মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বান্দরবানঃ

সাংসারিক মনোমালিন্য, বাচ্চাদের ছোটখাটো ঝগড়া ও নিজেদের নানা ভুল বুঝাবুঝির জের ধরে প্রায়সময় ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকত আব্দুল করিম ও মো. নুরুজ্জামান পরিবারের মাঝে। বিগত দুই মাসের মধ্য কয়েকবার উভয় পরিবারের নারী ও শিশুদের মাঝে ঝগড়া ও মারামারি হয়েছে। মানসিক দূরত্ব থাকলেও তারা একে অপরের নিকট আত্মীয়। ছোটখাটো এইসব সমস্যাগুলো সামাজিকভাবে সমাধানের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। অবশেষে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় উভয়ে জড়িয়ে পরে মামলা মোকাদ্দমায়। বলছিলাম বান্দরবানের লামা উপজেলার লামা সদর ইউনিয়নের চিউনী খাল পাড়ার মো. নুরুজ্জামান ও আব্দুল করিমের পরিবারের বিষয়ে।
জানা যায়, গত ১৯ মার্চ ২০১৯ইং মঙ্গলবার দুপুর ১টায় আব্দুল করিমের স্ত্রী কহিনুর বেগম (৪০) মো. নুরুজ্জামানের বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। এসময় পূর্বের নানা বিষয়ের জের ধরে কহিনুর বেগম নুরুজ্জামানের স্ত্রী শাহানারা বেগম (৩২) এর সাথে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়েন।
ঘটনার প্রত্যেক্ষদর্শী চিউনী খাল পাড়ার কোরবান আলীর ছেলে মো. হায়দার আলী (৪৫) বলেন, ঝগড়ার এক পর্যায়ে কহিনুরের চিৎকারে তার মেয়ে আসমা আক্তার (১৫) ছেলে নুর আলম (১৩) এবং শাহানারা বেগমের চিৎকারে তার ছেলে মো. নাহিদ হাসান (১৪) ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। দু’পক্ষের মোট ৫ জনের মধ্যে ঝগড়া ও মারামারি হয়। পরে আমরা কয়েকজন তাদের সরিয়ে দিলে ঝগড়া শেষ হয়। এসময় তাদের উভয় পক্ষের স্বামীরা বাড়িতে ছিলেন না এবং অন্য কেউ এই মারামারির সাথে জড়িত নয়। স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের ঝগড়ার বিষয়ে জের ধরে গত ১লা এপ্রিল ২০১৯ইং আব্দুল করিম তার বড় স্ত্রী কহিনুর বেগমকে বাদী করে মো. নুরুজ্জামানকে একমাত্র আসামী করে বান্দরবান জেলা দায়রা জর্জ কোর্টে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা ১৮/২০১৯ইং রুজু করেন। যে ব্যক্তি ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন না, তাকে জড়িয়ে মামলা করার বিষয়টি দুঃখজনক।
এলাকার মুরুব্বী মৃত ওয়াকিব মিয়ার ছেলে রসিক আলী (৫৫) বলেন, মহিলা ও শিশুদের ঝগড়া নিয়ে প্রতিপক্ষকে হয়রাণী করতে মো. নুরুজ্জামানের নামে নারী শিশু নির্যাতনের মামলা করা উচিত হয়নি। মো. নুরুজ্জামান আমাদের এলাকার মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী ও মেউলারচর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি। সঠিকভাবে তদন্ত করে মামলাটি আমলে নিতে মহামান্য আদালতকে অনুরোধ করছি।
চিউনী খাল পাড়ার সর্দ্দার ও মসজিদ কমিটির সভাপতি শেখ ফরিদ (৪১) বলেন, মো. নুরুজ্জামান এর বউয়ের ছোট বোন জান্নাতুল ফেরদৌসকে ২য় স্ত্রী হিসেবে বিবাহ করে আব্দুল করিম। ২/৩ মাস আগে করিমের বড় স্ত্রী কহিনুর তার ছোট স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসকে মেরে কান কেটে ফেলে। এনিয়ে মো. নুরুজ্জামান এর স্ত্রী শাহানারা প্রতিবাদ করে। সে থেকে তাদের সম্পর্কের অবনতি হয়। অবশেষে ১৯ মার্চ মহিলা ও শিশুদের মারামারির ঘটনা নিয়ে ২৫ মার্চ ২০১৯ইং নুরুজ্জামানের স্ত্রী শাহানারা বেগম বাদী হয়ে আব্দুল করিম সহ ৭ জনকে আসামী করে ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩৫৪/৫০৬ ধারা উল্লেখ পূর্বক সিআর মামলা- ৭৪/২০১৯ লামা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা রুজু করেন। ২৫ মার্চ করা মামলার প্রতিবাদের সম্পূর্ণ কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে ১লা এপ্রিল ২০১৯ইং নারী ও শিশু নির্যাতন মামলাটি রুজু করে কহিনুর বেগম। ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মধ্যস্থতায় স্থানীয় বৈঠকে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
এই বিষয়ে মো. নুরুজ্জামান ও আব্দুল করিম উভয়ে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন এর মধ্যস্থতায় বিরোধটি সমাধান করা হলে তারা মানবেন। স্থানীয় অনেকে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ১৮/২০১৯ইং সত্য নয় বলে জানিয়েছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, দ্রুত উভয় পক্ষকে নিয়ে গ্রাম্য বিচারে বসে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হবে। সে পর্যন্ত দুইপক্ষকে কোন প্রকার বিবাদে না জড়াতে অনুরোধ করেন।