বিশেষ প্রতিবেদক:
প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতাপূর্ণ সহায়তায় ভাগ্য বদলে যাচ্ছে দীর্ঘমানব খ্যাত জিন্নাত আলীর। ৮ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার জিন্নাত আলী বড় হচ্ছেন জটিল রোগকে সঙ্গী করে। তাঁর জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী দিয়েছিলেন পাঁচ লাখ টাকার অনুদান।

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) তাঁকে দেওয়া হয় একখণ্ড জমি, জমিতে তৈরি একটি পাকা দোকান ও মালামাল কেনার টাকা।

দোকানের আয়েই চলবে জিন্নাত আলীর সংসার। তাঁর বাড়ি কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল গ্রামে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসন জিন্নাত আলীর জন্য গর্জনিয়া বাজারে একখণ্ড (০.০০৩৮ একর) জমি বন্দোবস্ত দেয়।

সেই জমির ওপর নির্মিত আধাপাকা দোকানঘরটি মঙ্গলবার দুপুরে উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো.কামাল হোসেন। এ সময় দোকানঘরের পাশাপাশি জমির ডিসিআর ও দোকানের সামগ্রী জিন্নাত আলীকে হস্তান্তর করা হয়। প্রথম ক্রেতা হিসেবে জেলা প্রশাসক দোকান থেকে দুটি টিস্যুর প্যাকেট ক্রয় করেন।

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, জিন্নাত আলী দেশের দীর্ঘ মানব। তাঁর উচ্চতা ৮ ফুট ২ ইঞ্চি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁকে দোকানের পাশাপাশি বসতবাড়িও তৈরি করে দেওয়া হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুৎফুর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) চাই থোয়াই হলা চৌধুরী, গর্জনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু মো.ইসমাইল নোমান প্রমুখ। জিন্নাত আলীর দোকানঘর দেখতে ভিড় জমান এলাকার মানুষ।

জিন্নাত আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ তাঁর পরিবার। তিনি (শেখ হাসিনা) তাঁকে প্রাণে বাঁচিয়েছেন। আয়–রোজগারের জন্য দোকানও দিয়েছেন। এই ঋণ শোধ করার মতো নয়।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ইজারার জমিতে দেড় লাখ টাকা খরচ করে তৈরি হয় একটি আধাপাকা দোকানঘর। সেখানে চাল–ডাল, তেল, তরকারিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল কিনে দেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকার। খরচের জন্য জিন্নাতের হাতে দেওয়া হয় নগদ পাঁচ হাজার টাকা। দোকান উদ্বোধনের কয়েক ঘণ্টায় বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকা।

গর্জনিয়ার বড়বিল গ্রামের বর্গা কৃষক আমীর হামজার (৬০) এক মেয়ে, তিন ছেলের মধ্যে জিন্নাত আলী তৃতীয়। অন্য সবার মতো স্বাভাবিক ছিল জিন্নাতের গড়ন। কিন্তু ওর বয়স যখন ১২ বছর, সে সময় থেকেই দ্রুত উচ্চতা বাড়তে থাকে। প্রতিবছর ২ থেকে ৩ ইঞ্চি করে আকৃতি বাড়তে থাকে। ১০ বছরের মধ্যে প্রায় ৪ ফুট উচ্চতা বেড়ে জিন্নাত এখন ৮ ফুট ২ ইঞ্চির এক দীর্ঘ মানব।

জিন্নাত আলীর বাবা আমীর হামজা ও বড় ভাই মো. ইলিয়াস আলী বলেন, জিন্নাতের এই উচ্চতার জন্য তাঁরা গর্বিত নন। বরং ছেলের দীর্ঘ উচ্চতায় ‘বিড়ম্বনা’ মনে করছেন বাবা।

গত বছরের ২৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন দীর্ঘ মানব জিন্নাত আলী। জিন্নাতকে সংসদ ভবনে নিয়ে যান কক্সবাজার-৩ (রামু-সদর) আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল। জিন্নাতকে একনজর দেখতে সেদিন ভিড় করেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সাংসদেরাও। সবাই জিন্নাতের সঙ্গে ছবিও তোলেন। এ সময় অসুস্থ জিন্নাত আলীর চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের টাকায় গত বছরের ২৪ অক্টোবর জিন্নাত আলীকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. আবদুল্লাহ জিন্নাত আলীর চিকিৎসা করেন।

তিনি বলেন, জিন্নাতের মস্তিষ্কে টিউমার হয়েছে। এ ছাড়া হরমোন সমস্যার কারণে তাঁর উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাঁকে আরও পরীক্ষা করাতে হবে। জিন্নাতের মতো সমস্যা নিয়ে কয়েকজন রোগী এসেছিল। তবে এর মতো দীর্ঘদেহী কেউই ছিল না। বাংলাদেশে জিন্নাতই সম্ভবত সবচেয়ে দীর্ঘ উচ্চতার মানুষ।