নীতিশ বড়ুয়া, রামু :

পহেলা বৈশাখ মানে নিজের সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে মনে রাখা। বাঙালি সংস্কৃতিতে নতুন ভাবে জাগ্রত হওয়া। চিরন্তন এই ঐতিহ্যকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এ প্রত্যেয়ে নাচ-গান আনন্দে বাংলা নববর্ষকে বরণ ও পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়েছে রামুর সাংস্কৃতিক কর্মীরা। হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বুকে নিয়ে প্রতি বছর রামুতে অনুষ্ঠিত হয় বাংলা নববর্ষ বরণ ও চৈত্রমেলা উৎসব। রবিবার ‘বাংলা নববর্ষ বরণ উদযাপন পরিষদ’ রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে, শনিবার ‘চৈত্রমেলা ও নববর্ষ উদযাপন পরিষদ’ রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহার সংলগ্ন মাঠে ও ‘রামু উপজেলা প্রশাসন’ উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে এ উৎসবের আয়োজন করে।

‘আমাদের সংস্কৃতি বিশ্বাস ষোলআনা বাঙ্গালিয়ানায় ঋদ্ধ’ এ প্রতিপাদ্যে গ্রাম বাংলার সংস্কৃতির নানা উপস্থাপনে রবিবার (১৪ এপ্রিল) রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ উৎসবমুখর হয়ে উঠে। সকাল ৭ টায় বৈশাখী গানের সুরে বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানায় বাংলা নববর্ষ বরণ উদযাপন পরিষদ ১৪২৬। ‘প্রভাতী অনুষ্ঠানে’ বাঙ্গালিয়ানায় ঋদ্ধ রামুবাসীর আয়োজনে বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীকী উপস্থাপন করা হয়।

প্রভাতী অনুষ্ঠান শেষে অনুষ্ঠিত হয় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. লুৎফুর রহমানের নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ ও বাংলা নববর্ষ বরণ উদযাপন পরিষদ ১৪২৬ এর সকল সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক সহ সর্বস্তরের জনতা এতে অংশ নেন। সকাল ৯টায় ‘পান্তা ভাত ভোজনে’ স্বতস্ফুর্ত ভাবে অংশ নেন সকলে।

‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো/তাপস নিঃশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক’। নববর্ষের নতুন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল আর্বজনাকে দূর করে, আমাদের সমাজে ও জীবনচারণে নতুন সুর গাঁথায় অঙ্কুরিত হোক নতুনের জয়গানে ২৭ বছর ধরে রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ‘বাংলা নববর্ষ বরণ উদযাপন পরিষদ’ ও ২৩ বছর ধরে রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহার সংলগ্ন মাঠে ‘চৈত্রমেলা ও নববর্ষ বরণ’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে রামুর সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

বাংলা নববর্ষ বরণ উদযাপন পরিষদ ১৪২৬ দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় দেশের গান, কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বাঙ্গালি সাজো, জারিগান, লোকগীতি, লোকনৃত্য প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন, উদযাপন পরিষদের আহবায়ক প্রবীর বড়ুয়া, সদস্য সচিব বশিরুল ইসলাম, মাষ্টার মোহাম্মদ আলম, মাষ্টার কিশোর বড়–য়া, ধর্মদর্শী বড়–য়া, পুলক বড়–য়া, মানসী বড়–য়া, সোনিয়া বড়–য়া, গোলাম মোস্তফা বাবুল, সাংবাদিক খালেদ শহীদ, এইচ. বি পান্থ, ইসকান্দর মীর্জা, অধ্যাপক নীলোৎপল বড়ুয়া, সংগীত বড়–য়া, সাংবাদিক সুনীল বড়–য়া, রেজাউল আমিন মোর্শেদ, নিরুপমা বড়–য়া বেবী, জয়শ্রী বড়–য়া, তাপস মল্লিক, দিপক বড়ুয়া, চম্পক বড়ুয়া, আবুল কাশেম, রাজীব বড়–য়া প্রমুখ।

বাংলা নববর্ষ বরণ উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক প্রবীর বড়ুয়া বলেন, বাংলা নববর্ষ আমাদের সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব। বাংলা নববর্ষ বরণের এ উৎসবে অসম্প্রদায়িক চেতনায় রামুর সর্বস্তরের মানুষ মিলিত হন রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে বাংলার হাজার বছরের বহমান লোকজ সংস্কৃতিকে ধারণ করে আমরা রামুর সাংস্কৃতিক কর্মীরা ‘বাংলা নববর্ষ বরণ উদযাপন’ করে আসছি। ‘আমাদের সংস্কৃতি বিশ্বাস ষোলআনা বাঙ্গালিয়ানায় ঋদ্ধ’ এ প্রতিপাদ্যে বাঙ্গালি সংস্কৃতির মানবিক মূল্যবোধ দেশকে ভালোবাসতে শেখায়। নববর্ষে আমাদের সমাজ-সংস্কৃতিতে বাঙ্গালির জয়গান হোক, প্রত্যাশা করি সকল গ্লানি-জরা মুছে নতুন বছরটি হোক আমাদের জন্য কল্যাণকর’ এ প্রত্যাশার কথা বলেন, বাংলা নববর্ষ বরণ উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব বশিরুল ইসলাম।

শুক্রবার রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহার সংলগ্ন মাঠে ২৩তম চৈত্রমেলা ও নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক চেতনাকে বাঙ্গালীর মনে চির জাগরুক রাখার মানসে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও মেলার আয়োজন করে চৈত্রমেলা ও নববর্ষ উদযাপন পরিষদ ১৪২৬’। দিনব্যাপী আয়োজনে লুডু গাছ আরোহন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সন্ধ্যায় শিশু শিল্পীদের অনুুষ্ঠান ‘আনন্দ উৎসব’, রাতে বাংলা সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘আনন্দ মেলা হাউজফুল’ অনুষ্ঠিত হয়। রাত ১২টার পরপরই ‘আতশ বাজি’ উৎসবের মাধ্যমে ১৪২৬ বাংলা নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠান করা হয়।

চৈত্রমেলা ও নববর্ষ উদযাপন পরিষদের প্রধান উদ্যোক্তা জেলা যুবলীগ নেতা পলক বড়ুয়া আপ্পু’র সঞ্চালনায় পুরো অনুষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন রামু উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সুবীর বড়ুয়া বুলু।