আলমগীর মানিক,রাঙামাটি :

রাঙামাটি শহরের টিএন্ডটি এলাকা থেকে ফেনীর ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারি ইফতেখার উদ্দিন রানা (২১)কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। রাঙামাটি পুলিশের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত ১৭ই এপ্রিল পিবিআইয়ের একজন উদ্বর্তন কর্মকর্তা রাঙামাটি শহরের টিএন্ডটি এলাকায় এসে সেখানে অবস্থান করছে মর্মে পুলিশকে অবহিত করে এবং প্রয়োজন অনুসারে সহযোগিতা লাগতে পারে বলে জানিয়েছিলো। এরপরে পুলিশ আর কিছুই জানে না বলেও জানিয়েছেন ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার ঐ কর্মকর্তা।

এদিকে, পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: মঈনউদ্দিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শনিবার ভোর রাতে রাঙামাটি সদরের টিঅ্যান্ডটি আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোনাগাজীর চরগনেশ এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে রানা ওই হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে রাঙামাটি এসে টিএন্ডটির ওই বাসায় অবস্থান করছিলো।

পিবিআই জানিয়েছে, নুসরাত পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় তাই ভাই যে মামলা করেছেন সেখানে ইফতেখার উদ্দিন রানার নাম নেই। তদন্তে তার সংশ্লিষ্টতার তথ্য বেরিয়ে আসে। কারাগারে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার সঙ্গে দেখা করে আসার পর তার অনুসারীরা হোস্টেলে যে বৈঠকে বসে নুসরাতকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন, সেই বৈঠকে ছিলেন ইফতেখার রানা। রানাকে শনিবার ফেনীতে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রোববার এই আসামিকে আদালতে হাজির করা হবে। গত ২৬ মার্চ নুসরাতের মা শিরীনা আক্তার মামলা করার পরদিন সিরাজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই মামলা প্রত্যাহার না করায় ৬ এপ্রিল পরীক্ষার হল থেকে মাদ্রাসার একটি ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে আগুন দেয় বোরকা পরা কয়েকজন। আগুনে শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়া নুসরাত ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার জানান, আগুন দেওয়ার সময় প্রথমে চারজনের নাম পাওয়া গেলেও তদন্তে তারা নিশ্চিত হন যে সেখানে পাঁচজন ছিল। ওই পাঁচজন হলেন- শাহাদাত হোসেন শামীম, যোবায়ের আহমেদ, জাবেদ হোসেন, অধ্যক্ষের ভায়রার মেয়ে উম্মে সুলতানা পপি ও কামরুন নাহার মণি। নুসরাতের সহপাঠী পপি ও মনিও এবার ওই মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। ওই পাঁচজনসহ মোট ১৭ জনকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও পিবিআই। হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই আসামি নূর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক যে জবানবন্দি দিয়েছেন, সেখানে পুরো ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সেই জবানবন্দি অনুযায়ী ৪ এপ্রিল রাতে এক গোপন বৈঠকে নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা হয়। রাঙামাটি থেকে গ্রেফতার হওয়া ইফতেখার উদ্দিন রানাও উপস্থিত ছিলেন ওই বৈঠকে।