প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি আল মাহমুদ তাঁর সৃষ্টিকর্মে অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন। বাংলা সাহিত্যে নতুন নতুন সংযোজন কবি আল মাহমুদকে অন্যদের থেকে আলাদা করার পাশাপাশি অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।

কক্সবাজারের অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন নজরুল-আব্বাস উদ্দিন সেন্টার কক্সবাজারের উদ্যোগে অভিজাত হোটেল মিশুক’র সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত মরহুম বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি কবি আল মাহমুদের স্মরণানুষ্ঠানে বক্তারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ২২ এপ্রিল বিকেল ৩টায় সেন্টারের সভাপতি এডভোকেট রমিজ আহমদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণানুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, দেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক লেখক-গবেষক কবি আবদুল হাই শিকদার।

নজরুল আব্বাস উদ্দিন সেন্টার’র পরিচালক অধ্যাপক ফরিদুল আলম এর সঞ্চালনায় স্মরণানুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, প্রখ্যাত বাচিক শিল্পী কবি আহমদ বাসির ও ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ চট্টগ্রাম জোনের ইনচার্জ জিএম মো: গিয়াস উদ্দিন কাদের। এছাড়া বিভিন্ন কবি, শিক্ষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এরআগে বিকেল ২টায় কক্সবাজারের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ পর্যায়ের কবি আল মাহমুদ এর কবিতা নিয়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১০ জনকে সনদ ও প্রাইজ মানি দেয়া হয়।

অনুষ্ঠানে নজরুল-আব্বাস উদ্দিন সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক সাংবাদিক জিএএম আশেক উল্লাহ বলেন, আল মাহমুদ যেই বার্তা তাঁর লেখার মাধ্যমে আমাদের নিকট রেখে গেছেন যেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আল মাহমুদকে বেশি বেশি পড়তে হবে। তিনি স্মৃতিচারণ করে আরো বলেন, কবি আল মাহমুদ বাংলার সাহিত্যাঙ্গনকে শক্তিশালী করেছেন। তাঁর সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে চিরদিন বেঁচে থাকবেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রখ্যাত কবি আবদুল হাই সিকদার বলেন, কবি আল মাহমুদ ছিলেন ভাষা সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি। বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের কবি। তিনি এ দেশের মাটি ও মানুষের কথা বলেছেন। তার বিশ্বাস ও সাহিত্যকর্ম উভয়টিই আমাদের দেশের অমূল্য সম্পদ। তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন এদেশের মানুষের মনে।

তিনি আরো বলেন, কবি আল মাহমুদ কবিতার মাধ্যমে নিজের জাত চিনিয়েছেন। সেই কবি আল মাহমুদ এর চলে যাওয়ায় বাংলা সাহিত্যে একধরনের শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, যা কখনোই পূরণ হবার নয়। বাংলা সাহিত্যে তার অবদান আকাশচুম্বী। কবি তার লেখনির ভেতর দিয়ে দেশের সকল মানুষের কাছে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

কবি আল মাহমুদ একজন কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশু সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক ছিলেন। কবি আল মাহমুদ আধুনিক ভাষা কাঠামোর ভেতরে আঞ্চলিক শব্দের প্রয়োগ ঘটিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে সক্রিয় থেকে যিনি আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন আঙ্গিকে, চেতনায় ও বাকভঙ্গিতে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। কবি আল মাহমুদ শুধুমাত্র একজন কবি নন, তিনি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কাজেই উনাকে যারা স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে মন্তব্য করে তারা স্বাধীনতার মূ চেতনার বিপক্ষে কথা বলে। সক্রেটিসকে বিষপানের মাধ্যমে হত্যা করা হলেও সক্রেটিস অমর হয়ে আছেন। আল মাহমুদকে মুছে দেওয়ার প্রচেষ্টাও সফল হবে না, তিনি অম্লান, অব্যয়, অক্ষয় হয়ে থাকবেন।

প্রধান অতিথি আরো বলেন-আল মাহমুদের মৃত্যুর পর আমরা আশা করেছিলাম রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালিত হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শোক পালন দূরের কথা, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের অন্তিম বিদায়ে কোন বিবৃতিও দেখা যায়নি। সেই আশাহত দুংখ একদিন পরতে পরতে জবাব দেয়া হবে। অনুষ্ঠানে আলোচনা শেষে, কবিতা পাঠ ও দোয়া মোনাজাত করা হয়।

সমাপনী বক্তব্যে স্মরণসভার সভাপতি এডভোকেট রমিজ আহমদ স্মরণ সভায় উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং আল মাহমুদকে বেশি বেশি পড়ার মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টিসম্ভার সম্পর্কে বিশদ জানার উপর গুরুত্বারোপ করেন।