এম.মনছুর আলম, চকরিয়া:

সরকারি ভুমি ব্যবস্থাপনা কমিটির নীতিমালার আলোকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ১৯৪৬-৪৭ সালে ১০৭ নং বন্দোবস্তি মামলামুলে চকরিয়া উপজেলার করিয়ারদিয়া মৌজার ৮৩ একর জমির মালিক হন চকরিয়া উপজেলার পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়নের অন্তত ২০টি পরিবার। পরবর্তীতে ৫১-৫২ সালে ১০০ নং অপর একটি বন্দোবস্তি মামলামুলে ওই বিশটি পরিবার আরো ৩ একর এক শতক জমি পান জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে। ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারী জেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে উপকারভোগী ২০ পরিবারের নামে দলিল সম্পাদন করা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে উপকারভোগীদের মধ্যে সম্পাদিত দলিলমুলে ২০ পরিবারে আছেন পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়নের বাসিন্দা বদিউর রহমানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান, আশরাফ আলীর ছেলে আবদুর রশিদ, আকামদ্দিনের ছেলে রহিম দাদ, এয়াকুব আলীর ছেলে শোয়াইব আহমদ, সফিকুর রহমানের ছেলে নজির আহমদ, বদিউর রহমানের ছেলে মোজাফ্ফর আহমদ, বদিউর রহমানের ছেলে মফজল আহমদ, আজাদ আলীর ছেলে আবদুল করিম, আকামদ্দিনের ছেলে রহিম দাদ-১, আকামদ্দিনের ছেলে ফজল আহমদ, আজিমদ্দিনের ছেলে এলাহাদাদ, সরফত উল্লা’র ছেলে আবদুর রহমান, আমির হামজার ছেলে খলিলুর রহমান, আজগর আলীর ছেলে আবুল হাশেম, আকামদ্দিনের ছেলে জাবের আহমদ, মদন আলীর ছেলে আশরাফ আলী, ইব্রাহিমের ছেলে ফজলর রহমান , আবদুল জব্বরের ছেলে আবদুর রহিম-১, আবদুল কাদেরের ছেলে এজাহার মিয়া, তোমালীর ছেলে উলা মিয়া। প্রতিজন উপকারভোগী পরিবার ৪ একর ১৫ শতক হারে উল্লেখিত জমি বরাদ্দ পেয়েছেন।

উপকারভোগী পরিবার সদস্যরা জানান, সরকারিভাবে দুইটি বন্দোবস্তি মামলায় ২০টি পরিবার চকরিয়া উপজেলার করিয়ারদিয়া মৌজার ৮৬ একর লবণ মাঠ ও চিংড়িজমির মালিক হবার পরবর্তী সময়ে একই মৌজা থেকে দুদফায় জমি ক্রয় করেন। তারমধ্যে প্রথমদফায় ৩ একর ৬০ শতক ও দ্বিতীয় দফায় ৯ একর ৪৪ শতক। পাশাপাশি তাদের আগে থেকে ভোগদখলে আছে ওই মৌজার ভুইসাঘোনার ৪০ একর ২০ শতক ও কাটাবইন্যাঘোনার ৩৮ একর ৭০ শতক জমি। সবমিলিয়ে ২০ পরিবারের ভোগদখলীয় লবণ মাঠ ও চিংড়িজমির পরিমাণ ১৮০ একর ৯৫ শতক।

ভুক্তভোগী উপকারভোগী পরিবার সদস্যরা দাবি করেছেন, ১৯৯৯ সালের ২৫ অক্টোবর স্থানীয়ভাবে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে ২০ পরিবারের ভোগদখলীয় ১৮০ একর ৯৫ শতক লবণ মাঠ ও চিংড়িজমির রক্ষনাবেক্ষনের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে কাকতলীয়ভাবে বন্দোবস্তি প্রাপ্ত আবুল হাশেম, উলা মিয়া, এজাহার মিয়া, আবদুর রহিম, আবদুর রহমান ও শোয়াইব আহমদসহ ছয়জনের নাম বাদ দিয়ে তাদের পরিবর্তে কতিপয় একটি চক্র কৌশলে অপর ছয়জনের নাম সেখানে অন্তর্ভুক্ত করে দেন।

সুবিধাভোগী ছয়জন উপকারভোগী হলেন স্থানীয় ছৈয়দ উল্লাহ চৌধুরীর ছেলে ফরিদ উল্লাহ চৌধুরী, ডা.রাহমত উল্লাহ চৌধুরীর ছেলে আফতাব উল্লাহ চৌধুরী, অপর দুই ছেলে মমতাজ আহমদ চৌধুরী ও কফিল উদ্দিন, রফি উদ্দিন চৌধুরীর ছেলে আহমদ হোসাইন চৌধুরী, কবির আহমদ চৌধুরীর ছেলে মুজিবুল হক চৌধুরী।

উপকারভোগী পরিবার সদস্যদের অভিযোগ, চকরিয়া উপজেলার পশ্চিমবড় ভেওলা ইউনিয়নের দরবেশকাটা মসজিদের পাশের বাসিন্দা ডা.রাহমত উল্লাহ’র ছেলে মমতাজ আহমদ চৌধুরী ও পশ্চিমবড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিনের যোজসাজসে ২০টি পরিবারের মধ্যে উল্লেখিত ছয়টি পরিবারের জায়গা অবৈধভাবে লুটেপুটে খেতে পরিকল্পিতভাবে এ ধরণের জালিয়াতির ঘটনার আশ্রয় নেন।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ তুলেছেন, মমতাজ আহমদ চৌধুরীর বাড়ির উঠানে ৯৯ সালের আগে পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়ন ভুমি অফিসের শাখা কার্যালয় পরিচালনা করা হতো। এ সুযোগে ভুমি তহসিলদারের সঙ্গে গোপনে দফারফা করে অভিযুক্ত মমতাজ আহমদ চৌধুরী কুটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে বিশটি পরিবারের মধ্যে উল্লেখিত ছয়টি পরিবারের বন্দোবস্তিপ্রাপ্ত এসব জমি অবৈধভাবে ভুঁয়া কাগজপত্র সৃজনের মাধ্যমে দখলে নিয়েছে। বর্তমানে ২০টি পরিবারের ১৮০ একর লবণ মাঠ ও চিংড়িজমি লাগিয়ত দিয়ে জমি মমতাজ মিয়া ও সাবেক চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন প্রতিবছর আয়ের টাকা লুটপাটে মেতে উঠেছে।

ভুক্তভোগী পরিবার সদস্যদের দাবি মতে, ১৯৯৯ সালের পর থেকে চলতি ২০১৯ সাল পর্যন্ত দশবছরে জালিয়াতির মাধ্যমে উল্লেখিত পরিমাণ জমি রক্ষনাবেক্ষনে রেখে ‘ নকল জমিদার’ মমতাজ আহমদসহ তাদের সহযোহি চক্রটি অন্তত দশ কোটি টাকা লুটপাট করেছে। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে জালিয়াত চক্রের অন্যতম হোতা মমতাজ আহমদের কবল থেকে বরাদ্দপ্রাপ্ত বন্দোবস্তির লবণ মাঠ চিংড়িজমি উদ্ধারে কক্সবাজারের জজ আদালতের আইনের আশ্রয় নিয়েছেন ক্ষতির শিকার ছয়টি পরিবার।

তাদের মধ্যে আবুল হাশেম (১৪ নং শেয়ার) পক্ষে বাদি হয়েছেন লায়লা বেগম গং, অপর মামলা নং ২০৫/১৭। উলা মিয়া (২০ নং শেয়ার) পক্ষে বাদি হয়েছেন নাজেম উদ্দিন, অপর মামলা নং ৩০/০৮। এজাহার মিয়া (১৯ নং শেয়ার) পক্ষে বাদি হয়েছেন মাহমুদ হোসেন গং, অপর মামলা নং ০৯/১০। আবদুর রহিম (১৮ নং শেয়ার) বাদি হয়েছেন আবদুল জব্বার, অপর মামলা নং ৫৫/০৭, আবদুর রহমান (১২ নং শেয়ার) বাদি হয়েছেন হাবিবুর রহমান, অপর মামলা নং ২৩৩/১৭, ও শোয়াইব আহমদ (৪ নং শেয়ার) বাদি হয়েছেন আবদুল আজিজ ও জাফর । বর্তমানে মামলা গুলো আদালতে চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগী পরিবার সদস্যরা আক্ষেপ করে বলেছেন, সাবেক চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন সেইসময় পৈত্রিকভাবে অল্প পরিমাণ জমি পেয়েছেন। ভুমিহীন ক্যাটাগরীর লোক হওয়ায় ওইসময় আমরা তাকে একটি শেয়ার দিই। সেই থেকে তিনি মমতাজ মিয়ার সঙ্গে হাত করে এখন আমাদের ২০ পরিবারের বন্দোবস্তি, ক্রয়কৃত এবং ভোগদখলীয় খাসসহ মোট ১৮০ একর ৯৫ শতক লবণ মাঠ চিংড়িজমি অবৈধভাবে দখলে রেখেছে। বর্তমানে গরীরের সম্পদ লুটে নিয়ে তাঁরা বিপুল ধন সম্পদের মালিক বনে গেছেন।

জানতে চাইলে পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও মাতামুহুরী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা। তিনি বলেন, এ ধরণের ঘটনার ব্যাপারে ভুক্তভোগী পরিবার সদস্যদের অনেকে আমার কাছে অভিযোগ করতে এসেছিল। আমি তাদেরকে কাগজপত্র নিয়ে আসার জন্য বলেছি। দেখি কাগজপত্র দেখেই বিষয়টি সম্পর্কে সিদ্বান্ত জানাতে পারবো। তবে আমিও চাই প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে পরিবার গুলোর মালিকানা সত্যতা থাকলে উল্লেখিত জমি তাদেরকে ফেরত দেয়া হোক।