বিশেষ প্রতিবেদকঃ
কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানরত দশ লাখ রোহিঙ্গার খাদ্যদ্রব্য সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত জাতিসংঘভুক্ত সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি)। এই ডব্লিউএফপি এর কক্সবাজার অফিসের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে খাদ্য সরবরাহে নিযুক্ত ঠিকাদার অপকর্মে ইতিমধ্যে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে।
ব্যাপক অনুসন্ধানে জানা যায়, ডব্লিউএফপির খাদ্য সরবরাহ নিয়ে দুর্নীতি এতোটাই সুক্ষ্ম ও পেশাদারী কায়দায় সম্পন্ন হয় যে, আপাতদৃষ্টিতে তা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হবে।
ডব্লিউএফপির আওতায় নিযুক্ত এক সরবরাহকারী ঢাকার রাজারবাগের জহুরা কামাল ট্রেডিংয়ের মালিক জনৈক টিপু।
মূলতঃ মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএস এইড এর রোহিঙ্গাদের জন্য দেয়া খাদ্য সাহায্য তদারকি এবং বিলিবন্টন করে থাকে ডব্লিউএফপি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার জহুরা কামাল ট্রেডিং অবৈধভাবে তার সাব-কন্ট্রাক্ট দিয়েছে কক্সবাজারের কিছু অসাধু খাদ্য ব্যবসায়ীকে।
জানা গেছে,কথিত সাগর-বুলবুল সিন্ডিকেট এই বিশাল দুর্নীতির মূল কারিগর।
কক্সবাজার শহরের খুরুশকূল রোডের সাগর এন্টারপ্রাইজের মালিক শ্রীমন্ত পাল সাগর এবং চাল বাজারের এসবি এন্টারপ্রাইজের মালিক বুলবুল তালুকদার মিলে বানিয়েছেন সাগর-বুলবুল সিন্ডিকেট।
এই সাগর-বুলবুল সিন্ডিকেট ঢাকার জহুরা-কামাল ট্রেডিংয়ের মালিক টিপুর কাছ থেকে
বিরাট অংকের টাকা দিয়ে ডব্লিউএফপিকে চাল-ডাল সরবরাহের দায়িত্ব নিয়েছে। উল্লেখ্য, চাল এবং ডালই হলো রোহিঙ্গাদের প্রধান খাদ্য উপকরণ।
সূত্র জানিয়েছে,সাগর-বুলবুল সিন্ডিকেট বহুমুখী খাদ্য দুর্নীতিতে জড়িত।
এরা সরকারি খাদ্য গুদামের অসাধু কর্তাদের সহযোগী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সরকার কর্তৃক কেনা ভালো মানের চাল বাইরে বিক্রি করে দেয়। তার বদলে নিম্নমানের এবং অনেক সময় পঁচা চাল সরকারি গুদামে জমা করে দেয়।
এদিকে রোহিঙ্গাদের চাল-ডাল সরবরাহের দুর্নীতি গোপনে সম্পাদনের জন্য এই সাগর-বুলবুল বিসিকে একটি পরিত্যক্ত গুদামকে বেছে নিয়েছে।
শহরের মৃত কালু কোম্পানির মালিকানাধীন বিসিকের এই পরিত্যক্ত গুদামটি অনেক আগেই দেনার দায়ে ব্যাংকের নিলামে উঠেছে। বর্তমানে এটি ব্যাংকের মালিকানাধীন।
এদিকে সাগর-বুলবুল সিন্ডিকেট উখিয়া-টেকনাফের প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের বিক্রি করে দেয়া চাল-ডাল নামমাত্র দামে সংগ্রহ করে। রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে সস্তায় চাল ডাল কেনার জন্য প্রতিটি ক্যাম্পে নিযুক্ত আছে সাগর-বুলবুলের লোকজন। এসব চাল-ডাল জমা করা হয় বিসিকের সেই পরিত্যক্ত গুদামে। এছাড়া খাদ্য গুদামের জালিয়াতির চাল এবং নানান ভাবে সংগ্রহ করা নিম্নমানের চাল-ডাল সংগ্রহ করেও গুদামজাত করে তারা। সেখানে ইউএস এইড এর ছাপানো বস্তায় এইসব চাল ডাল প্যাকেটজাত করে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের জন্য সরবরাহকৃত খাদ্য উপকরণ প্যাকেটজাত করার প্রক্রিয়া এবং খাদ্য উপকরণ মানসম্মত কিনা তা পরিদর্শন করার দায়িত্ব ডব্লিউএফপি এর কক্সবাজার অফিসের কর্মকর্তাদের।
জানা গেছে, ডব্লিউএফপি এর এই কর্মকর্তারা সাগর-বুলবুল সিন্ডিকেটের দুর্নীতির সহযোগী উপকারভোগী। তারা খাদ্য দুর্নীতির ভাগবাটোয়ারার অংশীদার হিসেবে সাগর-বুলবুল সিন্ডিকেটের অপকর্ম চেপে যান।
এ ব্যাপারে ২৮এপ্রিল রাতে সাগর এন্টারপ্রাইজের মালিক শ্রীমন্ত পাল সাগরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে ডব্লিউএফপির তালিকাভুক্ত ঠিকাদার বলে দাবী করেন।
তবে তিনি তার অপকর্ম স্বীকার করে বলেন, দুই টাকা বেশী লাভ করতে হলে এদিক-সেদিক করতে হয়।
এদিকে সোমবার দুপুরে শহরের ডব্লিউএফপি এর অফিসে সরেজমিনে যোগাযোগ করতে গেলে মূল ফটকে দায়িত্বরত তিনজন সিকিউরিটি গার্ড অপারগতা জানান।
এ সময় তাদের কাছে ওই অফিসের দায়িত্বশীল কারো সাথে যোগাযোগ করার জন্য ফোন নম্বর চাইলে- দেয়া যাবে না বলে উত্তর দেয়।
এ সময় এই প্রতিবেদক কথা না বললে পরে (দায়িত্বশীল ব্যক্তি) আক্ষেপ করতে পারে বলে জানালে দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ডরা উদ্যত ভঙ্গিতে বলেন, যা ইচ্ছা তা করেন। কোনো সমস্যা নাই।