মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
আগামী মে মাসের প্রথম সাপ্তাহেই ইয়াবাবাজ, বিকাশবাজ ও হুন্ডিবাজদের
দ্বিতীয় দফে আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি অনুষ্ঠানে আসার দিনটি নিশ্চিত করলেই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের চুড়ান্ত কার্যক্রম শুরু হবে। তারআগে প্রথম দফায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ কলেজ মাঠে আত্মসমর্পণকৃত ১০২ জন ইয়াবাবাজ আত্মসমর্পণের শর্তানুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দু’টি মামলা থেকে তারা শীঘ্রিই অব্যাহতি পাবে। অব্যাহতির বিষয়ে সমস্ত প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি এখন চুড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে শুধুমাত্র ১৬ ফেব্রুয়ারি আত্মসমর্পণের দিন টেকনাফ মডেল থানায় ইয়াবাবাজদের বিরুদ্ধে দায়ের করা জিআর ৯৮/২০১৯ এবং জিআর ৯৯/২০১৯ মামলা ২ টি প্রত্যাহার করা হবে। আত্মসমর্পণের শর্তানুযায়ী আত্মসমর্পণের আগে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো আদালতে স্বাভাবিক আইনী প্রক্রিয়ায় চলমান থাকবে। এছাড়া তাদের আয় বহির্ভূত, জীবনমানের সাথে অসংগতিপূর্ণ অবৈধ স্থাবর-অস্থাবর, নামে-বেনামে অর্জিত সম্পদের বিষয়ে রাষ্ট্রের চারটি সংস্থা যথাক্রমে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাসস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্স ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, পুলিশের সিআইডি’র ইকোনোমিক ক্রাইম ইউনিট সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেবেন। ইতিমধ্যে সম্পদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কক্সবাজার জেলা পুলিশ ১০২ জন আত্মসমর্পণককারী ইয়াবাবাজদের তথ্য উপাত্ত সহ চারটি সংস্থাকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন। সুত্রমতে-উল্লেখিত সংস্থা চারটি এবিষয়ে তদন্তও শুরু করে দিয়েছেন। ইয়াবাবাজদের আত্মসমর্পণের সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত একটি বিশ্বস্ত সুত্র এতথ্য সিবিএন-কে নিশ্চিত করেছে। সুত্রমতে, এবারো ইয়াবাবাজদের আত্মসমর্পণের বিষয়টি মধ্যস্থতা করছেন প্রাইভেট টিভি চ্যানেল-২৪ এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, সিনিয়র সাংবাদিক কক্সবাজার জেলার পেকুয়ার পূর্ব উজানটিয়ার কৃতিসন্তান এম.এম আকারাম হোসাইন। দ্বিতীয় দফে প্রায় ২০০ ইয়াবাবাজ, হুন্ডিবাজ ও বিকাশবাজকে আত্মসমর্পণের টার্গেট রাখা হয়েছে। তারমধ্য, দেড় শতাধিক ইয়াবাবাজ, বিকাশবাজ ও হুন্ডিবাজের সাথে তাঁর সরাসরি যোগাযোগ হয়েছে বলে এম.এম আকরাম হোসাইন সিবিএন-কে জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে যোগাযোগকৃতদের মাঝে রাষ্ট্রের কাছে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আগ্রহ খুব বেশী উল্লেখ করে সাংবাদিক এম.এম আকরাম হোসাইন সিবিএন-কে আরো বলেন-ইয়াবাবাজেরা আত্মসমর্পণের উদ্দ্যেশে ভাল সাড়া দিচ্ছে এবং এবার ইয়াবানগরী টেকনাফ থেকে ইয়াবাবাজদের শেকড় সহ তুলে আনার চেষ্টা করা হবে ইনশাল্লাহ। তিনি জানান-আগ্রহী আত্মসমর্পনকারীদের কক্সবাজার জেলা পুলিশের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে সমন্বয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে। যাতে আগ্রহীদের আত্মসমর্পণে কোন বেগ পেতে নাহয়। অপর একটি বিশ্বস্ত সুত্র জানিয়েছে, আত্মসমর্পণে আগ্রহী অর্ধশতাধিক ইয়াবাবাজ, বিকাশবাজ ও হুন্ডিবাজ ইতিমধ্যে একটি জায়গায় তারা নিজেরা নিজেদের উদ্যোগে জড়ো হয়েছে। জড়ো হওয়ার স্থানটি কক্সবাজার জেলা কারাগারের আশেপাশে বলেই সুত্রটি জানিয়েছে। জড়ো হওয়াদের মধ্যে ৮ জন ইয়াবাবাজ ডন, ৫ জন হন্ডিবাজ ডন ও ৩ জন বিকাশবাজ ডন রয়েছে। জড়ো হওয়া সকলেই টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার নাগরিক। আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহ’র মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি নিজে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে ইয়াবাবাজ, হুন্ডিবাজ ও বিকাশবাজদের আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান করাবেন। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম-বার, কক্সবাজারের সংসদ সদস্যবৃন্দ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেন্ঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম-বার, অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম) আবুল ফয়েজ, বিজিবি’র রিজিওনাল কমান্ডার, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, র্যাবের কক্সবাজার অন্ঞ্চলের প্রধান সহ সংশ্লিষ্ট উর্ধবতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। জেলা পুলিশের উদ্যোগে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় দফা আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে কক্সবাজারের স্বনামধন্য পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম সভাপতিত্ব করবেন। অনুষ্ঠানের শৃংখলা ও আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার স্বার্থে দ্বিতীয় দফায় আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের ন্যূনপক্ষে ২ দিন আগে থেকে নতুন কোন আত্মসমর্পণকারীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নেয়া হবেনা। আইনি জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার আশংকায় এবং গতবারের আত্মসমর্পণের ভূলত্রুটি শোধরিয়ে ১৬ ফেব্রুআরির মতো ইয়াবাবাজ, বিকাশবাজ ও হুন্ডিবাজেরা নিজেদের উদ্যোগে আত্মসমর্পনের জন্য জড়ো হওয়ার বিষয়টি এবার প্রকাশ নাকরে, সম্পূর্ণ গোপন রাখা হচ্ছে বলে সুত্রটি জানিয়েছে।