শাহেদ মিজান, সিবিএন:
‘কক্সবাজার সদর হাসপাতালকে নিয়ে আপনারা অনেক ছিনিমিনি খেলেছেন। এটা আর একটি বারও করতে দেয়া হবে না। ভবিষ্যতে যদি আবারো এক রকম অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ করেন তাহলে আপনাদের কক্সবাজার থেকে বিতাড়িত করা হবে। অনেক হয়েছে, আমাদের ধৈর্য্যের সীমা শেষ হয়ে গেছে। তাই স্পষ্ট করে বলে রাখছি- ডাক্তারি করুন, গাদ্দারি করবেন না। যদি তা করেন তাহলে পরিণতি খুব খারাপ হবে।’

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকাল ১১টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের চত্বরে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ বক্তারা এই হুঁশিয়ারী দিয়েছেন। ‘আমরা কক্সবাজারবাসী’র সমন্বয়ক নাজিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে ও সমন্বয়ক কলিম উল্লাহর পরিচালনায় এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

কথায় কথায় চিকিৎসা বন্ধ, রোগীদের সাথে খারাপ ব্যবহার, দায়িত্ব পালনে অবহেলা, দাম্ভিকতা প্রদর্শনসহ সব ধরণের অনৈতিক কাজ থেকে বিরত হতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসকের হুঁশিয়ারী দিয়েছেন কক্সবাজারের সাধারণ মানুষ। একই সাথে ইন্টার্ন চিকিৎসক কর্তৃক রোগী ও স্বজনদের মারধর, পুলিশের হাতে সোপর্দ ও হয়রানিমূলক মামলার প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। এসব হাসপাতালের চলমান এসব সমস্যা নিরসন ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে আয়োজিত এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে কক্সবাজার সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তা না হলে কক্সবাজার ঐক্যবদ্ধ হয়ে অপকর্মকারী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলেও হুঁশিয়ারি করা হয়েছে।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ইন্টার্ন চিকিৎসহ চিকিৎসকেরা কক্সবাজার সদর হাসপাতালকে জিম্মি করে রেখেছে। কথায় কথায়, যখন-তখন তারা চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়ে হাসপাতালকে অচল করে দিচ্ছে। রোগীর স্বজন কর্তৃক হামলার দোহাই দিয়ে বার বার এই মানবতা বিরোধী অপরাধ করছে। কিন্তু প্রতিটি ঘটনায় দেখা যায়, রোগীর স্বজনদের চেয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের অপরাধ বেশি। ভুল চিকিৎসা, চিকিৎসায় অবহেলা, রোগী ও স্বজনদের সাথে অসদাচারণের কারণে মূলক এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা প্রতিনিয়ত এই অপরাধ করছে। কিন্তু নিয়মিত চিকিৎসক ও বিএমএ’র নেতারা এসব ইন্টার্ন চিকিৎসক নামক মাস্তানদের পক্ষ নিয়ে চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়।

চিকিৎসকদের উদ্দেশ্য করে বক্তারা বলেন, ‘জনগণের ঘাম ঝরানো টাকা দিয়ে চিকিৎসক হয়েছেন আপনারা। বাপের টাকা দিয়ে আপনারা এত বিপুল টাকা ব্যয় করে আপনারা ডাক্তারি পড়তে পারতেন না। কিন্তু পেশায় ঢুকে আপনারা জনগণের কথা ভুলে যান। মনে রাখবেন আপনারা জনগণের সেবক। তাই জনগণের সাথে ভালো ব্যবহার করে মানবিক আচরণ করে চিকিৎস সেবা দিতে। সংকটকালীন মুহূর্তে কোনো রোগী বা স্বজনের মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক থাকে না। অথচ সেময় আপনারা (চিকিৎসকেরা) খারাপ আচরণ করেন। তখন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে উপায় থাকে না।

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিয়ে বক্তারা বলেন, হাসপাতালের বার বার সংঘটিত অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা দায়ী। তারা মাস্তানের ভূমিকায় নিয়ে হাসপাতালে ঢুকেন। রোগীদের সাথে তারা পেশাদার মাস্তানের মতো আচরণ করেন। তাদের অনেক ইয়াবা সেবন করে সব সময় উগ্র মেজাজে থাকে। রাতে বেলা ইয়াব সেবন করে দিনে বেলায় হাসপাতালে এসে তারা অস্থির থাকেন। এত কথার একটু এদিক-ওদিক হলেই উত্তেজিত হয়ে রোগী ও স্বজনের হেনস্থা ও অসদাচরণ করেন। এসব ঘটনা নিয়ে রোগীর স্বজনেরা প্রতিবাদ করলেই ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পক্ষ নিয়ে নিয়মিত চিকিৎসকেরাও চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেন। হাসপাতালের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে ইন্টার্ন চিকিৎসক নামের মাস্তানদের লাগাম টানতে হবে। একই সাথে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিয়ে রাজনীতি করা বিএমএ’র দু’য়েকজন নেতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

বক্তারা বলেন, ‘চিকিৎসকদের অনেকেই প্রাইভেট হাসপাতালের ব্যবসা করেন। তাদের সাথে যুক্ত রয়েছে বিএমএ’র কতিপয় নেতাও। সবাই মিলে সিন্ডিকেট করে প্রাইভেট হাসপাতালের ব্যবসা লাভবান করার জন্য পরিকল্পিতাবে অচলাবস্থা সৃষ্টি করে সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা বন্ধ রাখে।’

প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বক্তারা আরো বলেন, কক্সবাজারের ২৫ লাখের বেশি মানুষের একমাত্র সম্ভল কক্সবাজার সদর হাসপাতাল। এই হাসপাতালে উন্নয়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এই হাসপাতালটিকে করা হয়েছে আধুনিকায়ন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে করে ব্যাহত করে জনগণের সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করছে চিকিৎসকেরা। তারা প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হাসপাতালটি নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। রোগী ও স্বজনদের মারধর করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠাচ্ছে। প্রশাসনও ডাক্তার নামে এসব কসাইদের পক্ষ নিয়ে রোগী ও স্বজনদের জেলে পাঠাচ্ছে। এমন অন্যায়-জুলমু আর বরদাশত করা হবে না। রোগীর স্বজনকে মারধর ও অন্যায় মামলাটি করতে দেয়া হবে না। যদি তাই হয় তাহলে কক্সবাজার আর ঘরে বসে থাকবে না। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাস্তান ডাক্তাদের প্রতিহত করবে। একই সাথে অতি স্বত্ত্বর কারান্তরীণ মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়ে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা এড. ফরিদুল আলম, জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যাপক ও সমুদ্র কন্ঠ সম্পাদক মঈনুল হাসান পলাশ, উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক রুহুল আমিন সিকদার, জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাক আহামদ শামীম, পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মেহেদী রহমান, ‘আমরা কক্সবাজারবাসী’র সমন্বয়ক এইচ এম নজরুল ইসলাম, পৌর কাউন্সিলর শাহেনা আকতার পাখি, সাংবাদিক মহসিন শেখ, নারী নেত্রী ছালেহা আকতার আঁখি, মহেশখালী পানচাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম বাঙ্গালী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কল্লোল দেসহ আরো বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে এক বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করা হয়।