সিবিএন ডেস্ক:
অতীতের মতো শীর্ষ ঋণ খেলাপিরা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা মেনন বলেন, ‘বর্তমান শাসনামলে খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই খেলাপি ঋণের ব্যাপারে আমরা এরশাদ আমলে খুব সোচ্চার ছিলাম। যারা তখন খেলাপি ঋণের শীর্ষে ছিলেন, এখনও এই সরকারে তারা শীর্ষ স্থানে রয়েছেন। তারা অনেক বড় বড় কর্তাব্যক্তি।’

রুশ বিপ্লবের নেতা ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের ১৪৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার (২২ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সাবেক মন্ত্রী মেনন এসব কথা বলেন।

রাশেদ খান মেনন এ সময় ৯ শতাংশ সরল সুদে খেলাপি ঋণ পরিশোধে সরকারের সিদ্ধান্তেরও কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণের ভারে সব ব্যাংক নুয়ে পড়েছে। আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা পরিপূর্ণ নৈরাজ্যের মধ্যে চলে গেছে। তারল্য সংকট রয়েছে, বিনিয়োগের অর্থ ব্যাংকগুলোর নেই। এই অবস্থায় বড় বড় ঋণ খেলাপিদের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে এবং ৯ শতাংশ সুদ ধরে ১২ বছরের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।’

সরকারের নতুন ব্যবস্থায় কতবার পুনঃতফসিল হবে সেটা বলা হয়নি উল্লেখ করে মেনন বলেন, ‘সাধারণ ব্যবসায়ী বা মানুষ যখন ঋণের রিশিডিউল করতে চান, তখন কিন্তু তাকে ১০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিতে হয়। আর এমন ঋণ নিয়ে একজনকে সুদ দিতে হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ। তাহলে সোজা কথা ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়াই সুবিধা। খেলাপি হয়ে গেলেই ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ১২ বছরে ৯ শতাংশ হারে সুদ দেওয়া যাবে। যেখানে নিয়মিত সুদ দিলে তো ১৩ শতাংশ দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এই রাষ্ট্রটি একেবারেই লুটেরা পুঁজিপতিদের। একথা শুনলে হয়তো আমাদের যারা শাসন করছেন বা সরকারে রয়েছেন, তারা রাগ করতে পারেন।’

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ৯ শতাংশ সরল সুদে এই ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেওয়ার কথা জানান।

দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা এবং এর বেশির ভাগই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে দাবি করে মেনন বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠিন শর্তারোপের কারণে খেলাপি ঋণের টাকা বিদেশে বিনিয়োগ না করে সেখানে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলছেন খেলাপিরা। গরিব মানুষ বা একজন কৃষক যখন ঋণ নিয়ে ঋণ ফেরত দিতে পারছেন না, তখন হাতকড়া পরিয়ে জেলে নেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশ, রাষ্ট্র এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছে।’

ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গ তুলে এই বাম নেতা বলেন, ‘‘সর্বশেষ যে উত্থানটি আমাদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা হলো ধর্মীয় উগ্রবাদ। আমরা আইএস, তালেবান দেখেছি। পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখুন, তারা নির্মূল হয়নি। রবিবার ইস্টার সানডেতে শ্রীলঙ্কায় যা ঘটেছে— তা গণহত্যা জাতীয় ঘটনা। এর পেছনে কী, কোন উত্তেজনা আমরা জানি না। যাই থাকুক না কেন এই পৃথিবী আর বাসযোগ্য থাকছে না। এই গ্রহ বাঁচবে কিনা এখন এটাই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। লেনিন বলেছিলেন— ‘সভ্যতা পুঁজিবাদের হাতে নিরাপদ নয়।’ তার প্রমাণ হচ্ছে এসব ঘটনা, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ বিপর্যয়। এসব পবির্তনের মধ্য দিয়ে পৃথিবী আজ ধ্বংসের কিনারে চলে গেছে।’’

ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি আবুল হুসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শফিকুজ্জামান ও ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য সুশান্ত দাস।