মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

বঙ্গোপসাগর সৃষ্ট নিম্মচাপ ‘ফনি’ ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্ট্রমে রূপ নিয়েছে। আবাহাওয়া অভিধানের ভাষায় ‘ভেরী সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্ট্রম’ হচ্ছে সামুদ্রিক সাইক্লোনের সর্বোচ্চ ভয়ংকর রূপের নাম।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুধবার ১ মে’র আবহাওয়া পর্যালোচনায় কক্সবাজার সহ দেশের উপকূলীয় সকল সমুদ্র ও নৌবন্দরকে ৪ নম্বর হুশিয়ারী সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সিভিয়ার সাইক্লোনটি এখন কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ১১৯০ কিঃমিঃ, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১২৩৫ কিঃমিঃ মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১০৯৫ কিঃমিঃ এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১১০০ কিঃমিঃ দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি ঘনিভূত হয়ে ধীরে ধীরে উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সাইক্লোনটির ৭৪ কিঃমিঃ এরমধ্যে বাতাস ১৬০ থেকে ১৮০ কিঃমিঃ বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া সকল নৌযানকে জরুরী ভিত্তিতে উপকূলে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসতে বলা হয়েছে। ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বুধবার দুপুর ১২ টার ২৪ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য প্রচার করা হয়েছে।

ভেরী সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্ট্রমটির আয়তন ২ লক্ষাধিক বর্গ কিলোমিটার। আর বাংলাদেশেরর ভৌগলিক আয়তন ১৪৭৫৭০ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের ভৌগলিক আয়তনের চেয়ে অনেক বেশী বড় এই ভেরী সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্ট্রমটি শনিবার দিবাগত রাত থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সমগ্র বাংলাদেশ উপকূলে তীব্রভাবে আঘাত হানার আশংকা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানলে বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ১৬০ কি:মি: থেকে সর্বোচ্চ ২৩০ কি:মি: পর্যন্ত উঠতে পারে। বর্তমানে এটির মুখ অধিকাংশই পুরো বাংলাদেশ উপকূলের দিকে রয়েছে এবং আংশিক ভারতের সমুদ্র উপকূলের দিকে। এই ভয়াবহ সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্ট্রমটি দুর্বল নাহয়ে উপকূলে আঘাত হানলে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড় এবং সিডরের চেয়েও অনেক বেশী প্রবল বেগে আঘাত হানার আশংকা রয়েছে।

এদিকে, বুধবার নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড সদস্যদের সকল ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুধবার ১ মে দুপুর ১২ টার সার্বিক আবহাওয়া পর্যালোচনা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সিবিএন-কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সারাদেশের আবহাওয়া অফিসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে নিজ নিজ কর্মস্থলে ত্যাগ নাকরার জন্য আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক গত ২৯ এপ্রিল জরুরী চিঠি ইস্যু করেছেন। একই চিঠিতে আবাহাওয়া অধিদপ্তরের ছুটিতে থাকা সকল স্টাফদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। যারা ছুটিতে ছিল তারা ইতিমধ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন।

নিম্মচাপের কারণে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রচন্ড তাপদাহ অব্যাহত থাকবে। এদিকে, চার নম্বর হুশিয়ারী সংকেত দেয়ার পর কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় বিশেষ সভা আহবান করেছে। তবে জেলা প্রশাসন ভেরী সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্ট্রম মোকাবেলায় ইতিমধ্যেই সবধরণের প্রাক প্রস্তুতি গ্রহন করেছে।

ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বাড়ার আগেই শুক্রবার সকাল থেকে জেলার সমগ্র উপকূলবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আনা হবে। এজন্য আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন, রেডক্রিসেন্ট, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এনজিও সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে সবকিছু গুরুত্ব সহকারে মনিটর করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সহ সকল উপজেলা ও উপকূলের ইউপি কার্যালয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার (উপসচিব) সিবিএন-কে নিশ্চিত করেছেন।

ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার ঘূূর্ণিঝড় সহ সকল দূর্যোগ থেকে রেহায় পাওয়ার উদ্দ্যেশে সকলের দোয়া ও আশীর্বাদ ও সহযোগিতা কামনা করেছেন। কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের সকল মানুষকে তিনি তাদের গবাদিপশু সহ নিরাপদ আশ্রয়ে সরে আসার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য এবং প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার মজুদ রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।