লামা প্রতিনিধি :

বান্দরবানের লামা উপজেলার রুপসীপাড়া ইউনিয়নের মংপ্রু পাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক ভবনের পূর্ণ:সংস্কার কাজে ঠিকাদার কর্তৃক নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার ও পরিমাণমত সামগ্রী ব্যবহার না করার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে সংস্কার শেষে দু এক মাস যেতে না যেতে, আবারো ক্লিনিকটি অকেজো হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, অনিয়ম দূর্নীতি না করে কার্যাদেশ মতে কাজ করতে বলায় ঠিকাদার বাবলা বৈদ্য মুঠোফোনে ক্লিনিকের প্রোভাইডারকে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ ও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। ক্লিনিকের প্রোভাইডার রনজিত বড়ুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবরে লিখিতভাবে এ অভিযোগ করেন। এদিকে, কাজে নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ক্লিনিকের সংস্কার কাজ বন্ধ করে দেয় বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক গ্রামীণ পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষে মংপ্রু পাড়ায় তিন কক্ষ ও এক টয়লেট বিশিষ্ট কমিউনিটি ক্লিনিক ভবনটি নির্মাণ করা হয় ১৯৯৮সালে। দুর্গম এলাকা হওয়ায় তৎকালীণ সময়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান যেনতেন ভাবে ভবনটি নির্মাণ করে কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেন। কিন্তু দু এক বছর ভবনটি ব্যবহার করা গেলেও, এরপর থেকে সম্পূর্ণ জরাজীর্ণ হয়ে পড়লে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করে কর্তৃপক্ষ। ক্লিনিকের আশপাশ এলাকার জামালপুরপাড়া, নয়াপাড়া, পুরাতন মার্মা পাড়া, পুলিশ ক্যাম্প পাড়া, বড় কলারঝিরি, ছোট কলারঝিরি, লেবুঝিরি,হামুক পাড়া, মনিপাড়াসহ ১৫-২০টি পাড়ার উপজাতি ও বাঙ্গালী মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় এ ক্লিনিকটিই একমাত্র ভরসা। কারণ পাড়াগুলো দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় হওয়ায় সদরে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নেয়া মোটেই সম্ভব হয়না। ২০১৪ সালে যোগদানের পর থেকে ক্লিনিক ভবনে বসে আগত রোগীদের একদিনের জন্যও সেবা দিতে পারেননি ক্লিনিকের বর্তমান প্রোভাইডার রনজিত বড়–য়া। খোলা আকাশের নিচে কিংবা মানুষের বাড়িতে বসেই রোগীদের সেবা দিয়ে আসছেন তিনি। বহু লেখালেখির পর সম্প্রতি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ক্লিনিকটি পুর্ন:সংস্কারের জন্য দরপত্র আহবান করে। অভিযোগ ওঠেছে, ঠিকাদার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিংবা স্থানীয় চেয়ারম্যানকে না জানিয়েছে ১৫দিন আগে ক্লিনিকের মনগড়া সংস্কার কাজ শুরু করেন। প্রথম থেকেই ময়লা আবর্জনাযুক্ত অত্যন্ত নিম্নমানের ইটের কংকর ও বালি দিয়ে মাত্র আধা ইঞ্চি ঢালাই দিয়ে ছাঁদের কাজটি সম্পন্ন করেন ঠিকাদারের লোকজন। পুরাতন পরিত্যক্ত ভবন হওয়ায় সংস্কারের আগে দুই থেকে তিন দিন একটানা দেয়ালে পানি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা করেননি ঠিকাদারের নিয়োজিত মেস্ত্রী। তাছাড়া ছাদ ঢালাই ও দেয়ালের আস্তর করার আগে পরে পরিমাণমত পানি ব্যবহার করা হয়নি। তার এহেন অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে ঠিকাদার বাবলা বৈদ্য বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের একজন বড় নেতা পরিচয় দিয়ে মুঠোফোনে ক্লিনিকের প্রোভাইডার রনজিত বড়–য়াকে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করেন। এমনকি বেশি বাড়াবাড়ি করলে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানিসহ প্রাণ নাশের হুমকিও দেন ঠিকাদার বাবলা বৈদ্য। পরে এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে প্রোভাইডার রনজিত বড়–য়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবরে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। এদিকে কাজে অত্যন্ত নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার এবং কার্যাদেশ মতে কাজ না করায় রুপসীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছাচিংপ্রু মার্মা, ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয়রা সংস্কার কাজ বন্ধ করে দেন।

কাজে অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে সংস্কার কাজে নিয়োজিত মেস্ত্রী নুর আলম, শাহ জাহান বলেন, ঠিকাদার আমাদেরকে যেভাবে কাজ করতে বলেছেন আমরা সেই ভাবেই কাজ করছি। এর বেশি কিচু করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তারা বলেন, ক্লিনিক ভবনটি এত বেশি জরাজীর্ণ যে ছাদের ওপর একজনের বেশি দুজন দাঁড়ানো যায়না। নড়বড়ে হয়ে গেছে। সংস্কার কাজের পরেও যে কোন মুহুর্তে ধ্বসে পড়তে পারে ভবনটি। তাই ভবনটি সংস্কার না করে নতুন করে নির্মাণ করাই শ্রেয় হবে। মংপ্রুপাড়া কারবারী ধুংঅং মার্মা, সদস্য আবু হানিফ ও স্থানীয় আবদুর রশিদসহ অনেকে বলেন, শুরু থেকেই সংস্কারের কাজে খুবই নিম্নমানের কংকর ও বালি ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া দেয়ালে দু’এক বালতি পানি মেরেই ছাদের ঢালাই ও দেয়ালের আস্তরের কাজ শুরু করা হয়েছে।

ক্লিনিকের প্রোভাইডার রনজিত বড়–য়াকে গালমন্দ ও হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করে ঠিকাদার বাবলা বৈদ্য বলেন, ক্লিনিকটি সংস্কার কাজের জন্য বরাদ্দ ৩লাখ টাকা। তাছাড়া সংস্কার কাজে কোন ধরণের অনিয়ম দূর্ণীতি কিংবা নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি। মানসম্মত সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। তারা অযথা কাজে বিঘœ ঘটাচ্ছে।

রুপসীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছাচিংপ্রু মার্মা বলেন, ক্লিনিকের পুর্ণ:সংস্কার কাজের মান খুবই খারাপ। তাই ঠিকাদারকে আপাতত কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি।

এ বিষয়ে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদুল হক বলেন, মংপ্রুপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক পুর্ণ:সংস্কার কাজে ঠিকাদার কর্তৃক অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।