ফেসবুক কর্ণারঃ
গত পরশুদিন রাতে সদর উপজেলার পিআইও অফিসের বন্ধুবর সহকারী আবছার ভাই আমার ফেবু মেসেঞ্জারে একটি বার্তা পাঠান। এটি ওপেন করার সাথে সাথে “আমি মারা গেলে আমার ভাতা যেন চেয়াম্যান _ মেম্বারদের বন্টন করে দেয়া হয়”! এই শিরোনামের নীচে একটি বয়োবৃদ্ধ মহিলার ছবি সম্বলিত নিউজটি দৃষ্টিগোচর হয়! সাথে সাথে চমকে উঠি! নিউজটি পড়তে গিয়ে দেখলাম এটি আমারই কর্মরত ইউনিয়নের নাইক্যংদিয়া (ওয়ার্ড-৫) নামক এলাকার বিষয়।আরো হতচকিয়ে বিষয়টি পুরো পড়লাম! নিউজটি আমাকে খুবই পীড়া দিয়েছে। আমি খুবই ব্যথিত হলাম! ঘটনার সারসংক্ষেপ মূলতঃ এরকম, বয়োবৃদ্ধ মহিলাকে দেখার কেউনাই। তিনি একাই ভিক্ষা করে নিজ বাড়িতে থাকেন। উপযুক্ত সন্তান থাকলেও তারা খোঁজ খবর নেয়না। জীবিকার অবলম্বনের জন্য একটি বয়ষ্ক ভাতার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের নিকট ধর্না দিয়েও কোন কাজ হয়নি। তিনি জনপ্রতিনিধিদের বেশী টাকা দিতে না পারায় বৃদ্ধ বয়সেও বয়ষ্ক ভাতার কার্ড তার কপালে জুটেনি! প্রতিবেদকের দেওয়া তথ্যমতে, তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, “আমি মারা গেলে আমার ভাতা যেন চেয়ারম্যান মেম্বারদের বন্টন করে দেয়া হয়”!!! সাথে বয়োবৃদ্ধ মহিলার ছবিটি দেখে আমার খুব কষ্ট হলো সারারাত। তাই গতকাল শব-এ -বরাতের দিন অফিসে গিয়ে পরিষদের উদ্যোক্তা ও দফাদার কে নিয়ে বর্ণিত মহিলাটির সন্ধানে নাইক্যংদিয়ায় যাই।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বারকে না পেয়ে পার্শ্ববর্তী ৬নং ওয়ার্ড সদস্য জনাব হেলাল ভাইকেও সাথে নিই। সরাসরি মহিলাটির বাড়িতে গিয়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁকে উপস্থিত পাইনি। পরে তাঁর বিষয়ে ইউপি সদস্যসহ বিভিন্ন খোঁজ খবর নিই। আমি মূলত ঐ জায়গায় বসি, যেখানটাই বৃদ্ধ মহিলাটি বসেছিল! বাড়িটি সেমি পাকা। সামনে দেখলে মনে হবেনা, এই বাড়ির মালিকের বয়ষ্কভাতা প্রয়োজন! তবে এর ইনার রহস্য আছে। বাড়িটি তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে। তাঁর উপযুক্ত দুই ছেলে আছে তারা মায়ের তেমন খোঁজখবর নেয়না। মহিলাটি এই তালাবদ্ধ বাড়ির পেছনে জরাজীর্ণ টিনের বাড়িতে থাকে। দুই ছেলে তাদের রুম গুলো তালাবদ্ধ করে রাখে। মায়ের এক ধার দূধের দাম যে সন্তানেরা দিতে পারবেনা, যে মায়ের প্রশব বেদনার এক মিনিটের কষ্ট কেউ নিতে পারবেনা এমন মায়ের প্রতি আপন সন্তানদের এমন রুঢ় আচরণে যারপরনাই খুবই ব্যথিত হয়েছি! বৃদ্ধ মা এবাড়ি ওবাড়ি গিয়ে কোন রকম চলে।তবে ইতোপূর্বে বৃদ্ধ মহিলা খুবই স্বচ্ছল ছিলো। এক সময় নাকি হজ্ব ও করেছেন।তবে এখন আপন সন্তানদের অবহেলার শিকার!
আমি মহিলাটির আইডি কপি ও ছবি সংগ্রহ করে পরিষদে যোগাযোগ করার জন্য পার্শ্বস্ত এক ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিয়ে আসি।
প্রসঙ্গত, মহিলাটি চেয়ারম্যান মেম্বারদের কাছে গিয়ে বয়ষ্ক ভাতা না পাওয়ার কারন হিসেবে জেনেছি, যদিও মহিলাটি দেখতে বৃদ্ধ কিন্তু আইডি কার্ডে তার বয়স কম হওয়ায় তাঁকে ভাতার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি চেয়ারম্যান মহোদয়কে অবগত করার পর তাঁর আইডি ও ছবি হাতে পাওয়ার পর তাঁকে দ্রততম সময়ে বিধবা ভাতা বা যে কোন সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।
বিঃদ্রঃ
ধন্যবাদ আবছার ভাই ও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে, বিষয়টি নজরে আনার জন্য।
তাছাড়া এরকম যে কোন বিষয়ে দ্রুত সমাধানে আমরা পরিষদবর্গ বদ্ধপরিকর।

এম.নুরুল কাদের
সচিব, পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদ।
সদর, কক্সবাজার।