিপার্টমেন্ট এন্ড হেলথি ক্লাসরুম “নামক
একটি বাস্তবধর্মীয় প্রোগ্রাম আমরা শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের সন্ধিক্ষণে করেছিলাম।শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক প্রায় সকলেই প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। তবে সব থেকে বড় আকর্ষণ যেটি ছিল সেটি হচ্ছে, আমাদের ডিপার্টমেন্টের প্রধান আমার পরম শ্রদ্ধেয় জনাব, এস এম আকতার উদ্দিন চৌধুরী স্যার শুরু থেকে শেষপর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ন্যায় সমানতালে ঝাড়ো হাতে নিয়ে কাজ করতে দেখেছিলাম।

সবাই অবাক! কিভাবে সম্ভব!
প্রোগ্রাম শেষে স্যারের কাছে গেলাম ইন্টারভিউ নিতে।
প্রশ্ন করলাম, স্যার আপনি একজন বিভাগীয় প্রধান হিসাবে আপনার দায়িত্ব ছিল আমাদের নির্দেশনা প্রদান করা। কিন্তু আপনি তা না করে বরং টানা ৩ ঘন্টা একজন শিক্ষার্থীর মত কাজেই করে গেলেন।
কিভাবে সম্ভব স্যার,

স্যার,প্রথম বাক্যে আমাকে উত্তর দেন এটিই ছিল আমার প্রধান নৈতিক দায়িত্ব এবং নির্দেশনা! নিজে করে অপরকে শেখাতে হয় ।

কিন্তু এমন মানুষ সংকটাপন্ন এ সমাজে নিহাত অল্প!আরো বেশি দরকার!!

যেটি বলতে চেয়েছিলাম, আমরা আসলে সবাই নির্দেশ দিতেই পছন্দ করি। কাজটি করে দেখাতে নয়।
ফলে নিজের তো পরিবর্তন হয় না, অপরের পরিবর্তনের সূচনাও হয় না।কারণ,আমার দ্বিমুখিতা তাকে বীতশ্রদ্ধ করে ফেলেছে।তাহলে পরিবর্তনের সম্ভাবনাটুকুই- বা সৃষ্টি হবে কোথা থেকে? আমরা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন না করেই পাওয়ার আশা করি,চুপ করে থেকে পরিবর্তনের আশা করি, নিজেকে ভুলের ঊর্ধ্বে মনে করে অন্যের দোষ খোঁজার চেষ্টা করি।
ফলে তা-ই হয়,যা হবার কথা। স্থবিরতা, হতাশা, নিরাশা,দুরাশা নামক নেগেটিভ শব্দগুলো আমাদের ভাইরাসের মতো ছেঁকে ধরে।এর থেকে পরিত্রাণের সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, আমার পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব তা সততার সাথে করে যাওয়া এবং বাকিটুকুর ব্যাপার সৃষ্টিকর্তার ওপর আস্থা রাখা।

” পরিবর্তন কোনো ঘটনা নয় বরং এটি একটি প্রক্রিয়া”
আসুন আমরা সবাই সমাজের চলমান সংকট নিরসনে নিদারুণ ভূমিকা রাখি!

Let’s make a great mind for building a peaceful world for next generation.


শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ , কক্সবাজার সিটি কলেজ