সিবিএন ডেস্ক: অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি মহাকাশ সম্পর্কে মানুষের জানার আগ্রহ সেই আদিকাল থেকেই। সমস্যার সমাধান কিংবা জানার আগ্রহ থেকেই একসময় বিজ্ঞানের উৎপত্তি হয় আর বিজ্ঞান একের পর এক ভেদ করে চলেছে যত রহস্য।

বিজ্ঞানের কল্যাণে মহাকাশের অনেক রহস্য সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে শুধু মহাকাশ সম্পর্কে জানতে পারছি তা নয়, সেখানে ভ্রমণের সুযোগও হাতের নাগালে আসতে যাচ্ছে। আপনি মহাকাশ ভ্রমণে আগ্রহী হোন কিংবা না হোন, এ প্রতিবেদনে আলোচিত মহাকাশে ভ্রমণ বিষয়ক ১২ তথ্যের ওপর চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।

* মঙ্গলগ্রহে শিগগির মহাকাশচারী পাঠানো হবে
২০১৭ সালের মার্চে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাসাকে অর্ডার করেন যেন ২০৩৩ সালের মধ্যে মঙ্গলগ্রহে মানুষ পাঠানো হয় এবং সংস্থাটি স্পেস লঞ্চ সিস্টেম নামে একটি নতুন রকেট তৈরি করছে। এটি হবে খুব রোমাঞ্চকর একটি যাত্রা। এ সিস্টেমের সলিড রকেট বুস্টারস দুই মিনিটের লিফটঅফের (যখন রকেটটি মঙ্গলগ্রহের উদ্দেশ্যে গ্রাউন্ড ছাড়বে) সময় যে তাপশক্তি উৎপাদন করবে তা দিয়ে ৯২,০০০ ঘর সারাদিন আলোকিত রাখা যাবে।

* অনেক কোম্পানি মহাকাশকে কেন্দ্র করে অর্থোপার্জন করতে চায়
ইতোমধ্যে অন্তত চারটি প্রাইভেট কোম্পানি গ্রাহকদেরকে মহাকাশে ভ্রমণ করানোর জন্য প্রথম বাণিজ্যিক রকেট কোম্পানি হওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত আছে। কোম্পানিগুলো হলো: বোয়িং, এলন মাস্কের স্পেসএক্স, জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিন এবং রিচার্ড ব্র্যানসনের ভার্জিন গ্যালাক্টিক। প্রথম ফ্লাইট হবে খুব সম্ভবত মহাকাশের কিনারার কাছে- পৃথিবী থেকে ১০০ মাইলেরও বেশি ওপরে- যেখানে পর্যটকরা ওজনহীনতা অনুভব করবে এবং বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে দেখবে। যদি আপনিও মহাকাশে ঘুরে আসতে চান, তাহলে বিশাল পরিমাণে অর্থ ব্যয় করার প্রস্তুতি নিন: ভার্জিন গ্যালাক্টিক ২৫০,০০০ ডলারে টিকেট বিক্রি করছে, ইতোমধ্যে ৭০০ লোক নিবন্ধন করেছে।

* খুব শিগগির মহাকাশ থেকে কল করা যাবে
এ বছরের মধ্যে মহাকাশ থেকে সেল ফোন কল করা সম্ভব হতে পারে। একটি জার্মান কোম্পানি নকিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ ২০১৯ সালের মধ্যে চাঁদে প্রথম ৪জি নেটওয়ার্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে। এ সিস্টেমটির মাধ্যমে মহাকাশচারীরা পৃথিবীতে ভিডিও পাঠাতে পারবে। অন্য কোম্পানিগুলো স্যাটেলাইট কনস্টিলেশনের পরিকল্পনা করছে, যা দিয়ে পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য ইন্টারনেট সহজলভ্য করা যেতে পারে।

* মহাকাশে অবস্থানে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়
মাইক্রোগ্রাভিটি বা খুব দুর্বল অভিকর্ষের ক্ষেত্রে হাড় ও মাংসপেশির ঘনত্ব কমে যায় এবং শরীরে রক্ত ভিন্নভাবে পুনর্বন্টন হয়, যা হার্টের ওপর চাপ ফেলতে পারে। আপনি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রেডিয়েশনের সংস্পর্শেও আসবেন। নাসা হিসেব করেছে যে, একজন মহাকাশচারী ন্যূনতম ১৫০টি বুকের এক্স রে সমপরিমাণ রেডিয়েশনের সংস্পর্শে আসে।

* মহাকাশে অবস্থানে চোখের সমস্যা সৃষ্টি হয়
আরেকটি শারীরিক চ্যালেঞ্জ: অর্ধেকেরও বেশি আমেরিকান মহাকাশচারী দৃষ্টি সমস্যায় ভুগেছে, বিশেষ করে বেশি দূরত্বের স্পেস স্টেশন ফ্লাইটের ক্ষেত্রে। নাসার গবেষকদের মতে, এ সমস্যাটির সঙ্গে শরীরে তরল পরিবর্তনের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে, কারণ এ পরিবর্তন চোখের স্নায়ুর ওপর চাপ ফেলতে পারে। এ চাপ আইবলের আকৃতিকে স্থায়ীভাবে চ্যাপ্টা করে দিতে পারে।

* মহাকাশে অবস্থান ত্বকের জন্য সহায়ক
মহাকাশে এক মাস থাকলে আপনার পায়ের ত্বকের শক্তভাব চলে গিয়ে শিশুর মতো নরম হয়ে যাবে। মহাকাশে ভ্রমণ কি তারুণ্যের মিনি ফাউন্টেন হতে পারে? যখন গবেষকরা আমেরিকান মহাকাশচারী স্কট জোসেফ কেলির ডিএনএ পর্যবেক্ষণ করেন, তারা দেখতে পান যে ক্রোমোজোমের প্রান্তগুলো ছিল তুলনামূলক লম্বা (উল্লেখ্য যে, মহকাশচারী কেলি ৩৪০ দিন মহাকাশে ছিলেন)। এটা ছিল বিস্ময়কর, কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রান্তগুলো খাটো হতে থাকে। এ বিষয়ে অবশ্যই আরো গবেষণা প্রয়োজন, কিন্তু কেলির এ ঘটনাটি আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছে যে মহাকাশে অবস্থান অ্যাজিং প্রসেসকে রিভার্স করতে পারে, অর্থাৎ বুড়িয়ে যাওয়া থেকে তারুণ্যে ফিরে আসা সম্ভব হতে পারে, বলেন কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক সুসান বেইলি- তিনি এ গবেষণাটি পরিচালনা করেছিলেন।

* মহাকাশে অবস্থানে উচ্চতা বাড়তে পারে
মহাকাশচারী কেলির মেরুদণ্ডে অভিকর্ষীয় প্রভাব ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে তার শরীর দুই ইঞ্চি প্রসারিত হয়েছিল, কেলির মহাকাশে অভিযান বিষয়ক বই ‘এন্ডিউরেন্স: মাই ইয়ার ইন স্পেস, এ লাইফটাইম অব ডিসকভারি’তে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু পৃথিবীতে ফিরে আসলে দুর্ভাগ্যজনকভাবে অবিলম্বে শরীর সংকুচিত হয়ে আসল উচ্চতায় ফিরে আসে।

* মহাকাশীয় হোটেল তৈরি করা হচ্ছে
যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ওরিয়ন স্প্যান গতবছর থেকে একটি বিলাসবহুল মহাকাশীয় হোটেল তৈরি করছে, যা ২০২২ সালে উদ্বোধন হতে পারে। মাত্র ৯.৫ মিলিয়ন ডলারে আপনি হোটেলটিতে ১২ দিন কাটাতে পারবেন এবং সেখানে যাওয়ার পূর্বে আপনাকে তিন মাস প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থাও একটি মহাকাশীয় হোটেল মডিউলের ঘোষণা দিয়েছে, যা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে সংযুক্ত হবে এবং ২০২১ সালে ডেলিভার হবে।

* মহাকাশের জন্য ভারী ড্রেস-কোড রয়েছে
নাসার একটি স্পেস সুটের ওজন পৃথিবীতে প্রায় ২৮০ পাউন্ড বা ১২৭ কেজি, কিন্তু মাইক্রোগ্রাভিটিতে কিছুই অনুভূত হয় না!

* মহাকাশচারীরা আসল আইসক্রিম খায়
মহাকাশচারীদের জন্য ২০০ এরও বেশি খাবার ও পানীয়ের অপশন রয়েছে, কিন্তু ‘অ্যাস্ট্রনট আইসক্রিম’ (পানিশূন্য শুষ্ক আইসক্রিম) একটি মহাকাশীয় মিথ ছাড়া আর কিছুই নয়। মহাকাশচারীরা আসল আইসক্রিমই খায়। সেখানে একটি খাবার সুপারিশকৃত নয়: পাউরুটি। ১৯৬৫ সালে নাসার দুইজন মহাকাশচারীর মধ্যে একজন মহাকাশে খাওয়ার জন্য সঙ্গে করে কর্নড বীফ স্যান্ডুইচ নিয়েছিল, কিন্তু তিনি খাবারটি খেতে গিয়ে বিস্মিত হলেন- খাবারটি খুব ছোট ছোট অংশে ভেঙে ভাসতে শুরু করে, যা ফ্লাইটের যন্ত্রপাতির সঙ্গে লেগে গিয়ে বিপর্যয়ের সম্ভাবনা বাড়িয়েছিল।

* মহাকাশচারীরা ঘাম ও মূত্র পান করে
প্রকৃতপক্ষে, মহাকাশচারীরা যা পান করে তা হলো তাদের নিজেদের পরিশোধিত ঘাম ও মূত্র! গত এক দশকে স্পেস স্টেশনের ক্রুদের মূত্র থেকে ২২,৫০০ পাউন্ড পানি রিসাইকেল করা হয়েছে।

* উল্কা সম্ভবত মহাকাশীয় বর্জ্য
রাতের আকাশে উল্কা দেখে হয়তো আপনি ভাবেন যে কোনো তারা খসে পড়ছে। কিন্তু এগুলো আসলে কোনো তারাই নয়, এগুলো হতে পারে মহাকাশের বর্জ্য। মহাকাশে উৎপন্ন এসব বর্জ্য হিমায়িত-শুষ্ক এবং তারা মহাকাশ থেকে খসে পড়ে। যখন এরা পৃথিবীর কাছে আসে, বায়ুমণ্ডলে জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায়।