ইমাম খাইর, সিবিএন:
চলমান ভোটার হালনাগাদে টাকার বিনিময়ে ভোটার ফরম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কথা থাকলেও নিযুক্ত কর্মীরা যাচ্ছেনা। সুবিধাজনক জায়গায় ডেকে ফরম পূরণ করানো হচ্ছে। ফরম পেতে টাকা দাবী বা ফরম পূরণ করে দেয়ার বিনিময়ে টাকা আদায় করছে কিছু তথ্য সংগ্রহকারী।-এমন অভিযোগ ভুক্তভোগিদের।
এমন তথ্যও এসেছে, কিছু এলাকায় বসবাসরত পুরনো রোহিঙ্গারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহায়তায় তথ্য সংগ্রহাকারীকে ম্যানেজ করে হালনাগাদে অন্তর্ভুক্ত হতে নানা কৌশল অবলম্বন করছে।
কক্সবাজার পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডে নিয়োজিত তথ্য সংগ্রহকারী আবদুর রশিদ, ছেনুয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিস্তর। নির্বাচন কমিশন তাদের নিয়োগ দিয়েছে। হালনাগাদের এক সপ্তাহ পার হলো। কিন্তু এখনো ভোটারদের বাড়িতে যাননি। নিজেদের ঘর বা সুবিধাজনক জায়গায় বসেই কাজ করছেন। ফরম চাইতে গেলে উল্টো বলছেন অনেককে। অভিযোগ শোনা যাচ্ছে, ‘খরচাপাতি’ বাবদ টাকা দাবীর। এই ওয়ার্ডের সুপারভাইজার আবুল কালামের ভূমিকা নিয়েও সন্তুষ্ট নয় স্থানীয়রা। ৭ নং ওয়ার্ডের এবিসি ঘোনার বাসিন্দা এডভোকেট মুহাম্মদ আবু ছিদ্দিক ওসমানী অভিযোগ করেন, আমার এলাকার তথ্য সংগ্রহকারী মাস্টার জাহাঙ্গীর আলমের কাছে আমার মেয়ের জন্য ফরম চাইলে তার বাসায় যেতে বলেন। বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি তথ্য সংগ্রহ করতে যাননি। বললেন, কাগজপত্র রেডি হলে তাকে জানাতে। প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্টস রেডি করার পরও ফরমের অভাবে আবেদন করতে পারছি না। মাস্টার জাহাঙ্গীর কক্সবাজার সদরের পিএমখালী পশ্চিম ডিকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তার বাসা কক্সবাজার সরকারি কলেজ গেট এলাকায়।
তথ্য সংগ্রহ সংক্রান্ত একই অভিযোগ সদরের ইসলামপুরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিয়োজিত কর্মীদের বিরুদ্ধে। অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ মিলেছে তথ্য সংগ্রহকারীদের বিরুদ্ধে।
কক্সবাজার পৌরসভার ১২ নং ওয়ার্ডের কলাতলী এলাকায় ইকবাল হোসেন নামে একজনকে তথ্য সংগ্রহকারী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি স্থানীয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করার নির্দেশনা থাকলেও মানছেননা মাস্টার ইকবাল হোসেন। গত এক সপ্তাহে একদিনও মাঠে যাননি। ফরম চাইতে গেলে উল্টো ডকুমেন্ট নিয়ে যেতে বলে তাড়িয়ে দেয় প্রার্থীদের।
সাদ্দাম হোসেন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দার অভিযোগ, অনেকবার ফোন করার পরও তথ্য নেয়ার জন্য যাননি তথ্য সংগ্রহকারী ইকবাল হোসেন। কারণ জানতে চেয়ে উল্টো বকুনি দিয়েছেন।
অভিযুক্ত তথ্য সংগ্রহকারী ইকবাল হোসেনকে ফোন করলে রাগস্বরে বলেন, আমাকে জোর করে দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি এই দায়িত্ব নিতে চাইনি। কোন প্রশিক্ষণ বা প্রশিক্ষণ ভাড়াও পাইনি আমি। আরেকজনের নাম কেটে আমার নাম ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। উপরে লাইন থাকলে যা হয় আরকি!
তিনি বলেন, রূপালী ব্যাংকের আজিজের স্ত্রীর স্থলে আমার নাম ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি চিঠি পাইনি, কিছইু পাইনি। ২৬ তারিখ কিছু কাগজপত্র আমাকে দেয়া হয়েছে। অন্যায়ভাবে দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। সমাজ কমিটির লোকজনকে বলে আসছি। জায়গায় চার্জ দিয়ে আসছি। ১৩ তারিখ পর্যন্ত সময় আছে। সব কাগজপত্র ঠিকঠাক পেলে পূরণ করে নেব।
বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন না কেন? জানতে চাইলে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তথ্য সংগ্রহকারী ইকবাল হোসেন।
এরপর আবার ফোন দিলে রিসিভ করে বলেন, আমি স্কুলে। পরীক্ষা নিচ্ছি।
জানতে চাওয়া হয়, ভোটারদের তথ্য নিতে যাচ্ছেন কিনা? উত্তরে বলেন, আপনাকে কে অভিযোগ দিয়েছে?
তারপর অভিযোগ তুলেন সদর নির্বাচন অফিসের মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ৪/৫ দিন বাদে আমার উপর অন্যায়ভাবে দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। নির্বাচন অফিসের মাহবুব আরেকজনের নাম কেটে আমার নাম যোগ করে দিয়েছেন। অথচ আমি কোন ট্রেনিং পাইনি, ভাতা পাইনি। তিনি খুবই অন্যায় করেছে। আমি সময় মতো এটার চরম প্রতিশোধ নেব। আজ না হয় কাল, কাল না হয় পরশু। চরমভাবে প্রতিশোধ নেব।
সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসের মাহবুব আলম বলেন, যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সে সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। প্রশিক্ষণের জন্য ডাকা হলেও সাড়া দেননি। উল্টো বলেছেন। তার বিষয়ে শিক্ষা অফিসকে অবগত করানো হয়েছে।
গত ২৩ এপ্রিল থেকে কক্সবাজার সদরে ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিয়োজিত তথ্য সংগ্রহকারীদের কাছে ফরম পৌঁছে গেছে। সবকিছু দেখভালের জন্য ইউনিয়ন ভিত্তিক ‘সুপারভাইজার’ নিয়োগ করেছে নির্বাচন কমিশন। নিয়োজিতদের আগেভাগে সংশ্লিষ্ট কাজের উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার শিমুল শর্মা বলেন, কক্সবাজার পৌরসভা ও ১০ ইউনিয়নে মোট ১২৮ জন তথ্য সংগ্রহকারী এবং ২৬ জন সুপারভাইজার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা আগামী ১৩ মে পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করবে।
তিনি বলেন, বিগত সময়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য মাত্র ১ সপ্তাহ সময় থাকলেও এবার কিন্তু ২১ দিন। এখানে তাড়াহুড়োর কিছুই নেই। তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে সাথে সাথে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিমুল শর্মা বলেন, ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যাঁদের বয়স ১৮ হয়েছে বা হবে, তাঁদের তথ্য সংগ্রহ করবে। এঁদের মধ্যে যাঁরা এখনই ভোটার হওয়ার যোগ্য, তাঁদের ভোটার করে নেওয়া হবে। বাকিদের মধ্যে যখন যাদের বয়স ১৮ হবে, তখন তাঁদের ভোটার করে নেওয়া হবে।
এ ছাড়া ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারির মধ্যে যাঁদের জন্ম, তাঁদের তথ্যও সংগ্রহ করা হবে।
সর্বশেষ ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয় ২০১৭ সালে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালে হালনাগাদের কাজ করা সম্ভব হয়নি।
বিগত হালনাগাদ কার্যক্রমে যারা বাদ পড়েছিলেন ভোটার তালিকায় নিবন্ধনের জন্য তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। হালনাগাদ কার্যক্রমে নতুন ভোটারের পাশাপাশি মৃত ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে এবং ভোটার স্থানান্তরের আবেদন নেয়া হবে। এবারের হালনাগাদে হিজড়া জনগোষ্ঠী ‘হিজড়া’ হিসেবে ভোটার তালিকায় নিবন্ধিত হতে পারবেন।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের পর যাচাই বাছাই, ২৫ মে থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত নির্ধারিত কেন্দ্রে নাগরিকদের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ ও নিবন্ধনের কাজ চলবে।