সাইফুল ইসলাম বাবুল

বাংলাদেশে ধর্ষণ বাড়ছে, বাড়ছে হত্যা। এর সাথে একই ভাবে বাড়ছে নিষ্ঠুরতা অথচ এই অপরাধের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় তেমন আনা যাচ্ছে না বলা চলে। এর কারণ, অনেকেরই আছে ক্ষমতার ‘আশীর্বাদ’, তাই তারা অপ্রতিরোধ্য। কোনো নারীই
যেন আজকাল আর নিরাপদ নন। রাস্তাাঘাট, হাট-মাঠ, বাস ট্রেন, স্কুল-কলেজ, কর্মস্থল কিংবা আপন গৃহস্থল- কোথায় কার কাছে নারী নিরাপদ? বিবেকবান প্রতিটি পুরুষই এসব ঘটনায় লজ্জিত হওয়া উচিত।

প্রতিনিয়ত নারী ধর্ষিত, অপহৃত, লাঞ্ছিত, অপমানিত হচ্ছে, সে সমাজে কেমন করে আমরা বলবো নারী-পুরুষের সমতা রয়েছে? যেসব নারী প্রতিনিয়ত এসব ঘটনার শিকার হচ্ছে সেই নারীটি হতে পারে আপনারই মা- বোন কিংবা ঘনিষ্ট কেউ। পরিবার থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান কোথাও যেন নিরাপত্তা বলতে কিছুই নেই। ছোট্ট শিশু তাঁর পরিবার ও প্রতিবেশীর কাছে, একজন কর্মজীবী মহিলা তার কর্মস্থলে, একজন গৃহিণী তার পরিবারে, অতি সাধারণ একজন রোগী নার্সিং হোমে বা হাসপাতালে নিরাপদ নয়। এভাবে পদে পদে নারী নির্যাতনের ধারা আরো বেড়ে যাচ্ছে। ঘরে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সব জায়গাতেই প্রতিনিয়ত বখাটে, সহকর্মী, শিক্ষক, সহপাঠী দ্বারা নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে নারীকে।

নারী নির্যাতন একটি সামাজিক ব্যাধি। বর্তমানে এই ব্যাধি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পত্রিকার পাতা, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ রাখলেই দেখা যাচ্ছে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, গুম, খুন, অপহরণ, মুক্তিপণসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের যত সব সংবাদ। আমরা আমাদের
লজ্জ্বা কোথায় রাখবো? সুশীল সেজে, যুক্তি দিয়ে, এগুলো না দেখার ভান করে আর কত দিন? ভুলে যাবো সব? আসলে ভেবে দেখুন, আমাদের মা বোনেরা ধর্ষিত হচ্ছে নাকি ধর্ষিত হচ্ছে আমাদের বিবেক? লোমহর্ষক অগনিত ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু প্রকাশ পাচ্ছে হাতে গুনা কয়েকটা। অনেকে মান সন্মানের ভয়ে মুখ খুলে না আর আইনী সহযোগীতায়তো আসতেই চায় না। ফলে এমন গুরুত্বর
অপরাধ করেও বিচার না হওয়ায় অপরাধিরা আরেকটি ঘটনা ঘটনানোর সাহস অর্জন
করছে। জরিপ অনুসারে, শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন ও পাশবিক নিপীড়ন আশঙ্কাজনক
বৃদ্ধি পেয়েছে। পথেঘাটেও দেদারচ্ছে ঘটছে শিশু ধর্ষণের বর্বরোচিত ঘটনা।

একটা সমাজ কতখানি অসুস্থ হলে এ রকম নারকীয় ঘটনা রোজ ঘটতে পারে। শিশুদের ওপর নির্যাতন বৃদ্ধির কারণ হিসেবে অনেকেই আইশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতাকে দায়ী করেন। পুলিশের পক্ষ থেকেও স্বীকার করা হচ্ছে, শিশুদের ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। নারী ও শিশুর প্রতি নির্মমতা ও নির্যাতনে হতবাক ও ক্ষুব্ধ হচ্ছেন বিবেকবান মানুষ। গত ১০ বছরে প্রতিদিন গড়ে ১১ জন নারী সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশে। শিশুরা এক শ্রেণীর বিকৃতমনা মানুষেরব টার্গেটে পরিণত হয়েছে। নিপীড়ন চালানোর একটা বড় কারণ নৈতিকতাহীন মানসিকতা।

নারীর প্রতি সহিংসতাও বেড়ে চলেছে। ধর্ষণের পর হত্যা ও লাশ গুম করার ঘটনাও ঘটছে। পরিচয় নিশ্চিহ্ন করতে নারীকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটছে। তবু সুষ্ঠু বিচার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। ফরেনসিক পরীক্ষার ঝামেলা এবং আলামত সংগ্রহ করতেও অভিযুক্তকে পুলিশের কাছে উপস্থিত হতে বাধ্য করায় অনেকেই লোকলজ্জায় এসব ঘটনা এড়িয়ে যেতে চান।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩)-এর ৯ ধারা অনুযায়ী, যে শাস্তির বিধান রয়েছে তা হলো- ধর্ষণের ফলে কোনো নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে ধর্ষণকারীর জন্য রয়েছে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং অতিরিক্ত অন্যূন এক লাখ টাকা অর্থদন্ডের বিধান। একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করলে ধর্ষণকালে বা ধর্ষণের পর যদি তার মৃত্যু ঘটে, তবে ওই দলের সবার জন্যই এই শাস্তির প্রযোজ্য হবে।

থানায় মামলা হলেও গ্রেফতার হয় না অপরাধী। গ্রেফতার হলেও মামলা বেশি দূর এগোয় না। প্রভাবশালী বা ক্ষমতাসীনদের হুমকিতে আছেই; তাদের মধ্যস্থতায় কথিত মীমাংসা করতে বাধ্য হন অভিযুক্তরা। মামলা চলাকালে বিভিন্ন বিব্রতকর পরিস্থিতি এবং বিচারে দীর্ঘসূত্রতা জনমনে আইনের আশ্রয় নিতে অনীহা তৈরি করে। ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে এসব প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে কী ভাবছে রাষ্ট্র?