শফিক আজাদ, উখিয়া:

উখিয়ায় বনকর্মীরা তান্ডব চালিয়ে ভূমিহীন হতদরিদ্র একটি পরিবারের বসত ঘর ভেঙ্গে দিয়েছে। দরিদ্র পরিবারটি ছোট শিশুদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিবা রাত্রি কাটাচ্ছে। উক্ত বন ভূমির জমিটি নিয়ে বন বিভাগ ঐ দরিদ্র পরিবারটির বিরুদ্ধে আদালতে পর পর দুটি মামলাও দিয়েছে। এ মামলায় কোন আদেশ না থাকা সত্বেও উদ্দেশ্য মূলক ভাবে বৃহস্পতিবার বিকালে লোকজন নিয়ে তান্ডব চালিয়ে ঐ ঘরটি ভেঙ্গে দিয়ে, ঘরের লোকজনদের মারধর করে। এতে শিশু ও মহিলা সহ ৮জন আহত হয়েছে।

আহতরা হলেন- হাকিম আলী (৫৫) ছৈয়দ আলম প্রকাশ কালু (৪৫) তার স্ত্রী গোল চেহের (৩৮) মেয়ে ফাতেমা বেগম (২০) কুলসুমা বেগম(১৭) উম্মে হারেচা (১০) ছেলে মোঃ রিদুয়ান(১৩) এবং ১ বছরের শিশু পুত্র মোঃ ইসমাঈল। এসময় পাশ^বর্তী গোল বাহার (৩৯) নামের এক মহিলা ঘটনা দেখতে আসলে বনকর্মীদের হাতে সেও প্রহৃত হন। আহতদেরকে উখিয়া বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিটে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আহত হাকিম আলীর ছোট ভাই আবদুল্লাহ।

উখিয়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন,ওয়ালা পালং বন বিটের অধীন যুববনিয়ায় বন বিভাগের জমি জবর দখল করে পূর্ব ডিগলিয়া পালং গ্রামের হাজী উলা মিয়ার ছেলে হাকিম আলী(৫৫) ঘর করায় সেটি অভিযান চালিয়ে ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। উয়ালা পালং বন বিট কর্মকর্তা ফেরদৌস আহম্মদ বলেন,হাকিম আলী নতূন ভাবে বন ভূমি জবর দখল করে ঘর নির্মাণ করে ও বেশ কিছু গাছ কাটায় তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা দেওয়া হয়েছে আদালতে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সহকারী কমিশনার ( ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ পুলিশের উপস্থিতিতে উক্ত ঘরটি ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। তবে কাউকে মারধর করার কথা অস্বীকার করেন বন বিট কর্মকর্তা। আদালতে মামলা থাকলেও উচ্ছেদ বা অন্য কোন আদেশ নেই বলেও তিনি জানান। ভূমিহীন দরিদ্র হাকিম আলী বলেন, দীর্ঘ অর্ধশত বছর পূর্ব থেকে তার পিতা মৃত- হাজী উলা মিয়া জায়গাটি আবাদ করে ভোগ দখল করে আসছিল। পিতার মৃত্যুর পর থেকে ঐ ভূমিতে বসত ঘর নির্মাণ করে বিগত ১৫ বছর ধরে স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদের নিয়ে বসবাস করে আসছি। কোন প্রকার নৌটিশ অথবা অবগত না করে আমার বসতবাড়ীটি ভেঙ্গে দিয়েছে।

হাকিম আলী জানান,গত কয়েক মাস ধরে বন বিট কর্মকর্তা হেডম্যান শামশুল আলমকে দিয়ে মোটা টাকা দাবী করে আসছে আমার নিকট থেকে। অন্যথায় ঘর ভেঙ্গে দিয়ে মামলা দিয়ে উচ্ছেদ করা বলে হুমকি দেয় সে। বন ভূমির ভিলিজার হিসেবে বনভূমির জমি ভোগ দখল করে বসবাস করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু দাবীকৃত টাকা দিতে না পারায় তার বিরুদ্ধে এক মাসের ব্যবধানে ২টি বন মামলা দিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এমন অবস্থায় করা হয়েছে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার বই খাতা পর্যন্ত ছুটে ফেলে দিয়েছে বনকর্মীরা। যাহা অমানবিক বলে সে দাবী করেন।

তিনি অভিযোগ করে,ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ চলে যাওয়ার পর বহিরাগত লোক দিয়ে মারধর করে ঘরে তান্ডব চালানো হয়েছে।

এব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ফখরুল ইসলাম বলেন,আদালতে মামলার কথা বন বিভাগ আমাকে অবহিত করেনি। তবে আমি বনভূমি উচ্ছেদের গিয়ে ঘরটি গুড়িয়ে দিয়েছি, প্রশাসনের লোকজন আমার সামনে কাউকে মারধর করা হয়নি। এছাড়া ঘটনাস্থলের আশ পাশে আরো ৮/৯ টি অবৈধ জবর দখলকৃত ঘর রয়েছে। ওগুলো কেন উচ্ছেদ করা হচ্ছে না তা বন কর্মকর্তারা জানাতে পারেননি। তাই একটি উচ্ছেদ করে আমি চলে আসি এবং বাকী অবৈধ ঘরগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে উচ্ছেদের ব্যবস্হা নিয়ে জানাতে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।