আব্দুল মালেক, সেন্টমার্টিন থেকে:
ঘুর্ণিঝড়ের নাম শুনলেই সবার আগে বুকটা কেঁপে উঠে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসীর। যেটি বঙ্গোপসাগরে ভাসমান একটি দ্বীপ। বর্ষাকাল আসা মানেই আতঙ্কে থাকে এ দ্বীপের ১০ হাজার মানুষ। কখন প্রাকৃতিক দূর্যোগ এসে লন্ডভন্ড করে দেয় জনজীবন। যেমনটাই করেছিল সুনামী, হারিকেন, নার্গিস, আইলা, সিডর, কোমেনসহ কতশত ছোট বড় প্রাকৃতিক দূর্যোগ লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল সেন্টমার্টিনকে। ভেঙে গিয়েছিল শতশত ঘরবাড়ি। উপড়ে পরেছিল দ্বীপের পেরেক খ্যাত হাজার হাজার নারিকেল ও কেঁয়া গাছ। উত্তাল সাগরে ডুবে গিয়েছিল অসংখ্য ফিশিং নৌকা ও যাত্রিবাহী সার্ভিস বোট। জোয়ারের নোনা পানি প্লাবিত হয়ে বিশুদ্ধ পানির ও খাবারের সংকট। শতবছর ধরে এভাবেই চলছে এ দ্বীপের মানুষের জনজীবন। নেই কোনো বেড়িবাঁধ। নেই কোনো সীট্রাক, সী এ্যাম্বুলেন্স। নেই কোনো পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র।

প্রলয়কারী ঘূর্ণিঝড় আসলে আশ্রয় নেওয়া জন্য পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র নাই সেন্টমার্টিন দ্বীপে। মহা বিপদ সংকট দেখা দিলে দ্বীপের ১০ হাজার জনবসতির জন্য তিনতলা বিশিষ্ট আছে মাত্র ১ টি সাইক্লোন শেন্টার। নামে মাত্র সাইক্লোন সেল্টার। যেটির নিচতলায় মসজিদ, দ্বিতীয় তলায় প্রায়মারী স্কুল, ৩য় তলায় পুলিশ ফাঁড়ি। দ্বীপের ১০ হাজার মানুষের বসতির জন্য রয়েছে সাইক্লোন শেল্টারের উন্মুক্ত ছাদটি।

রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির একটি দুতলা ভবন সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এখন তা গরু ছাগলের গোয়াল ঘর। দূর্যোগ সময়ে আশ্রয় নেয়ার মতো তেমন একটা পরিবেশ নেই রেডক্রিসেন্ট ভবনে। রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির দ্বীপে দূর্যোগের আগাম শতর্কতা বার্তা অর্থাৎ প্রাকৃতিক ঘুর্ণিঝড়ের পূর্ববর্তী প্রস্তুতি ও পরবর্তী করনীয় জানানোর জন্য ৫০ জন পুরুষ ও ২৫ জন নারীসহ মোট ৭৫ জন বিশিষ্ট একটি সেচ্ছাসেবক টিম রয়েছে।

সেচ্ছাসেবক টিম ম্যানেজমেন্টের ইউনিয়ন টিম লিডার সৈয়দ আলমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণী’র খবর পেয়ে আমরা গত তিনদিন আগে পুরো দ্বীপে মাইকিং করে জানিয়ে দিয়েছি ৪ নং বিপদ সংকেত ও ঘূর্ণিঝড় ফণী’র খবরটি। আমাদের সেচ্ছাসেবক টিম সেবা দেওয়ার লক্ষে সর্বাত্বক প্রস্তুত রয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণী’র আতঙ্কে দ্বীপের ১০ হাজার মানুষের বসতি। ৪ নং বিপদ সংকেত জানার পরেও আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা না পেয়ে নিজনিজ বাড়িতে অবস্থান করছে তারা।

দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা রশিদ আহমদ বলেন, ১০ নং মহা বিপদ সংকেত হলেও এই ভাঙা বাড়ি ছেড়ে যাবো কোথায় ? আশ্রয়কেন্দ্রে? নিচ তলায় মসজিদ, দ্বিতীয় তলায় স্কুল, তৃতীয় তলায় পুলিশ ফাঁড়ি। আমরা যাবো কোথায়? ছাদের উপর? ওখানেতো আরো বিপদ। নিজের ভাঙা বাড়িতে আছি ভালই আছি। আল্লাহ আমাদের বাঁচাবেন। দুর্দিনে আমাদের পাশে কেও আসেনা। আল্লাহই একমাত্র রক্ষাকর্তা। তিনিই রক্ষা করবেন।

এলাকার মুরব্বিদের দেখা যায় মসজিদে অবস্থান করতে। কেও নামাজে মগ্ন আবার কারো হাতে তাজবি। অনেকেই কোরআন তেলাওয়াত করছে। একইভাবে বাড়িতে বাড়িতে মহিলারাও আল্লাহর কাছে প্রার্থনায় মগ্ন অবস্থায় দেখা যায়।

স্থানীয় প্রবীণ মুরব্বি আজম আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণী’র খবর শুনেছি। গত ৪৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী রুপ নিয়ে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ফণী। এই মহা বিপদে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া আমাদের কিচ্ছু করার নেই। এ দ্বীপে আমরা প্রায় ১০ হাজার মানুষ বাস করি। কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয় ঘূর্ণিঝড় কিংবা বড় কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে পারিনা। হাতেগুনা কিছু সংখক আশ্রয় নিতে পারলেও বেশিরভাগ মানুষই নিজনিজ বাড়িতে অবস্থান করে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জনাব আব্দুর রহমান বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে ঘূর্ণিঝড় ফণী অনেক শক্তিশালী হয়ে ধেয়ে আসছে। শনিবার ভোর রাতে বাংলাদেশের উত্তর-দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে এমনটাই জানা যায়। দ্বীপের মানুষের আশ্রয়ের জন্য একটি তিনতলা বিশিষ্ট সাইক্লোন সেল্টার এবং একটি রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির দুতলা বিশিষ্ট আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় পুর্বাভাশ বুঝে আমাদের পরিষদের সেচ্ছাসেবী দল এবং রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সেচ্ছাসেবক টিমসহ দ্বীপের সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তাছাড়া দ্বীপে বড়-ছোট শ-খানিক হোটেল রিসোর্ট রয়েছে। প্রয়োজনে দ্বীপের মানুষের আশ্রয়ের সুবিধার্থে উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য হোটেল-রিসোর্টের মালিকপক্ষকে বলে দেওয়া হবে।