শাহেদ মিজান, সিবিএন:

গত বছর ময়মনসিংহে ইয়াবা নিয়ে তিন সহযোগিসহ ধরা পড়েছিলেন বাংলাদেশের ‘শ্রেষ্ঠ বলী’ রামুর দিদার বলী। ওই ঘটনা সেই সময় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। তার মতো একজন দর্শকপ্রিয় বলীর এমন অপকর্মে চারিদিকে তার প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছিল। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তার ভক্তরা এই নিয়ে বড়ই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তবে এতদিন পর দিদার বলী বললেন ভিন্ন কথা। তিনি দাবি করলেন, ইয়াবাসহ আটকের ওই ঘটনাটি ছিলো সাজানো। ময়মনসিংহের একটি গাড়ি ছিনতাইয়ের সিন্ডিকেট দিদার বলী ও তার সহযোগিদের ফাঁসিয়ে দিয়েছিলেন।

এমনটি দাবি করে দিদার বলী বলেন ‘আল্লাহ কসম করে বলছি- আমি আমার অতীত-বর্তমান- কোনোদিন, কোনো সময় কোনো ধরণের মাদকের জড়িত ছিলাম না।’

সোমবার (২২ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে বলী খেলার কিংবদন্তি দিদার বলীয় একথা বলেছেন। আাগামী ৩ ও ৪ মে অনুষ্ঠিতব্য কক্সবাজারের ডিসি সাহেবের বলী থেকে তাকে বাদ দেয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করেন দিদার বলী।

সংবাদ সম্মেলনের দিদার বলী জানান, এলাকার মসজিদ পরিচালনাসহ নানা কারণে চট্টগ্রামে কর্মরত তার এলাকার (আত্মীয়) এক সাংবাদিক পরিবারের সাথে দিদার বলীর মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ২৮ জুন ময়মনসিংহে গিয়ে গাড়ি ছিনতাইকারী চক্রের কবলে পড়েন দিদার ও তার তিন বন্ধু। ছিনতাকারীরা তার গাড়ি ছিনতাই করতে ফেঁসে যেতে গিয়ে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ৮০ পিস ইয়াবা দিয়ে দিদার ও সহযোগিদের পুলিশের হাতে তুলে দেন। ওই ঘটনায় ১১দিন পর থেকে জেল থেকে ছাড়া পান তিনি।

দিদার বলী অভিযোগ করেন, ওই ঘটনার খবর পেয়ে চট্টগ্রামে কর্মরত ওই আত্মীয় সাংবাদিক ওই ঘটনার জের ধরে তিলকে তাল বানিয়ে রংচটা সংবাদ পরিবেশন করে। এতে সারাদেশে তার তিনি ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে তার দুর্নাম হয়ে গেছে। সে ইস্যু থেকে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ তুলে এবার ‘কক্সবাজারের ডিসি সাহেবের বলী খেলা’ থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়েছে।

দিদার বলী বলেন, ‘আমি ওই কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার। এই চক্রটি আমার সাথে একের এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আমি কোনো রাজনীতি না করলেও ওই চক্রের ইন্ধনে রামুতে আমাকে প্রধান আসামী করে একটি গায়েবী মামলা করা হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের পরিণতির জন্য আজ আমাকে ‘কক্সবাজারের ডিসি সাহেবের বলী খেলা’ থেকে তাকে বাদ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।’

তিনি ‘কক্সবাজারের ডিসি সাহেবের বলী খেলা’ কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘প্রতিপক্ষ সাংবাদিকের ষড়যন্ত্রের কারণে অনেকভাবে ভুক্তভোগী হয়েছি। কিন্তু আমার দীর্ঘ ১৮ বছরের অর্জন এবং আমাদের প্রাণের চেয়ে অধিক দামী বলী খেলা থেকে আমাকে বঞ্চিত করবেন না। আমি নির্দোষ, কোনোভাবেই আমি ইয়াবাসহ কোনো মাদকের ব্যবসা ও সেবনে জড়িত নই। আপনারা যেকোনো ভাবে তার তদন্ত করুন। আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ পেলে শুধু বঞ্চিত করা নয়; আমাকে ফাঁসি দিন। প্লিজ ষড়যন্ত্রকারীর মনগড়া পত্রিকা সংবাদের উপর ভিত্তি করে খেলা থেকে আমাকে বঞ্চিত করবেন না।’

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩ ও ৪ মে অনুষ্ঠিতব্য ‘কক্সবাজারের ডিসি সাহেবের বলী খেলা’ নিয়ে গত ১৭ এপ্রিল জেলা প্রশাসক কার্যায়ের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এক সদস্য ইয়াবা সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে এবারের খেলায় দিদার বলীয়কে বাদ দিতে প্রস্তাব করেন। প্রস্তাব পেয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন তাকে বাদ দেয়ার ঘোষণা দেন।

প্রসঙ্গত, দিদার বলী ‘কক্সবাজারের ডিসি সাহেবের বলী খেলা’র ১৫ বার একক চ্যাম্পিয়ন এবং তিন বার যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন। একইভাবে দেশের আলোচিত চট্টগ্রামের জব্বারের বলী খেলা’র ১২ একক ও তিনবার যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন।