ডেস্ক নিউজ:

পাঁচ কারণে গ্রহণ করা হয়েছে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ এবং ইনডোর ফার্মিং গবেষণা সংক্রান্ত সুবিধাদি স্থাপন প্রকল্প। শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়াজাত করে কীটনাশকমুক্ত, সামুদ্রিক আগাছা শুকানো ও সংরক্ষণ প্রযুক্তির ওপর গবেষণা করাই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রকল্পটি একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) অনুমোদন হয়েছে।

সূত্র জানায়, পাঁচ কারণে সরকার এ প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে। সেই কারণগুলো হচ্ছে- বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) চট্টগ্রাম গবেষণাগারে নিয়ন্ত্রিত মৎস্য চাষ প্রযুক্তি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, ক্লোজড কনটেইনমেন্ট অ্যাকুয়াকালচার পদ্ধতিতে অল্প জায়গায় রফতানিমুখী চিংড়ি, কোরাল মাছ ও কাঁকড়া উৎপাদনের কলাকৌশলের ওপর গবেষণা, এ শিল্প প্রতিষ্ঠায় উদ্যোক্তাদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ প্রদান, পানির পুনর্ব্যবহার করে দেশীয় মাছ ও পোনা তৈরির কলাকৌশলের ওপর গবেষণা ও অনু শৈবাল, কপিপড, সামুদ্রিক আগাছা, সী-ভেজিটেবল উৎপাদন ও পরিশোধন ব্যবস্থার ওপর গবেষণা করা।
সূত্র আরও জানায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন (বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ) বিসিএসআইআর চট্টগ্রাম কেন্দ্রে গবেষণার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী মাছ শুকানো প্রযুক্তির উন্নয়ন ও এডাপশন, ভাইরাসমুক্ত পোনা তৈরি, কেমিক্যালমুক্ত ও প্রোটিনসমৃদ্ধ মাছ উৎপাদনে আরএএস প্রযুক্তির ওপর গবেষণা, অ্যাকুয়াপোনিক সবজি চাষ গবেষণা, ইনডোর বৈদেশিক প্রযুক্তির সুবিধা দেশের আবহাওয়া উপযোগী ও ব্যয় সাশ্রয়ী করার জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের সার্বিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি খাদ্য। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যাপক পার্থক্য, অতিবৃষ্টি, ফসলহানিকর পোকামাকড় ও অণুজীবের আক্রমণ বৃদ্ধির কারণে কাঙ্খিত উৎপাদনের জন্য কৃষিক্ষেত্রে অতিমাত্রায় কীটনাশকের ব্যবহার বাড়ছে। তাই দরকার ইনডোর অ্যাকুয়াপোনিক সবজি চাষ ও আমদানি নির্ভর নিউট্রিয়েন্ট দেশে উৎপাদন ও গবেষণা। তাই এই প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করেছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটি আগামী ২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচলিত পদ্ধতিতে বছরে তিন থেকে চার মাস শুঁটকি মাছ তৈরি হয়ে থাকে। মাছ শুকাতে চার থেকে সাত দিন সময় লাগে। এতে ব্যবহার করা লবণ, ডিডিটিসহ কীটনাশক জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। স্বল্প বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ড্রায়ার ব্যবহার করে মাত্র একদিনে মাছ শুকানো যায় এবং এতে মাছের আমিষ মান এবং ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড অক্ষুণ্ন থাকে। ভ্যাকুয়াম প্যাকেজিং করা হলে শুঁটকি মাছ ১২ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় একটি ২ হাজার ৬০০ বর্গমিটার আয়তনের ভবন নির্মাণ করা হবে। ১ হাজার ৮৭২ বর্গমিটার আয়তনের একটি স্টিল সেড ও হাইভোল্টেজ (৩৩/১১ কেভি) এক্সপ্রেস ইলেকট্রিক লাইন নির্মাণ করা হবে। বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, কেমিক্যাল ও আসবাবপত্র সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া ৫১টি কম্পিউটার যন্ত্রাংশ ও অফিস সরঞ্জাম সংগ্রহ এবং স্থানীয় ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সংশ্লিষ্টদের।

সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পটি সরাসরি উৎপাদনমূলক নয়। তবে ভার্টিক্যাল স্থলভূমিতে রেসিডিউমুক্ত শুঁটকি উৎপাদন, ইনডোর অ্যাকুয়াকালচার গবেষণা, অ্যাকুয়াপোনিক সবজি চাষ গবেষণা প্রযুক্তি হস্তান্তর, রফতানি বৃদ্ধি ও আমিষের ঘাটতি পূরণে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ বিবেচনায় প্রকল্পটি দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় নিয়ন্ত্রিত মৎস্য চাষ প্রযুক্তি, কীটনাশকমুক্ত মাছ ও সামুদ্রিক আগাছা শুকানো, সংরক্ষণ প্রযুক্তি ও ইনডোর অ্যাকুয়াপোনিক সবজি চাষ প্রযুক্তির কলাকৌশলের ওপর গবেষণা করা হবে। এ সম্পর্কিত গবেষণাগার নির্মাণ ও গবেষণার প্রয়োজনীয় জমি বিসিএসআইআর, চট্টগ্রাম ক্যাম্পাসে বিদ্যমান। এছাড়া গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল চট্টগ্রামে এবং প্রয়োজনীয় কিছু যন্ত্রপাতি বিসিএসআইআর, ঢাকা ক্যাম্পাসে সহজলভ্য। এ কারণে প্রকল্প এলাকা বিসিএসআইআর গবেষণাগার, ঢাকা ও চট্টগ্রামে নির্ধারণ করা হয়েছে।’