মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান)
বান্দরবানের লামা-আলীকদম-চকরিয়া সড়কে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। শুক্রবার (১২ এপ্রিল) ভোর ৬টা হতে ধর্মঘট শুরু হয়। সকাল থেকেই লামা, আলীকদমের শত শত যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য লামা পৌর বাস টার্মিনাল, চকরিয়া শহীদ আবদুল হামিদ বাস টার্মিনাল ও আলীকদম বাস স্টেশনে ভিড় জমান। কিন্তু কোনো যানবাহন ছাড়েনি। হঠাৎ ডাকা এই ধর্মঘটে যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন ভোগান্তি।
লামা-আলীকদম-চকরিয়া সড়কে বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু করার প্রতিবাদে আরাকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, চকরিয়া-লামা-আলীকদম বাস মালিক সমিতি, জীপ মালিক সমিতি যৌথভাবে এই পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করে। এদিকে ১২ এপ্রিল ২০১৯ইং শুক্রবার বিআরটিসি বাস সার্ভিস শুভ উদ্বোধনের কথা থাকলেও অনিবার্য কারণবশত উদ্বোধন হয়নি। তবে শনিবার বিআরটিসি বাস চালুর কথা রয়েছে।
পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় চিরিঙ্গা শহীদ আব্দুল হামিদ পৌর বাস টার্মিনালের আরাকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে এক জরুরী বৈঠকের আয়োজন করা হয়। আরাকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, বাস মালিক সমিতি ও জীপ মালিক সমিতি যৌথ এই সভার আয়োজন করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন, আরাকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি জহিরুল ইসলাম। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, বাস মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল হোছাইন কোম্পানী, সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন মনু, জীপ মালিক সমিতির সভাপতি মো. বাবুলু, সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল, শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি আবুল হোসেন মনু, সাধারণ সম্পাদক মো. রফিক উদ্দিন, বাস ও জীপ মালিক যৌথ কমিটির সহ-সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন। এছাড়া বাস ও জীপ মালিক-শ্রমিক যৌথ কমিটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ সভায় অংশ নেয়।
চকরিয়া-লামা-আলীকদম বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন মনু বলেন, প্রশাসন আমাদের সাথে কোন প্রকার আলাচনা না করে হঠাৎ বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা বিআরটিসি বাস চালুর বিষয়টি গতরাতে জানতে পেরে সকাল থেকে আমাদের সকল গাড়ি সরিয়ে নিয়ে আসি। প্রায় ৪০ বছর যাবৎ লামা-আলীকদম বাসীকে আমার সেবা দিয়ে আসছি। আমাদের পেটে লাথি দিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হয়নি। প্রশাসন আমাদের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসতে চাইলে আমরা রাজি আছি। সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত পরিবহন ধর্মঘট চলবে।
চকরিয়া-লামা-আলীকদম জীপ মালিক সমিতির সভাপতি মো. বাবুলু বলেন, আমরা আরাকান সড়ক পরিবহন, বাস ও জীপ মালিক সমিতি আলোচনায় বসেছি। সভা চলছে। মিটিং শেষে আমরা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিব।
এদিকে শুক্রবার সকাল থেকেই লামা ও আলীকদম হতে বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার জন্য বাস টার্মিনালে আসেন শত শত যাত্রী। তাদের অনেকে বলেন, আমরা জানতাম না, এই সড়কে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। স্টেশনে আসার পর জানতে পারি। কোনো যানবাহন না ছাড়ায়, এখন কিভাবে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাব তা বুঝে ওঠতে পারছি না। বাস ও জীপ মালিকদের কাছে সবাই জিম্মি।
বিআরটিসি চট্টগ্রাম শাখার সড়ক পরিবহন প্রতিনিধি মো. শোয়াইব শুভ জানান, শুক্রবার সকালে বাস সার্ভিসের উদ্বোধনের কথা ছিল। কিন্তু এই সড়কের বাস ও জীপ মালিকদের ধর্মঘটের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। আমার প্রথমে লামা ও আলীকদমে ৪টি বিআরটিসি বাস দিয়ে যাত্রা শুরু করব। পরে চাহিদা মত আরো বাস বাড়ানো হবে। বিআরটিসি বাস চালুর মধ্য দিয়ে প্রথমে এই এলাকার ১৬জন মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাছাড়া বিআরটিসি বাস সেবাটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ঘোষিত প্রকল্প।
এই বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ জান্নাত রুমি বলেন, সকাল থেকে পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের সাথে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। আলীকদম হতে বিআরটিসি’র বাস গুলো সরিয়ে না নিলে, তারা পরিবহন ধর্মঘট বন্ধ করবেনা বলে জানায়। এই মুহুর্তে মালিক সমিতির নেতারা বৈঠকে বসেছে। যত দ্রুত সম্ভব দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানে চেষ্টা করা হবে।