আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
শক্তি বাড়িয়ে ভারতের ওড়িশার দিকে অগ্রসর হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী। দেশটির আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, মঙ্গলবার রাতে ঘূর্ণিঝড়টির অবস্থান ছিল চেন্নাইয়ের প্রায় ৬৯০ কিলোমিটার দূরের বঙ্গোপসাগরে।

আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন, আগামী শুক্রবারের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি প্রচণ্ড শক্তিশালী (ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম) রুপ নিয়ে ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। স্থলভূমিতে ঢোকার সময় তার গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৭০ থেকে ২০০ কিলোমিটার।

তারা বলছেন, আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে শক্তি বাড়িয়ে অতি ভারী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে ফণী। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী আরও শক্তিশালী হয়ে হারিকেনের তীব্রতাসম্পন্ন অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে বলে গতকাল জানানো হয়।

আরও পড়ুন>> তীব্র বেগে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ফণী

ওড়িশায় আঘাত হানার পর ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ হবে পশ্চিমবঙ্গের দিকে। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়েরর কবলে পড়ে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি থেকে মানুষকে বাঁচাতে ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বল্প বিরতিতে ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি (এনসিএমসি) দুবার বৈঠক করেছে। ওড়িশার ৮৭৯টি স্থানে মানুষদের সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে প্রায় ১০ লাখ মানুষের আশ্রয় দেয়া সম্ভব হবে।

যথাযথভাবে উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনার জন্য আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ড। বিভিন্ন স্থানে জাহাজ এবং হেলিকপ্টার নিয়ে আসা হয়েছে। ন্যাশনাল ডিজেস্টার রেসপন্স ফোর্সের (এনডিআরএফ) ৪১টি দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ফণী নামের এই প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানার বেশ ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। ঝোড়ো হাওয়া এবং প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হতে পারে রাজ্যটির উপকূলবর্তী অঞ্চল। আবহাওয়া পূর্বাভাস, আগামী শনিবার থেকে কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে বৃষ্টি শুরু হবে।

ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে কোথাও মাঝারি আর কোথাও মুষলধারে বৃষ্টি হবে। কোনো কোনো জেলায় ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার হতে পারে। রোববার বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঝড়ের গতিবেগ বাড়বে।

আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন, বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারে পৌঁছাতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের দিঘা, মন্দারমণি, বকখালিতে সমুদ্র উপকূল উত্তাল হবে। ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কার কথা চিন্তা করে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করছে।

আরও পড়ুন>> শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হচ্ছে ফণী

ভারতের যে চারটি রাজ্যে ফণীর আঘাত পড়তে পারে সেগুলোর বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে ত্রাণকার্যের জন্য তহবিল ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই দূর্যোগ মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গ ইতোমধ্যে ২৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে পেয়েছে।

তাছাড়া আগামী সোমবার লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফায় রাজ্যের সাতটি সংসদীয় আসনে ভোট গ্রহণ হবে। তার দু’দিন আগে এমন দূর্যোগের পূর্বাভাসে চিন্তিত প্রশাসন মাছ ধরা ট্রলার কিংবা নৌকা নিয়ে সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, তীব্র গতিতে ছুটে চলা এই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলো। আর তাই পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার পাশাপাশি তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশেও চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছে দেশটির আবহাওয়া অধিদফতর।