জালাল আহমদ , ঢাকা থেকেঃ
পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিরা  এখনো চরম  বৈষম্য এবং অবহেলার শিকার।  শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি, ব্যবসা – বাণিজ্যে সবকিছুতেই বাঙালিদের কে পার্বত্য শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পিছিয়ে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।  বক্তারা অবিলম্বে পার্বত্য  জেলা পরিষদে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।
আজ দুপুরে রাজধানীর শিশুকল্যাণ পরিষদের মিলনায়তনে পার্বত্য নাগরিক পরিষদ কর্তৃক  ১৯৮৬ সালের ২৯ এপ্রিল  তাইন্দং এবং পানছড়ির গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সংগঠনের  চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে বাঘাইছড়ি পৌরসভার সাবেক মেয়র মোঃ  আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় আয়োজিত স্মরণসভায়  প্রধান অতিথি অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন  সাবেক বিচারপতি, পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের  সাবেক চেয়ারম্যান  খাদিমুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বলেনঃ “পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ডাকে  আমি  যে কোন সময়  সাড়া  দিবো।আপনারা আমাকে ডাকলেই পাবেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম  চুক্তি  করা হয়েছে মূলত  ভারতে নির্বাসিত  উপজাতিদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য। তখন ভারতকে কূটনীতিকভাবে বিভিন্ন চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল”।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে  বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক  এবং সাবেক পার্বত্য বান্দরবান    জেলা পরিষদের  সদস্য,   কাজী মুজিবুর রহমান    বলেন, ”  পার্বত্য জেলাপরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় সেখানে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নেই। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, তখন সে দলের নেতারা জেলা পরিষদকে লুটেপুটে খায়। জনগণের অধিকার সংরক্ষণের জন্য এসব মনোনীত নেতারা কিছুই করে না। তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করলেও এমপি পদে মনোনয়ন পায়নি। কারণ আমি বাঙালি। বাঙালি হওয়ার কারণে আমি বৈষম্যের শিকার। পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও তারা আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির কারণে চরম বৈষম্য এবং অবহেলার শিকার। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদ গুলো উপজাতিদের দখলে। সরকারি চাকরি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা – বাণিজ্যে বাঙালিরা চরম বৈষম্য এবং অবহেলার শিকার  ।
তিনি জোরালো কণ্ঠে বলেন, লড়াই – সংগ্রাম ছাড়া পৃথিবীতে কোথাও দাবি আদায় হয় না। তাই পার্বত্য বাঙালিদেরকে দাবি আদায়ের জন্য   সংগঠিত হতে  হবে । আন্দোলন ছাড়া দাবি আদায়ের    বিকল্প কোন পথ নাই। পার্বত্যবাসীর জন্য  আমাদেরকে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমাধিকার আন্দোলনের মহাসচিব মনিরুজ্জামান মনির বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিরা হত্যা, নির্যাতন,জেল-জুলুম  , মামলা – হামলার শিকার। ১৯৮৬ সালের ভয়াল ২৯ এপ্রিল তার অনন্য দৃষ্টান্ত। পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের খুনি সন্তু লারমা সহ সমস্ত খুনিদেরকে পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি খুনের বিচার আজ পর্যন্ত হয় নি। কিছু অকেজো অস্ত্র জমা দেওয়া হলেও ভারী অস্ত্রশস্ত্র এখনো উপজাতিদের কাছে রয়ে গেছে।অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালাতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে আলকাছ আল মামুন ভুঁইয়া  পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল বাঙালিদেরকে অধিকার আদায়ের  জন্য সংগঠিত হওয়ার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে আরও স্মৃতিচারণ করেন পার্বত্য নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব এড.এয়াকুব আলী চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃআবদুল হামিদ রানা, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নেতা শহিদুল আলম তামান্না  ।এতে উপস্থিত ছিলেন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ, পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক  ইঞ্জিনিয়ার সাহাদাত ফরাজি সাকিব,জালাল আহমেদ, মিনহাজ তকি প্রমুখ।